দ্বারকেশ্বর নদীর পাশে এক্তেশ্বরের মেলায় ভিড় জমান বহু মানুষ
Last Updated:
মহাদেব বা শিবের নামে সন্ন্যাসীদের উচ্চস্বরে জয়ধ্বনি গর্জনের মতো শোনায়। আর এই গর্জন থেকেই নাকি এসেছে ‘গাজন’ শব্দটি।
#কলকাতা: মহাদেব বা শিবের নামে সন্ন্যাসীদের উচ্চস্বরে জয়ধ্বনি গর্জনের মতো শোনায়। আর এই গর্জন থেকেই নাকি এসেছে ‘গাজন’ শব্দটি। ভিন্ন মতে ‘গা’ অর্থে গ্রাম, ‘জন’ অর্থে জনগণ ৷ অর্থাৎ গ্রামের জনসাধারণের উৎসব। তবে যা-ই হোক না কেন, রাঢ় বাংলার অন্যতম প্রধান উৎসব ‘গাজন’৷ আর সেই গাজনকে কেন্দ্র করে এমন উৎসাহ উদ্দীপনা সম্ভবত বাঁকুড়া জেলার মতো আর কোথাও দেখা যায় না । চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই তিন মাসে শুধু বাঁকুড়াতেই দেড়শোর থেকেও বেশি মেলা অনুষ্ঠিত হয় ৷ তার মধ্যে বেশির ভাগই গাজন উপলক্ষে।
আর এই সমস্ত মেলার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো মেলা হল এক্তেশ্বরের মেলা ৷ অনুমান করা হয় বাঁকুড়া জেলায় দ্বারকেশ্বর নদীর তীরের এই মন্দিরটি হাজার বছরের পুরনো ৷ সম্পূর্ণ পাথরে তৈরি মন্দিরটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের এক ব্যাতিক্রমী নিদর্শন। মন্দিরের ভিতরে চতুষ্কোণ মার্বেল বাঁধানো মেঝের মাঝখানে কয়েক ধাপ সিঁড়ি নেমে দর্শন মেলে এক্তেশ্বরের। ফুটদুয়েক লম্বা পাথরের মূর্তিটিকে মানুষ শায়িত শিবজ্ঞানে পুজো করে। এ মূর্তি প্রথাগত যোনিবিদ্ধ লিঙ্গ মূর্তি নয় ৷ মন্দির চত্বরে ২-৩ ছোট মন্দির আছে।
advertisement
advertisement
আর এখানে গাজন সন্ন্যাসীদের বলা হয় ‘ভক্তা’ ৷ সব সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিলেও মূলত হাঁড়ি, বাগদি, ডোম বা আদিবাসীরাই এতে অংশগ্রহণ করেন বেশি। চৈত্র সংক্রান্তির আগের রাত থেকে শুরু হয়ে সংক্রান্তির সকাল পর্যন্ত চলে গাজন উৎসব। গাজনের তিন দিন আগে পাটস্নান নামে একটা প্রথা বর্তমানেও চালু আছে। অসংখ্য গজালবিদ্ধ কাঠের পাটা এখনও পুজো পায়। তবে নীল পূজার দিন প্রধান ভক্তাকে লোহার শলাকাবিদ্ধ সেই পাটায় শুইয়ে মন্দিরে আনার প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এক সময় কাঁটা ঝাঁপ, চড়ক গাছ, বাণ ফোঁড়া, আগুন ঝাঁপ চালু থাকলেও বর্তমানে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে শিবের খেউড় অর্থাৎ সন্ন্যাসীদের ছদ্ম গালিগালাজের প্রথাও।
advertisement
মন্দির সংলগ্ন মাঠে বসে বিশাল মেলা ৷ সেখানে বিভিন্নে পসরা সাজিয়ে বসেন বহু মানুষ ৷ শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে হলেও মেলার চরিত্রে গ্রাম্য ভাবে লক্ষ্য করা যায় ৷ এখনও এই মেলায় গেলে দেখা মেলে কাঠের নাগরদোলার ৷ এক সঙ্গেই থাকে কাঠ ও মাটির পুতুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের খাবার ৷ থাকে পাথর ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি স্থানীয় শিল্পও। তবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে চলে পাখি বিক্রি চলে এই মেলায় ৷
view commentsLocation :
First Published :
April 10, 2018 12:43 PM IST