১৬ বছরের অনশন, প্রতিবাদ, ইতিহাস কি ভুলে গিয়েছে শর্মিলাকে ?
Last Updated:
#কলকাতা: শিরোনাম পড়ে ভাবছেন, ইতিহাস কোন শর্মিলার কথা বলছে ? কীসের ১৬ বছরের অনশন? কীসের বিপ্লব ? আসুন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক ৷
মণিপুর৷ যে মণিপুরের ছবিটি ধূসর, রক্তাত্ত, অত্যাচারের রেখায় জর্জড়িত৷ কেউ সয়ে যাচ্ছিলেন নিশ্চুপভাবে, কেউ আবার টিকে থাকার জন্য রাজনীতির লড়াইয়ে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে ছিলেন, কিন্তু একজন গর্জে উঠেছিলেন ৷ চুপ থাকতে পারেননি ৷ কোনও হিসেব-নিকেশ না করেই ঝাঁপ দিয়েছিল আন্দোলনে ৷ তারপর...১৬ বছরের অনশন ! নিশ্চুপ আন্দোলন ৷ সেই গর্জে ওঠা কণ্ঠেরই নাম ইরম ছানু শর্মিলা ৷
advertisement
advertisement
অশান্ত মণিপুরের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন ইরম ছানু শর্মিলা৷ লড়াইটা শুরু করেছিলেন নিজের মতো করেই ৷ সেভাবে স্কুলে যাওয়া হয়নি তাঁর ৷ থাকতেন মণিপুরের ছোট্ট গ্রামে ৷ পড়াশুনো তাঁর মোটেই ভালো লাগত না ৷ বাবা ছিলেন রাজনীতিতে৷ সেখানে থেকেই প্রতিবাদের ভাষা শেখা শর্মিলার ৷ সেই প্রতিবাদকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই শুরু তাঁর ৷ তবে পদ্ধতি ছিল শক্ত, দৃঢ়৷ টানা ১৬ বছরের অনশন ৷
advertisement
[caption id="" align="alignnone" width="875"]
স্বামী দেশমন্ডের সঙ্গে শর্মিলা

[/caption]
কীসের জন্য এত কঠিন লড়াই ছিল শর্মিলার?
সালটা ২০০০ ৷ মণিপুরের জঙ্গি কবলিত এলাকায় সেনাদের টহলদারি ৷ তবে তা শুধুই টহলদারি নয় ৷ আইনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সেনারা নির্মম অত্যাচারও চালাত ৷ আর এই অত্যাচারের ফলে ইম্ফলের কাছে মালোম এলাকায় অসম রাইফেলসে সেনার গুলিতে শিশু সহ মারা যায় প্রায় ১০ জন ৷ এরই প্রতিবাদে সে সময় মুখর হয়ে ওঠে গোটা মণিপুর ৷ গর্জে ওঠে শর্মিলার কণ্ঠও ৷ ওই ঘটনার পর আফস্পা আইনের প্রতিবাদে আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছিল শর্মিলা ৷
advertisement
অবশ্য শর্মিলার এই অনশনে প্রচুর বাধাও এসেছে ৷ মণিপুর প্রশাসনের জোর-জবরদস্তিতে তাঁকে ভর্তি করা হয় নার্সিং হোমেও ৷ মুখে নল ঢুকিয়ে তাঁকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল ৷ আদালতে আত্মহত্যার অভিযোগও দায়ের হয় ৷ আদালত অবশ্য এই অভিযোগে আমল দেন না ৷ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের বেডে নাকে রাইলস টিউব গোঁজা শর্মিলার ছবি ৷ শর্মিলার ১৬ বছরের অনশন জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ড বুকে ৷
advertisement
অবশেষে সেই নল খুলে ফেলেছেন শর্মিলা ৷ ২০১৬ সালের ৯ অগস্ট ১৬ বছরের অনশন সরকারিভাবে ভেঙে ফেলেছিলেন শর্মিলা ৷ যোগ দেন রাজনীতিতেও ! নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি৷ ২০১৭ সালে নতুন সংসার পাতেন ৷ বিয়ে হয় তাঁর ৷
জীবনের দ্বিতীয় পর্বে লৌহমানবী আবার কোন আন্দোলন শুরু করেন তা দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা বিশ্ব ৷ কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন ইরম শর্মিলা৷ কোথায় যেন হারিয়ে গেল তাঁর ‘লৌহমানবী’ হয়ে ওঠার লড়াই ৷ নানা রাজনীতির ভিড়ে, মণিপুরের লড়াকু মেয়ে এখন কেমন আছেন? এখনই তাঁর কণ্ঠ কাঁপে প্রতিবাদে?
advertisement
উপরের এই সব কটি প্রশ্ন খুঁজতেই পরিচালক ইন্দ্রনীল সরকার তৈরি করছেন এক তথ্যচিত্র, ‘দ্য টার্নিং পয়েন্ট’ ৷
পরিচালকের কথায়, ‘আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা বলা, যে কিনা কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছেন ৷ বলা ভালো সেই হারিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক চরিত্রকে খুঁজতে গিয়েই ইরম শর্মিলাকে পেয়ে যাওয়া ৷ আর তারপর নানা রিসার্চ সেরে, একেবারে ইরমের সংস্পর্শে আসা ৷ এ ব্যাপারে আমাকে খুবই সাহায্য করেছেন আমার ছবির প্রযোজক ৷ আর যার নাম না নিলে অন্যায় হবে, তিনি হলেন শর্মিলার স্বামী দেশমন্ড ৷ বলতে পারি দেশমন্ড থেকে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এই তথ্যচিত্র এগিয়ে চলে ৷ ’
advertisement
পরিচালকের কথায়, ‘ইরম এখন ভালো আছেন, খুশিতে আছেন ৷ সংসার করছেন ৷ রাজনীতি থেকে সরে এলেও, রাজনৈতিক চিন্তনে কোনও ঘাটতি নেই ৷ আর তাই সামাজিক দায়িত্ব এখনও পালন করে যাচ্ছেন তিনি ৷ বলা ভালো প্রতিবাদের ভাষা বদলেছে তাঁর ৷ শর্মিলার জীবনের এই টার্নিং পয়েন্টই আমার তথ্যচিত্রে উঠে আসবে ৷’
৯ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হবে এই ছবির শ্যুটিং৷ এর আগে বেঙ্গালুরুতে এই ছবির বেশ কিছু অংশ ইতিমধ্যেই শ্যুট হয়ে গিয়েছে ৷ তথ্যচিত্রটি প্রযোজনা করছেন জশপ্রীত কৌর ও কে আর মুভিজ ৷
Location :
First Published :
February 07, 2019 9:28 PM IST