কলকাতা: পাঁচ মাস আগেই মিথ্যে হয়েছিল সব প্রার্থনা, বিজ্ঞান৷ মিথ্যে হল না কেবল মৃত্যু৷ জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয়, অথচ সবচেয়ে কঠিন সত্যির সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল একটা পরিবারকে৷ ফেরেননি সেই পরিবারের ছোট মেয়ে ঐন্দ্রিলা শর্মা৷ কারও কাছে লড়াইয়ের সমার্থক ঐন্দ্রিলা, কারও কাছে ঐন্দ্রিলার অর্থ প্রাণশক্তি৷ অল্পে হেরে যাওয়া, হাঁফিয়ে ওঠা, আশা ছেড়ে দেওয়া মানুষগুলোকে নিজের অজান্তেই বাঁচতে শিখিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা৷ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, 'এভাবেও ফিরে আসা যায়৷'
তবু সময় এগোয়, মেনে নিতে হয় জীবনের সবথেকে কঠিন, অমোঘ অথচ নিষ্ঠুর সত্যিকে৷ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ঐন্দ্রিলার পরিবার৷ এবার দিদি নম্বর ওয়ানের মঞ্চে এলেনঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা ও দিদি ডাঃ ঐশ্বর্য শর্মাকে। শোনালেন সেই সময়ের কঠিন সংগ্রামের গল্প৷ শিখা দেবী নিজেই জানান ‘ওর সঙ্গেই দিদি নম্বর ওয়ানের মঞ্চে আসার কথা ছিল। আজ ও থাকলে খুবই খুশি হত।’ঐন্দ্রিলার মাকে জড়িয়ে ধরেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দ্বিতীয়বার ক্যানসার মুক্ত হয়ে দিদি নম্বর ওয়ান শোয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই প্রথমবার শ্যুটিং সেটে পা রেখেছিলেন ঐন্দ্রিলা। গত বছর মার্চে দিদি নম্বর ওয়ানে শুনিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর জীবনযুদ্ধের কথা৷ চোখে জল এসেছিল সবার৷ প্রার্থনা করেছিল সবাই- এ লড়াই থামুক জীবনের জয়ে৷ ঐন্দ্রিলা হয়ে উঠেছিল কত অচেনা অজানা মানুষের মেয়ে৷ তার সঙ্গে একই আকাশের নীচে বাঁচতে চেয়েছিল কত হেরে যাওয়া মানুষ৷ ঐন্দ্রিলা নিজেও বিশ্বাস করতেন, এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া৷ আজ সবটাই শেষ হয়তো৷ পরপর দুবার ক্যানসার, ব্রেন স্ট্রোক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগের কাছে হেরেই গেল সব প্রার্থনা, নিরলস চিকিৎসা৷
বোনের মৃত্যুর পর ফেসবুক জুড়ে বোনের বিভিন্ন স্মৃতি শেয়ার করেছেন ঐন্দ্রিলার চিকিৎসক দিদি। যে ক'দিন ঐন্দ্রিলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ঐশ্বর্য প্রতি মুহূর্তে বোনের স্বাস্থ্যের আপডেট, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বোনের সঙ্গেই লড়াই করেছিলেন। কিন্তু বোনে আটকে রাখতে পারলেন না আর। বোনের শেষযাত্রায় নিজে হাতে সাজিয়ে বোনকে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন ঐশ্বর্য। আজ না থেকেও যেন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভীষণভাবে আছেন ছোট বোন ঐন্দ্রিলা। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় লেখা প্রতিটি শব্দেও যেন ফুটে উঠেছে সেই আবেগ।
চলে তো যেতেই হয়, সবাইকে একদিন৷ কিন্তু মাত্র ২৪টা বসন্ত দেখা একটা প্রাণবন্ত মেয়ের চলে যাওয়াকে অমোঘ সত্যির মতো করে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা কারই বা আছে৷ ঐন্দ্রিলা নিজেও চেয়েছিলেন বাঁচতে৷ প্রাণভরে পৃথিবী দেখতে৷ উদযাপন করেছিলেন নিজের ফিরে আসা৷ তবু শেষই হল শেষমেষ৷ তবু যেতে দিতে হল৷ মৃত্যু মিথ্যে হলেই পারত, কিন্তু হল না!
Published by:Rachana Majumder
First published:
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।