ন মে অস্তি বিত্তং ন ধনং
ন চে অন্যৎ শ্রাদ্ধ উপযোগ্যং
স্বপিতৃণ নতো অস্মি
শ্রীচরণেষু বাবা,
আমি তোমাকে চিঠি লিখছি, না তুমি আমাকে লিখছো, এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। কারণ তুমিই আমাকে শিখিয়েছিলে ‘পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেব অবশিষ্যতে’। এটাই জাদুবিদ্যার মূল মন্ত্র। অফুরন্ত ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া। তুমিই আমায় বুঝিয়েছিলে একটা জ্বলন্ত মশাল থেকে অন্য একটা মশাল জ্বালালেও ওই আগের মশালের আগুনের কোনও ক্ষতি হয় না। বরঞ্চ নতুন একটা মশাল তৈরি হয়। আর সেইজন্যই নাকি তুমি আমার নাম রেখেছিলে প্রদীপ। আমি শুনে কেঁদে ফেলেছিলাম। বলেছিলাম, ‘...আমার যেটুকু সাধ্য, করিব তা আমি।’ আমি সামান্য মাটির একটা প্রদীপ। যে কেউ ফুঁ দিলেই নিভে যাবো। এত বড় গুরুদায়িত্ব, আমি কি সামলাতে পারব?’ তুমি হেসেছিলে। বলেছিল, ‘দিপাবলী জ্বালাতে না পারলেও, দাবানল তো জ্বালাতে পারবে। দাবানল জ্বালিও।’ আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম, কিন্তু কোন সময়ে? ব্যর্থ প্রেমের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলার লগ্নটা কখন? কীভাবে বুঝব যে সময় হয়েছে?
তুমি বলেছিল, আমি বলে দেব সেই সময়!আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম, কারণ বাবা বলেছেন, বাবা বলে দেবেন, সময় কাল।
কিছু না বলেই তুমি চলে গেলে। আমি কলকাতায়, তুমি জাপানে। আমি পৌঁছে দেখি তোমার দেহটা ওরা একটা কফিনের মধ্যে রেখে দিয়েছে। তুমি নাকি মারা গিয়েছ।
মিথ্যে কথা।
আত্মা কখনও মারা যায় না। জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগের মতো দেহটাকে ত্যাগ করে। নতুন দেহ নিয়ে ফিরে আসে। কিন্তু তোমার শরীরটা তো জীর্ন বস্ত্রের মতো অত ময়লা ছিল না। মাত্র সাতান্ন–আটান্ন বছর ব্যবহার করেছ। বুঝলাম, তুমি তারুণ্য বা যৌবনের সন্ধানে আছ। খুঁজছো নতুন একটা শক্ত সমর্থ দেহ।
আমি আমার শরীর নিয়ে প্রস্তুত আছি বাবা। আমার সঙ্গে আমার আত্মাও প্রস্তুত আছে। সেটা তোমারই দেওয়া। নতুন মশালের আগুন। আমার খিদে প্রচণ্ড। ‘আরও প্রাণ চাই, আরও আরও’, আমার আরও প্রাণ চাই।
তোমরাও তখন একটা দেহ চাই।
এটাই তো সুসময়। আমি তোমাকে আমার দেহটা ব্যবহার করতে বললাম। তুমি হেসে বললে, ‘খুব ঠাসাঠাসি হবে।’
আমি বললাম, দুটো আগুন মিলিয়ে কি একটা প্রদীপ হয় না? তুমি হাসলে। আমিও দাউদাউ করে জ্বলে উঠলাম। আমাদের কথা ভেবেই বোধহয় কবিগুরু আগাম লিখে গিয়েছেন, ‘তুমি আজি মোর মাঝে আমি হয়ে আছ। আমারি জীবনে তুমি বাঁচো ওগো বাঁচো।’
চিঠি তো লিখলাম, কিন্তু পোস্ট করবো কোথায়? সবাই তো লকডাউনে বন্দি। ডাকঘর তো অনেক দূর।
আরে বোকা, আমার থেকে আমি কি দূরে থাকতে পারি। কোনও ফাদার্স ডে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। চিঠি পড়া হয়ে গেলে যেমন লোকে ছিঁড়ে ফেলে, তেমন ছিঁড়ে ফেলা যাক। পড়া হয়ে গিয়েছে, ছেঁড়াও হয়ে গিয়েছে, সুতরাং চিঠি যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছে।
কিন্তু বাবা, সেই দাবানল জ্বালাবার সময়টা কী হয়েছ? ঘনঘন ভূমিকম্প হল, ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হলো, পঙ্গপাল এল, শিক্ষায় কুমন্ত্র এল, রক্ষক ভক্ষক হল, আমফান এসে মাথা ঘুরিয়ে দিলো, ব্রিজ ভেঙে পড়ল, খাবার জলে নর্দমার জল মিশে গেল, কোভিড ১৯ এল, এখনও কি সেই দাবানলের সময় আসেনি?
না। এখনও চিত্ত জাগেনি। তিনশো,পয়ষট্টি দিনে একটা দিন বাবার দিন। আর বাকি ৩৬৪ দিন কি বাবা বিহীন?
ওটা সাহেবদের হিসাব, আমাদের নয়। আমরা, মানে ভারতীয়রা, মানে পুরোনপন্থীরা নয়, মানে ইয়ে, আধুনিক হিন্দুরা.., থিম পুজো অবলম্বীরা, মানে ঐ সনাতন ধর্ম অবলম্বীরা...বাবা!
বাবা, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? বাবা– বাবা!
নিশ্চিন্তে ঘুমোও বাবা।
পরে আবার লিখব।
ইতি
প্রণতঃ প্রদীপ
কলকাতা২১/০৬/২০২০
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Fathers Day 2020