সাপ কামড়ালেই...! এক ঘণ্টার মধ্যে করুন মোক্ষম 'কাজ', বেঁচে যাবেন, ফলো করুন সাপের কামড়ের 'গোল্ডেন রুল'!

আজকাল সাপের কামড়ের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। বর্ষাকাল গেলেও শীতকালেও বিশধরদের উপদ্রব থেকে মুক্তি নেই গ্রাম বাংলা থেকে শহরে। বিশেষ করে শীতে অত্যন্ত ঠান্ডার ফলে সাপ নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে আসে বিষাক্ত সাপ। খুঁজতে থাকে উষ্ণ আশ্রয়।

আর আচমকা বাড়ির আশপাশে বা ঘরের কোণে, অন্ধকারে যদি সাপের সম্মুখীন হন, হাড়হিম হয়ে যায় বেশিরভাগ মানুষেরই। মুহূর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান মানুষ।

সাপে কামড়ানোর পর মানুষ প্রায়শই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এমন পদক্ষেপ নেয় যা মারাত্মক প্রমাণিত হয় এবং কখনও কখনও এই অসাবধানতা আশেপাশের মানুষের উপরও প্রভাব ফেলে।

এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট সাপপ্রেমী অবিনাশ যাদব। গত ৩০ বছর ধরে সাপ উদ্ধার এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করে আসছেন অবিনাশ। সাপের কামড়ের পরে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা এবং দ্রুত কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এই বিশেষ সতর্কতাগুলি অনুসরণ করলে সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর জন্য মূল্যবান সময় পাওয়া যেতে পারে। অন্তত মৃত্যুর কোপ থেকে বাঁচিয়ে নেওয়া যায় সাপের কামড়ের রোগীকে।

আতঙ্কের কিছু ভুল:অবিনাশ যাদব তাঁর পরামর্শে বলেন, সাপের কামড়ের পর মানুষ প্রায়শই অজ্ঞতাবশত বা আতঙ্কিত হয়ে কিছু ভুল করে বসেন, যা আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। এক্ষেত্রে তিনি বারবারই সঠিক তথ্য এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। সর্প বিশেষজ্ঞের মতে কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপই বিষাক্ত সাপের কামড়ে বেঁচে থাকার চাবিকাঠি।

সাপের কামড়ের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এক মুহূর্তও নষ্ট না করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞ এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করেছেন একটি, "গোল্ডেন রুল"। অর্থাৎ সাপের কামড়ের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে যদি এই নিয়ম অনুসরণ করা যায় তাহলেই কিন্তু বাঁচিয়ে নেওয়া যায় রোগীকে।

কী এই রুল? বলা হচ্ছে, যদি সাপ কামড়ানোর ১ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যান্টি-ভেনমের একটি ডোজ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁদের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। অতএব, সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছনোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

সাপকে কামড়ানোর পর ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। সেই সময়, সাপটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং রাগান্বিত হতে পারে, যার ফলে অন্য ব্যক্তি কামড় দিতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সাপের একটি পরিষ্কার ছবি তুলুন:যদি সম্ভব হয়, সাপের একটি পরিষ্কার ছবি তুলুন, তবে তা করার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। ছবিটি ডাক্তারদের সাপটি হিমোটক্সিন (রক্তে প্রভাব ফেলছে) নাকি নিউরোটক্সিন (স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলছে) তা শনাক্ত করতে সাহায্য করবে, যার ফলে সঠিক অ্যান্টিভেনম নির্বাচন করা এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করা সহজ হবে।

সিনেমায় দেখানো সাপের বিষ চুষে নেওয়া বা ক্ষতস্থান শক্ত করে ব্যান্ডেজ করার মতো পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন। বিষ চুষে নেওয়া জীবনের জন্য বিরাট ঝুঁকি হতে পারে এবং ক্ষতস্থান শক্ত করে ব্যান্ডেজ করলে রক্ত ​​সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে আক্রান্ত অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অঙ্গহানিও হতে পারে।

জাদুবিদ্যা, তান্ত্রিক আচার-অনুষ্ঠান, অথবা ভেষজ প্রতিকার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কেবল সময় নষ্ট করে এবং হাসপাতালে পৌঁছতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ঘটায়।

সাপের কামড়ের একমাত্র প্রমাণিত চিকিৎসা হল অ্যান্টি-ভেনম, যা শুধুমাত্র সরকারি এবং কিছু বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায়। অতএব, কুসংস্কারের ফাঁদে পা দেবেন না এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিন।