Independence Day 2021: স্বাধীনতার ৭৫, ধ্বংসের মুখোমুখি ঐতিহাসিক লর্ড ক্যানিং হাউজ, টনক নড়বে কবে!
- Published by:Arka Deb
- news18 bangla
Last Updated:
Independence Day 2021: বর্তমানে ঐতিহাসিক সৌধটি দেখলে চোখে জল আসবে যে কোনও ইতিহাস সচেতন মানুষের।
#রুদ্র নারায়ন রায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কালের গর্ভে তলিয়ে যেতে চলেছে প্রাক স্বাধীনতা পর্বের বহু ইতিহাসের সাক্ষী ক্যানিং হাউজ। সুন্দরবনের ঐতিহাসিক হেরিটেজ লর্ড ক্যানিংয়ের প্রাসাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবনের ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের মাতলা দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজারলাট গ্রামের, মাতলা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক লর্ড ক্যানিংয়ের বাংলো। বর্তমানে ঐতিহাসিক সৌধটি দেখলে চোখে জল আসবে যে কোনও ইতিহাস সচেতন মানুষের।
১৮১২ সালে ১৪ ডিসেম্বর লর্ড ক্যানিংয়ের জন্ম হয়।লর্ড ডালহৌসি কার্যত্যাগ করলে ১৮৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার বন্ধু লর্ড ক্যানিং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষের শাসনভার প্রাপ্ত হয়ে আসেন। তিনিই হন ভারতের গভর্ণর জেনারেল ও ভাইসরয়। এরপর ক্যানিংয়ের ইতিহাস শুধুই উত্তরণের। লর্ড ক্যানিংয়ের কর্মদক্ষ শাসনে মাতলাও এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। ১৮৫৩ সালে ৫ জুলাই লর্ড ডালহৌসি মাতলা ৫৪ নং প্লটের ২ হাজার ৫০০ বিঘা জমি ১১ হাজার টাকায় এবং পরে আরও ২ হাজার বিঘা জমি কেনেন মাতলা বন্দর, রেলওয়ে পথ ও শহরের জন্য। এর মধ্যে ৬৫০ একর জমি মাতলা টাউনের জন্য নির্ধারিত হয়।
advertisement
আর সেই সময় গড়ে এই প্রাসাদটি। ১৮৬২ সালে মার্চ মাসে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন লর্ড ক্যানিং। আর সেই বছরই ১৭ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। ফলে ১৮৬৩ সালে মাতলা ক্যানিং এর নামে পরিচিতি লাভ পায়। এদিকে ১৮৬২ থেকে ১৮৬৪ পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক বাংলোতেই চলে পোর্ট ক্যানিং এর কাজ কর্ম। এমনকি ১৮৬২ সালে ক্যানিং মিউনিসিপ্যালিটির কাজ কর্মও এখান থেকেই চলত। তবে এখন সবই অতীত।
advertisement
advertisement
বিগত বাম সরকারের অবহেলায় হেরিটেজ হিসেবেও ঘোষিত হয়নি সৌধটি। তবে ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনে হলে, ক্ষমতায় আসে মা মাটি মানুষের সরকার। আর বর্তমান সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরকারি হেরিটেজ ঘোষিত হয় ঐতিহাসিক লর্ড ক্যানিংয়ের আমলের প্রাসাদটি। তবে এখনও পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কোনও কাজই শুরু হয়নি।
ফলে স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে রাজনৈতিকদলগুলি বিভিন্ন দফতরে দাবি জানাতে শুরু করেছেন, অবিলম্বে এই ঐতিহাসিক সৌধটির সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। সুন্দরবনের বহু পর্যটক সারা বছর ধরেই এই ঐতিহাসিক সৌধটি পরিদর্শন করতে আসেন। স্বাধীনতার সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা সৌধটির মধ্যে আজও বহু স্মৃতি লুকিয়ে রয়েছে। লেডি ক্যানিং থেকে শুরু করে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি সমাগম ঘটেছে এই লর্ড ক্যানিং এর বাংলোয় ।
advertisement

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সেই সময় এই স্থানে গড়ে উঠেছিল চিড়িয়াখানা, বন্দর, ক্যানিং মিউনিসিপ্যালিটি, ভারতের তৃতীয় রেল পথ, মাতলা টাউন, ক্যানিং টাউন ডাকঘর, খাসমহল সহ এশিয়ার বৃহত্তম ক্যানিং রাইস মিল। কালক্রমে ধ্বংস হয়ে গিয়েএ নীলকুঠি সৌধটি। বর্তমানে ঐতিহাসিক ক্যানিং হাউসটিও ধ্বংসের পথে।
advertisement
স্থানীয় বিশিষ্ট লেখক পূর্ণেন্দু ঘোষ জানান, "আমাদের ছোটবেলায় আমরা এই ক্যানিং হাউজের চারিদিকে পাঁচিল দেখতে পেতাম যা আজ ধ্বংস হয়ে গিছে। অবিলম্বে সংরক্ষণ না করলে এই ইতিহাসও পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।"
ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্রর বিধায়ক পরেশ রাম দাস জানান, "রাজ্য সরকার এই সৌধটি এবং জমি অধিগ্রহণ করেছে। খুব শীঘ্রই সৌধটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে এবং সৌধটির চারিদিকে পাকা পাঁচিল করা হবে।"
advertisement
সুন্দরবনের ক্যানিং মহকুমায় বসবাসকারী প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষের, ইতিহাসে স্বাধীনতার সাক্ষী লর্ড ক্যানিং এর বাংলো। আবার, এই হেরিটেজ সৌধটিই ঘিরে রয়েছে বহু মানুষের কর্ম সংস্থান। ক্যানিং-এর এই ইতিহাস সুদুরপ্রসারী। তাই গর্বের এই সৌধটির স্থাপত্য পুরোপুরি শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই সংস্কার করা হোক চাইছেন ইতিহাসবিদরা। কালের অতলে হারিয়ে যাওয়ার আগেই ক্যানিংয়ের এই প্রাসাদকে বাঁচাতে মরিয়া স্থানীয়রাও। গোটা বিষয়টা দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রশাসনের সদিচ্ছার উপরেই।
Location :
First Published :
August 12, 2021 12:15 PM IST