Prevention For Omicron: ওমিক্রন আতঙ্ক গোটা দেশে, সংক্রমণ এড়াতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে? জেনে নিন এখনই
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
নতুন এই প্রজাতি আগের প্রজাতিগুলির তুলনায় ৫০০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে। ওমিক্রন (Omicron) রুখতে এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে।
#কলকাতা: করোনাভাইরাসের (Coronavirus) দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ আমরা সবাই দেখেছি। অনেকে সংক্রমিত হয়েছিল, বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আবার বহু মানুষ এই মারণ রোগ থেকে সেরেও উঠেছেন। তবে, করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন (Omicron) নিয়ে সারা বিশ্বের নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
বিশ্বের প্রায় ৩০টির বেশি দেশে এই প্রজাতিতে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ভারতেও কমপক্ষে ৩০ জনের শরীরে ওমিক্রন ধরা পড়েছে। যার ফলে দেশজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রজাতি সম্পর্কে এখনও সেই ভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে ইতিমধ্যেই এই প্রজাতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে তকমা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
এখন যে প্রশ্নটি রয়ে গিয়েছে তা হল আমাদের আরও দায়িত্বশীল এবং সতর্ক হওয়া উচিত কি না?এখনই সরকার এবং জনগণকে এই নতুন প্রজাতিকে আরও গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যাতে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যে ভুলগুলি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি না হয়।
advertisement
advertisement
সবচেয়ে খারাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত থাকতে হবে:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিং (Poonam Khetrapal Singh) বলেন, "ভারতে ওমিক্রন প্রজাতির সংক্রমণ অপ্রত্যাশিত ছিল না। সমস্ত দেশের উপর নজরদারি বাড়ানো, সতর্ক থাকা, দ্রুত সংক্রমণ সনাক্ত করা এবং ভাইরাসের আরও বিস্তার রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপর জোর দিতে হবে।
advertisement
অন্য প্রজাতির মতো ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও একই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের একই কোভিড বিধিও মেনে চলতে হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলা আবশ্যক।"
ওমিক্রন প্রজাতি কি করোনার অন্যান্য প্রজাতিগুলির চেয়ে বেশি মারাত্মক?
বর্তমানে, নতুন প্রজাতির একাধিক মিউটেশন (Mutations) রয়েছে, স্পাইক প্রোটিনেই তিরিশের বেশি মিউটেশন। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা শুধুমাত্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে নয়, টিকার (Vaccine) কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও। বর্তমানে উপলব্ধ কোভিড টিকাগুলি নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর প্রমাণিত নাও হতে পারে যতটা হওয়া উচিত। তবে, টিকা কার্যকর হবে কি না তা শুধুমাত্র সময়ই বলবে।
advertisement
নতুন প্রজাতি সম্পর্কে আরও তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে যে নতুন এই প্রজাতি আগের প্রজাতিগুলির তুলনায় ৫০০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে। তবে, ওমিক্রনে আক্রান্তদের সকলেরই এখনও পর্যন্ত হালকা উপসর্গ দেখা গিয়েছে।
অনেকেরই কোনও উপসর্গ নেই। বিজিএস গ্লেনিগেলস গ্লোবাল হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট বিশ্বনাথ বেল্লাডের (Vishwanath Bellad) মতে, "ভাইরাসগুলি বেঁচে থাকার জন্য পরিবর্তিত হতে পারে। এটি সমস্ত অণুজীবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই মিউটেশনগুলির কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন করতে হবে।"
advertisement
ডেল্টা প্রজাতির সঙ্গে ওমিক্রনের পার্থক্য: এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, "কোভিড-১৯ অতিমারীতে ক্ষতিকারক পরিবর্তনের ইঙ্গিত উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে। তাই বি.১.১.৫২৯9-কে (B.1.1.529 ) উদ্বেগের একটি প্রজাতি (Variant Of Concern) হিসাবে মনোনীত করেছে। যার নাম ওমিক্রন। যদি ওমিক্রন দ্বারা কোভিডের আরেকটি বড় ঢেউ ঘটে, তাহলে পরিণতি গুরুতর হতে পারে।"
ডেল্টা প্রজাতির (Delta Variant) কারণে ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছিল। তবে, নতুন এই প্রজাতিটির স্পাইক প্রোটিনে আরও মিউটেশন রয়েছে, স্পাইক প্রোটিনেই ৩০টি মিউটেশন ঘটেছে। করোনাভাইরাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই স্পাইক প্রোটিন। এর সাহায্যেই মানবকোষে প্রবেশ করে ভাইরাস। যা এটিকে কিছুটা বেশি সংক্রমণযোগ্য করে তোলে।
advertisement
আরও পড়ুন- বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকেই একদিন বাড়িতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, এটা কী ভাবে সম্ভব?
এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনা সামনে না আসলেও ওমিক্রন ডেল্টা প্রজাতির চেয়ে আরও গুরুতর কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
আরটি-পিসিআর (RT-PCR) টেস্টে কি ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়ে?
করোনাভাইরাসের সমস্ত প্রজাতির জন্য পরীক্ষা পদ্ধতি একই থাকে। বর্তমানে উপলব্ধ পরীক্ষাগুলি এখনও ভাইরাস সনাক্তকরণে কার্যকর।
advertisement
টিকা কি ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে অনাক্রম্যতা তৈরি করবে?
বর্তমানে ব্যবহৃত হওয়া টিকাগুলিকে আপডেট করার বা পছন্দসই ফলাফলের জন্য পরিবর্তন করতে হবে। যদিও কোনও কোভিড টিকা ১০০ শতাংশ অনাক্রম্যতা প্রদান করে না, তবে এটা আশা করা যায় যে বর্তমানে ব্যবহৃত হওয়া টিকাগুলি সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে কার্যকর হবে।
কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন কি ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হবে?
ভারত বর্তমানে একাধিক টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে মডার্নার একমাত্র mRNA টিকা এখনও দেশে উপলব্ধ নয়। এখনও পর্যন্ত, সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (Serum Institute of India) কোভিশিল্ড (Covishield), ভারত বায়োটেকের (Bharat Biotech) কোভ্যাক্সিন এবং রাশিয়ান স্পুটনিক ভি (Sputnik V) টিকা ভারতে দেওয়া হচ্ছে। এবং রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা উভয়ই অ্যাডেনোভাইরাল ভেক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনাক্রমতা তৈরি করে।
আরও পড়ুন- ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল কী? বিরোধীদের আপত্তি কোন কোন জায়গায়? পড়ুন
অন্য দিকে, কোভ্যাক্সিন (Covaxin) হোল-ভিরিয়ন ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভেরো সেল প্রাপ্ত প্ল্যাটফর্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। যেখানে নিষ্ক্রিয় ভাইরাসটি প্রতিলিপি তৈরি করতে না, তবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
যেহেতু নতুন ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনে অনেক মিউটেশন রয়েছে, যেগুলিকে টিকার অ্যান্টিবডি টার্গেট করে। তাই স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন হলে টিকার কার্যকারিতার কিছু পরিবর্তন হতে পারে।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের টিকা রয়েছে। কিছু ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করে। তাই, যদি সেখানে পরিবর্তন ঘটে, তাহলে টিকা কার্যকর নাও হতে পারে। সহজ কথায়, স্পাইক প্রোটিন, যা ভাইরাসটিকে হোস্ট কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে তা যদি পরিবর্তন হতে থাকে, তাহলে টিকার ফলে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলির পক্ষে তা সনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
কোভিড-উপযুক্ত আচরণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ:
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। মানুষ অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তাই নতুন প্রজাতি সামনে আসার পর কোভিড উপযুক্ত আচরণ (Covid-Appropriate Behaviour) মেনে চলা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
টিকা নেওয়া ছাড়াও মাস্ক পরা, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা, কোভিড উপযুক্ত আচরণ অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই ভারতে থাবা বসিয়েছে ওমিক্রন। তাই আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সরকারি তরফে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে:
এখও পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাই ওমিক্রন প্রজাতির সংক্রমণ আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশগুলিকে টিকাকরণে গতি বাড়াতে বলেছে। সরকারি তরফে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
নতুন করে উপযুক্ত কোভিড বিধিনিষেধ চাপাতে হবে। বর্তমানে, ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দেশই ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভারতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে টেস্ট বাড়াতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে নামার পরই আরটি-পিসিআর টেস্ট করাতে হবে, যেখানে জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে। যে কোনও বিধিনিষেধের উদ্দেশ্য হল হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক সংক্রমণের উত্থান রোধ করা। উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করা।
view commentsLocation :
First Published :
December 07, 2021 1:51 PM IST