Howrah News: এ যেন ভয়ঙ্কর সুন্দর! মেক্সিকোর কচ্ছপের সন্ধান বাংলায়
- Published by:kaustav bhowmick
Last Updated:
এই কচ্ছপের আসল নিবাস মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মিসিপ্পি নদীতে। সেই তার হদিস এই বাংলায় মেলায় প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বেশ অবাক হয়ে গিয়েছেন।
হাওড়া: এ যেন ভয়ঙ্কর সুন্দর! এমন নামে ডাকা যেতেই পারে মেক্সিকোর এই কচ্ছপকে। উজ্জল রঙের কারণে একে দেখতে যেমন সুন্দর লাগে তেমনই এর সর্বগ্রাসী ক্ষুধা অতি ভয়ঙ্কর। তাই এই কচ্ছপকে চলতি ভাষায় রাক্ষুসে কচ্ছপ নামেও ডাকা হয়। আশ্চর্য বিষয় হল মেক্সিকোর এই 'জায়ান্ট টরটয়েস’-র সন্ধান পাওয়া গেল হাওড়ার শ্যামপুরে। যা দেখে রীতিমত বিস্মিত বিশেষজ্ঞরা।
হাওড়ার শ্যামপুরের দক্ষিণ মালঞ্চ বেড়িয়ায় যে জায়ান্ট টরটয়েস পাওয়া গিয়েছে তার গায়ে হরেক রঙের বাহার। জ্বলজ্বলে সোনালি রঙে মনোমুগ্ধকর এই সরীসৃপ। পোষ্য হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় এই কচ্ছপ। এদের আসল নিবাস মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মিসিপ্পি নদীতে। সেই তার হদিস এই বাংলায় মেলায় প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বেশ অবাক হয়ে গিয়েছেন।
এই বিদেশি কচ্ছপের কথা জানতে পেরেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ৫৮ গেট রেঞ্জের বনকর্মীরা। এই কচ্ছপ যে এলাকায় থাকে সেখানে মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণী বাঁচতে পারে না। উদ্ধার হওয়া কচ্ছপটির বয়স এক বছর বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তবে শ্যামপুরের জলাশয়ে এই রাক্ষুসে কচ্ছপ কীভাবে এল তা বুঝে উঠতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতির দিকটিও ভাবাচ্ছে তাঁদের।
advertisement
advertisement
কেন ক্ষতিকারক এই রাক্ষুসে কচ্ছপ? পরিবেশবিদ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে মোট যে সাতটি প্রজাতির কচ্ছপ আছে তার মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিকর এটি। এই জায়ান্ট টরটয়েস বা রাক্ষুসে কচ্ছপ বিশ্বের বহু জায়গায় রেড ইয়ারড স্লাইডার (Red Eared Slider) নামে পরিচিত। এই কচ্ছপটির বিজ্ঞানসম্মত নাম ট্রেকিমিস স্ক্রিপ্টা এলিগেন্স (Trachemys scripta elegans)। এই প্রজাতির কচ্ছপের কানের পাশে উজ্জ্বল লাল চক্রাকার বা আয়তাকার দাগের জন্য এদের ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’ বলা হয়। শিশু কচ্ছপগুলি রঙবেরঙের হয়ে থাকে বলে পোষ্য হিসেবে এদের খ্যাতি আছে। আমেরিকা বা মেক্সিকোতে পোষ্য হিসেবে অনেকেই এই প্রজাতির কচ্ছপ কিনে বাড়িতে রাখেন।
advertisement
প্রাণী বিশারদদের মতে, এই প্রজাতির কচ্ছপের মিডল জুরাসিক পিরিয়ডে উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। টেস্টুডিয়ানস থেকে এরা বিবর্তিত হয়ে আজকের রেড ইয়ারড স্লাইডারে অভিযোজিত হয়েছে। সাধারণত, পুকুর, ছোট জলাশয় এবং স্বাদু জলেও দেখা মেলে এই কচ্ছপ প্রজাতিটির। খুব দ্রুত যেকোনও পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এরা। এদের শারীরিক বৃদ্ধিও খুব দ্রুত হয়। এদের একটি উপজাতি হল স্ন্যাপিং টার্টল। ই প্রজাতির কচ্ছপগুলি ওজনে প্রায় ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
advertisement
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিউন ফর কনজারভেশন অব নেচার বা আইইউসিএন-র (IUCN) বিশ্বের ১০০টি ‘অনিষ্টকারী বহিরাগত প্রজাতি’র তালিকায় রয়েছে রেড ইয়ারড স্লাইডার। এই রাক্ষুসে কচ্ছপ দ্রুত হারে ছোট মাছ, পোকামাকড় এবং কাদা থেকে কেঁচো, শামুক ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। ফলে নষ্ট হয় অনেক জৈব পদার্থ। ক্ষতি হয় বাস্তুতন্ত্রের, যা মূলত আঘাত হানতে পারে জীব বৈচিত্র্যেও। পাশাপাশি, এই কচ্ছপ সরীসৃপ প্রাণীদের রোগ সৃষ্টিকারী। ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলার অন্যতম বাহক। এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়া কেবল জলজ প্রাণীদের ক্ষতি করে না, ক্ষতি করে মানুষেরও। সাধারণত ভালভাবে রান্না না করা মাংস, কাঁচা ডিম, দুধ এবং অন্য দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া যায় এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়াটি। এটি দেহে প্রবেশ করার ১২ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত করে। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি এবং জ্বর। এই ব্যাকটেরিয়ার দীর্ঘসূত্র প্রভাবে মানব শরীরে বিপাকীয় কোষের ক্ষতি হয়, যা আদতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
advertisement
বঙ্গে প্রথম রেড ইয়ারড স্লাইডারের দেখা মেলে ২০১৫ সালে রাজারহাটের একটি জলাশয়ে। পরে ২০২০ সালে রবীন্দ্র সরোবরে এই ‘রাক্ষুসে কচ্ছপের’ দেখা মেলে। ভারতে সর্বপ্রথম কেরলের কলথোড খালে দেখা মেলে এই কচ্ছপের। কেরল ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে ও পর্যবেক্ষণে রাখে। পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়ে তৃতীয়বার দেখা মিলল রেড ইয়ারড স্লাইডার বা রাক্ষুসে কচ্ছপের।
advertisement
রাকেশ মাইতি
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
April 24, 2023 9:43 PM IST