Independence Day : অগণিত শিশুর চিৎকার, মহিলার আর্তনাদ ও পুরুষের রক্তে লেখা চা শিল্পের ইতিহাস
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- news18 bangla
Last Updated:
ভারতে চা শিল্পের ইতিহাসের (Tea industry) সঙ্গে জড়িত রয়েছে যন্ত্রণা, হাজার হাজার শিশুর চিৎকার, মহিলার আর্তনাদ ও পুরুষের রক্ত। এসব মিলিত হয়েই 'টি ইন্ডাস্ট্রি' গড়ে উঠেছে, যা এখন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
শিলিগুড়ি : ভারতে চা শিল্পের ইতিহাসের (Tea industry) সঙ্গে জড়িত রয়েছে যন্ত্রণা, হাজার হাজার শিশুর চিৎকার, মহিলার আর্তনাদ ও পুরুষের রক্ত। এসব মিলিত হয়েই 'টি ইন্ডাস্ট্রি' গড়ে উঠেছে, যা এখন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিকারিকরা ভারতবর্ষে চা গাছ রোপণ করা শুরু করে। ভারতে প্রথম এই কাজ হয় অসমে। দ্বিতীয় তথা উত্তরবঙ্গে প্রথম এই কাজ শুরু হয় দার্জিলিংয়ে। পাহাড়ের গায়ে চা চাষ করা শুরু করেন ব্রিটিশরা। তাঁদের আদবকায়দায় বানানো হয় প্রচুর বাংলো, যা এখনও 'হেরিটেজ বিল্ডিং' হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে মনোরম পাহাড়ে।
এই হেরিটেজ বাংলোগুলোতেই মূলত নির্যাতিতা হতেন কয়েকশো মহিলা শ্রমিক। আদিবাসী শ্রমিক মহল্লার জীবন তখন বিদেশিদের হাতেই। তাদের বেঁচে থাকা, খাদ্য সংস্থান, সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা। মূলত ব্যবসার জন্য আনা চা গাছ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বৈষম্যের ছায়া। মহিলা শ্রমিকরা পাতা তোলার কাজ করতেন। পান থেকে চুন খসলেই চলত অমানবিক অত্যাচার। শুরু হত পাশবিক আচরণ। এছাড়াও সন্ধ্যা নামতেই শুরু হত নেশার আসর। নেশার ঘোরে ব্রিটিশদের অশালীন আচরণ অস্বাভাবিক ছিল না শ্রমিকদের কাছে। এমন করেই প্রতিনিয়ত চলত শোষণ। তবে একসময়ের পর এ সব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার বদলে বেঘোরে প্রাণ হারায় প্রচুর মানুষ। ধ্বংস হয়ে যায় কয়েক হাজার আদিবাসী পরিবার।
advertisement
দার্জিলিংয়ে স্বাধীনতার আগে থেকে চলছে চা চাষ। সেখানকার পাহাড়িয়া থেকে শুরু করে ব্রিটিশরা, সবাই চা গাছকে গুরুত্ব দিতেন। তাঁদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল চা ও চা চাষ। তবে এ সবের মধ্যেও চলত শ্রমিক বলয়ে নির্যাতন, বিভিন্ন অমানবিক অত্যাচার। এর পর ধীরে ধীরে ব্রিটিশদের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখানকার স্থানীয়রা আদবকায়দা রপ্ত করে ফেলেন। শুরু করেন নিজেদের চা বাগান। নিজেদের ব্যবসা। এই ব্যবসা শুরু হতেই দার্জিলিং চায়ের গুণগতমান ও এর সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে। অনেক এমন চা বাগান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যেখানকার শ্রমিকদের বাড়িঘর উজাড় করে দিয়ে স্থাপন করা হয় বড় বড় অট্টালিকা। ঘরহারা হয়ে যায় বহু শ্রমিক পরিবার। শুধুমাত্র পাহাড় না, সমতলেও এমন বহু বাগান রয়েছে যেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হযেছিল সেখানকার আদিবাসীদের। কাজ হারিয়ে আত্মহত্যা করতেও বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। প্রচুর অনাথ শিশু নিজেদের আশ্রয় হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছে।
advertisement
advertisement
তবে এসবের পরেও দার্জিলিং তথা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের চায়ের গুণগতমান বিশ্ববিখ্যাত। পাহাড়ের গা ঘেঁষে, শিলিগুড়ি শহরের একটু বাইরেই অবস্থিত সুকনা চা বাগান। সেই চা বাগানও ১৯১৩ সাল থেকে বানিয়ে যাচ্ছে 'সিটিসি' চা। সেখানকার ম্যানেজার তথা বহু বছর ধরে চা শিল্পে যুক্ত ভাস্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন এক সময় ছিল যখন যখন দার্জিলিং চায়ের বিক্রির দাম এতটাই বেশি ছিল যে সেটা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তুলে ধরা হয়েছিল। সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করা হয়েছিল এই চা। চা নিলামের সময় লক্ষাধিক টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল দাম।’’
advertisement
ভাস্করবাবু সুগন্ধি চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন, ‘‘চা এমনই এক অ্যারোম্যাটিক পানীয়, যা পান করলেই পরম শান্তি। সব চিন্তা, দুশ্চিন্তা, খারাপ ভাবনা বা মাথা ব্যথা এক নিমেষে দূর করার ক্ষমতা রাখে চা।’’ নিউজ 18-কে তিনি সুকনা চা বাগান ঘুরিয়ে দেখান। সেখানকার বাংলো থেকে শুরু করে চাষের প্রক্রিয়া সবই চলে সেই বিদেশি আদবকায়দায়। অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা চা বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘ মকাইবাড়ি ও ক্যাসেলটন চা বাগানের নামও চায়ের ইতিহাসে অক্ষত থাকবে। মোটকথা, দার্জিলিং বা সেখানকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের চা বাগানগুলি স্বাধীনতার আগে থেকেই বিশ্বের দরবারে বিখ্যাত।’’
advertisement
দার্জিলিং চা অর্থাৎ 'অর্থোডক্স' চায়ের স্বাদ, গন্ধ, নির্যাসের জুড়ি মেলা ভার এই বিশ্বে। এই কারণেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন পাহাড়ের কোলে, শুধুমাত্র এই চায়ের গন্ধের পিছু নিয়ে। স্বাধীন ভারতের চায়ের ইতিহাসে অসম যদি অপূরণীয় জায়গা নেয়, তবে দার্জিলিং তথা পাহাড়ি অঞ্চলে শ্রমিকদের বলিদান ও তাদের ভূমিকাও লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।
advertisement
প্রতিবেদন : ভাস্কর চক্রবর্তী
Location :
First Published :
August 15, 2021 12:01 AM IST