#কলকাতা : রামকমল মুখোপাধ্যায়। সাংবাদিকতা দিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর ছবি বানানোয় মন দিলেন তিনি। 'কেকওয়াক' ও 'সিজন গ্রিটিংস', একটু অন্য স্বাদের, ভিন্ন চিন্তা ভাবনার গল্প বলেন পরিচালক। কাজের সূত্রে তিনি প্রবাসী। তবে বড় হয়ে ওঠা কলকাতাতেই। ভিন ভাষায় ছবি বানানোর পর ইচ্ছে ছিল নিজের মাতৃভাষা, বাংলায় গল্প বলার। কিন্তু বাংলা ভাষায় গল্প বলতে হলে গল্পটা হতে হবে একেবারে খাঁটি। গল্পের বুননে যেন থাকে বাংলার সহজাত চরিত্র। সেখান থেকেই ভাবনার শুরু।
রামকমল উত্তর কলকাতায় বড় হয়েছেন। সেখানকার অনেক নস্টালজিয়া রয়েছে তাঁর মনে। সেখান থেকেই 'রিকশাওয়ালা'-র জন্ম। সম্প্রতি একটি স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে 'রিক্সাওয়ালা'। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত ছবি।
এই ছবির অনুপ্রেরণা রামকমল এর ছোট বেলা। তার কথায়, 'হাতে টানা রিকশা খুব কাছ থেকে দেখেছি আমি। স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে ফেরা, মায়ের সঙ্গে আশপাশে যাওয়া, হাতে টানা রিকশাতেই বেশি যাতায়াত করতাম। ওঁদের জীবনযাপন খুব কাছ থেকে দেখেছি। যাতায়াতের সুবিধার জন্য একজন রিকশাওয়ালাকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দেশে যেতেন। ফিরে এসে দেশের গল্প বলতেন। ছাতুর শরবত খেতেন, ছাতু মাখা খেতেন। দুপুরবেলা গাছ তলায় বসে রুটি তরকারি খেতেন। এসব কখনোই ভুলতে পারিনি। বাংলা ছবি করার কথা যখন ভাবলাম তখন মনে হলো ওঁদের গল্প এখন পর্যন্ত সে ভাবে ফুটে উঠেনি। এঁরা কলকাতাতে থাকেন। কিন্তু বাঙালি নয়। তাই হয়তো কোন গল্পে এঁরা সেভাবে জায়গা পাননি। সেই ভাবনা থেকেই 'রিক্সাওয়ালা'-র সৃষ্টি।'
এই ছবির কাস্টিং মূলত অডিশন করেই হয়েছে। কিন্তু রামকমল নাম ভূমিকায় অভিনয় করার মতো যোগ্য অভিনেতা কিছুতেই পাচ্ছিলেন না। কলকাতায় যাঁদের পাচ্ছিলেন, তাঁরা মূলত মডেল। চেহারার দিক থেকে মিলে গেলেও অভিনয় পারছিলেন না। অন্যদিকে অভিনয় পারছেন যাঁরা, তাঁদের চেহারা মিলছে না। একেবারে আশায় ছেড়ে বসে ছিলেন পরিচালক। শেষমেষ একটি পার্টিতে অবিনাশকে চোখে পড়ে রামকমলের। তাঁকে দেখে পরিচালকের মনে হয় 'রিক্সাওয়ালা'-র চরিত্রটা এই ছেলেটিকে মানাবে ভালো।
কিন্তু মুম্বইয়ের অভিনেতারা বাংলা ছবিতে তেমন একটা কাজ করতে চান না। সেই জায়গায় অবিনাশ যথেষ্ট কৌতুহল দেখান। কলকাতায় এসে ওয়ার্কশপ করেন। খালি পায়ে রিক্সা টানেন। তাই এই ছবির অনেকটা কৃতিত্ব অবিনাশকেই দিতে চান পরিচালক।
একজন রিক্সাওয়ালার জীবন তার জীবনে টানাপোড়েন এসমস্ত তো রয়েছে এই ছবিতে। রামকমল বললেন, 'আমি এমন একটা গল্প বলতে চেয়েছিলাম, যা মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে। যা আপনার আমার মতই মানুষের কথা বলবে। 'রিক্সাওয়ালা' মানে মনোজের জীবনের তিনটি দিক দেখানো হয়েছে। তার প্রেমিকার সঙ্গে সমীকরণ। বৌদির সঙ্গে সমীকরণ ও তার পরিবার, জীবনের ওঠানামা। রিক্সাওয়ালার পাশাপাশি তার প্রেমিকা, বৌদি জীবনের জটিলতাগুলো আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।'
"মূলত আমাকে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত করেছে, সেটা হলো, এই রিকশাওয়ালারা কলকাতাতে থাকেন কিন্তু এঁদের অস্তিত্ব সেভাবে নেই। এই মানুষগুলোর জীবনযাপন নিয়ে আমরা কতটুকু জানি। এই উপেক্ষাটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।"
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে রিক্সাওয়ালা। কিন্তু পুরস্কার নয়, আসলে ছবি বানানোর নেশাতেই কাজ করেন রামকমল। 'ভালো ছবি' বানানোর স্বপ্ন দেখেন। 'রিক্সাওয়ালা'-র শ্যুটিং সমস্ত রিয়েল লোকেশন থেকেই মূলত করা হয়েছে। যদিও তার জন্য বেশ বেগ পেতে হয়েছে গোটা টিমকে। সকলে মিলে, কষ্টের মধ্যেও আনন্দ করে যে ছবিটা বানানো গিয়েছে তাতেই খুশি পরিচালক।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।