সাপের গ্রাম! দেশে এমনটি আর কোথাও নেই...মানুষের পাশে কিলবিল করছে 'প্রতিবেশী' সাপ! কোথায় জানেন?

সাপ—একদিকে ভয়, অন্যদিকে ভক্তি। এক অদ্ভুত দ্বৈততায় ভারতীয় সংস্কৃতিতে সাপের উপস্থিতি চিরন্তন। কখনও শিবের গলায় বাসা বেঁধে রয়েছে, কখনও আবার গ্রামবাংলার মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কৃষকের উপর। লোককথা থেকে পুরাণ, মন্দির থেকে মাটির ঘর—সব জায়গাতেই সাপের ছায়া।

তবে আপনি জানেন কি, ভারতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে সাপ কেবল পুরাণের চরিত্র নয়—তারা বাস্তবের রাজা? এমন একটি জায়গা, যেখানে সাপ শুধু প্রতিবেশী নয়, বরং এখানকার সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। এক গ্রাম, যার সঙ্গে ‘কোবরা’ শব্দটি জুড়ে আছে ঠিক যেমন গঙ্গার সঙ্গে হিমালয়।

প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে আধুনিক আচার—সর্বত্রই এই বিষধর সাপটি যেন দেবতাদের এক প্রতীক। শিবের গলায় বাস করে যে নাগ, বিষ্ণুর শয়নকক্ষও গঠিত অনন্তনাগের উপর। প্রতি বছর নাগপঞ্চমী উৎসবেও দেশজুড়ে হয় নাগদেবতার পুজো।

কিন্তু শুধু পুরাণেই নয়, ভারতের কিছু কিছু অঞ্চল বাস্তবেও সাপের আধিপত্যের জন্য বিখ্যাত। তেমনই এক জায়গা একটি ছোট্ট গ্রাম। এই গ্রামকে ডাকা হয় "ভারতের কোবরা রাজধানী" বলে!

একটি সবুজ-শ্যামল ছোট গ্রাম। আয়তনে মাত্র ৩ বর্গ কিলোমিটার, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ২৭০০ ফুট। মাত্র ৬০০ জনের বাস এই জনপদে। চারপাশে ঘন অরণ্য, পাহাড়, জলপ্রপাতে ঘেরা এই জায়গা প্রকৃতিপ্রেমী ও বন্যপ্রাণ গবেষকদের কাছে স্বর্গরাজ্য।

শুধুই সাপের জন্য নয়, এখানকার গাঢ় অরণ্যে দেখা মেলে বহু দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের। এখানেই প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে কিছু বিরল ছত্রাক প্রজাতি, যেমন—Meliola agumbensis, Tarenna agumbensis, Hygromaster agumbensis, Dactylaria agumbensis—সব কিছুর সঙ্গেই ‘আগুম্বে’ নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

কোথায় এই সাপের গ্রাম? ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বুকে অবস্থিত কর্ণাটকের আগুম্বে। এখানে এত বৃষ্টি হয় যে একে "দক্ষিণের চেরাপুঞ্জি" বলা হয়।

ভারতের কোবরা রাজধানী হলেও আগুম্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বাসিন্দা নিঃসন্দেহে রাজনাগ বা কিং কোবরা। এখানেই বিখ্যাত সরীসৃপ গবেষক পদ্মশ্রী রোমুলাস হুইটেকার প্রতিষ্ঠা করেন Agumbe Rainforest Research Station (ARRS)—যা ভারতের প্রথম রাজনাগ রেডিও টেলিমেট্রি প্রকল্প চালু করে।

যারা জানেন না, হারপেটোলজিস্ট হলেন এমন এক বৈজ্ঞানিক যিনি সাপ, ব্যাঙ, টিকটিকি, কচ্ছপ ইত্যাদি সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর উপর গবেষণা করেন। মাঠে-ঘাটে, জঙ্গলে কিংবা ল্যাবরেটরিতে এই প্রাণীদের আচরণ, শারীরবিদ্যা, বংশগতি ও বিবর্তন নিয়ে কাজ করে থাকেন তাঁরা। এই গবেষণাই অনেকসময় বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

রাজনাগ বা কিং কোবরা হল বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বিষধর সাপ। তবে সবার থেকে আলাদা এরা, কারণ অন্য সাপের মত ইঁদুর বা ব্যাঙ নয়—এরা মূলত অন্য সাপ খায়। এমনকী বিষধর সাপ যেমন ক্ৰেইট-কেও এরা খাবার হিসেবে বেছে নেয়।

সাপদের সাপ—বনের খাদ্য শৃঙ্খলে একেবারে শীর্ষে। এই আগুম্বেই ভারতের সেই রহস্যময় প্রাকৃতিক কোষাগার—যেখানে সাপ শুধু ভয় নয়, গবেষণা, শ্রদ্ধা আর জীববৈচিত্র্যের চাবিকাঠি। দেশজুড়ে এরকম দ্বিতীয় কোনও গ্রাম নেই—যেখানে সাপ এতটা নিকটতম এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।