Buddhadeb Dasgupta : ঘাসের মাঝে লালপোকা থেকে ঝুমুরনাচ, রাঢ় বঙ্গে কাটানো শৈশব তাঁর ছবির অনুঘটক

Last Updated:

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবির সেই ভবঘুরেরা অমর ৷ দিবাস্বপ্ন হলেও তারা দিন পাল্টানোর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে ভালবাসে ৷ ‘চরাচর’-এর লখিন্দর একদিন নিজেই পাখি হয়ে আকাশে ডানা মেলে ৷

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর (Buddhadeb Dasgupta) কর্মজীবন শুরু হয়েছিল অধ্যাপনা দিয়ে ৷ কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই পুঁথিগত অর্থনীতির তত্ত্ব ও বাস্তবের ছবির আকাশপাতাল পার্থক্য তাঁর কাছে পীড়াজনক হয়ে উঠল ৷ তিনি বেছে নিলেন ছবি পরিচালনাকে ৷ তবে নতুন অধ্যায়ের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল ছাত্রজীবনেই ৷ কাকার সূত্রে সদস্য হয়েছিলেন ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির৷ সেখানেই পরিচয় হল চ্যাপলিন, বার্গম্যান, কুরোসাওয়া, ডি সিকা, রোসেল্লিনি, অ্যান্তোনিওনির সৃষ্টির সঙ্গে ৷ সেলুলয়েডের মাধ্যমে জীবনদর্শনই হয়ে উঠল তাঁর উপজীব্য৷
শিকড়ে ফিরে গেলে বুদ্ধদেবের জীবন শুরু রুক্ষ পুরুলিয়ার রাঙামাটিতে ৷ পুরুলিয়ার আনারায় তাঁর জন্ম ১৯৪৪ সালে ৷ নয় ভাইবোনে মধ্যে তৃতীয় সন্তান ৷ যাত্রাপথের চর্যাপদে জড়িয়ে ছিল রেলগাড়ি৷ বাবা ছিলেন ভারতীয় রেলওয়ের চিকিৎসক ৷ বাবার কর্মসূত্রে সারা দেশের বিভিন্ন স্টেশনের ধুলোখেলায় কেটেছে শৈশব ও কৈশোর ৷
হাওড়া দীনবন্ধু স্কুলের প্রাক্তনী বুদ্ধদেব অর্থনীতি নিয়ে উচ্চশিক্ষা করেন স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ তার পর অধ্যাপনা প্রথমে সিটি কলেজ, পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্যামসুন্দর কলেজে ৷
advertisement
advertisement
ক্যামেরা, লাইট, সাউন্ডের পর্ব শুরু হয়েছিল ১৯৬৮ সালে, দশ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘কন্টিনেন্ট অব লভ’ দিয়ে ৷ তার পর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘সময়ের কাছে’৷ পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি আরও ১০ বছর পর ৷ ১৯৭৮-এ মুক্তি পেল ‘দূরত্ব’ ৷ এর পর ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘অন্ধি গলি’, ‘ফেরা’, ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘তাহাদের কথা’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘উত্তরা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘আমি ইয়াসমিন আর আমার মধুমালা’, ‘কালপুরুষ’, ‘আনওয়ার কা আজব কিস্যা’—অজস্র অলঙ্কারে সাজিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রকে ৷ তাঁর তথ্যচিত্রের মধ্যে ভাস্বর হয়ে আছে ‘শরৎচন্দ্র’, ‘রিদম অব স্টিল’, ‘বিজ্ঞান ও তার আবিষ্কার’, ‘সেরামিক্স’ এবং ‘আরণ্যক’৷
advertisement
অসংখ্য পুরস্কারে বার বার ভূষিত হয়েছে তাঁর কাজ ৷ শ্রেষ্ঠ ছবি বিভাগে জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সম্মানিত হয়েছে ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ এবং ‘কালপুরুষ’ ৷ ‘উত্তরা’ ও ‘স্বপ্নের দিন’ পেয়েছে শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় পুরস্কার ৷ অন্যান্য বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে তাঁর ‘ফেরা’, ‘দূরত্ব’ এবং ‘তাহাদের কথা’৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ভূষিত হয়েছে ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘চরাচর’, ‘উত্তরা’, ‘নিম অন্নপূ্র্ণা’, ‘জানালা’ এবং ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ৷
advertisement
নাগরিক জীবনের বাইরে, বাঙালিয়ানার চেনাবৃত্ত পেরিয়ে তাঁর ছবিতে ধরা দিয়েছে লোকজ সংস্কৃতি ৷ রাঢ় বঙ্গে কাটানো শৈশব তাঁকে কোনওদিন ছেড়ে যায়নি ৷ ছোটবেলার কোলাজ ছবি ফিরে ফিরে এসেছে ‘বাঘ বাহাদুর’-এর লোকনৃত্য এবং ‘উত্তরা’-র ঝুমুরে ৷ ছোটবেলায় খড়্গপুর রেলস্টেশন লাগোয়া মাঠে ঘাসের মাঝে লালপোকাদের নিয়ে খেলা ছিল তাঁর সৃষ্টির অনুষঙ্গ ৷
advertisement
অতিমারিতে আটকে গিয়েছিল পরবর্তী পরিকল্পনা ৷ ইচ্ছে থাকলেও করা হয়ে ওঠেনি জীবনানন্দ দাশ এবং তাঁর নিজের কবিতা থেকে ছবি ৷ বিশ্বাস করতেন সিঙ্গলস্ক্রিন হলগুলির অপমৃত্যু আদতে বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে অশনিসঙ্কেত ৷ তবে পরিচালকদেরও একদিন থামতে হয় ৷ অবসর নিতে হয় ৷ এই ধারণা তাঁর মনে বলিষ্ঠ ছিল ৷
বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর কাছে তাঁর পরিচালক পরিচয়ের থেকেও আপন ছিল কবি সত্ত্বা ৷ কবিতার মৃত্যু নেই ৷ অমর তাঁর ছবির সেই ভবঘুরেরাও ৷ দিবাস্বপ্ন হলেও তারা দিন পাল্টানোর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে ভালবাসে ৷ ‘চরাচর’-এর লখিন্দর একদিন নিজেই পাখি হয়ে আকাশে ডানা মেলে ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Buddhadeb Dasgupta : ঘাসের মাঝে লালপোকা থেকে ঝুমুরনাচ, রাঢ় বঙ্গে কাটানো শৈশব তাঁর ছবির অনুঘটক
Next Article
advertisement
দুর্গাপুর স্টেশনে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে হবে না! ২৪ ঘণ্টা মিলবে পানীয় জল আর অফুরন্ত খাবার
দুর্গাপুর স্টেশনে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে হবে না! ২৪ ঘণ্টা মিলবে পানীয় জল আর অফুরন্ত খাবার
  • দুর্গাপুর স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা ভেন্ডিং মেশিনে স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় পাওয়া যাবে

  • UPI-দিয়ে সহজেই পেমেন্ট করা যাবে

  • দুর্গাপুর স্টেশন স্মার্ট, পরিষ্কার এবং যাত্রী-সহযোগী স্টেশন হয়ে উঠছে

VIEW MORE
advertisement
advertisement