পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের তৃতীয় সিঁড়ির রহস্যটা ঠিক কী? কেন সিঁড়ির এই ধাপে পা রাখেন না ভক্তরা? এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্যময় বিষয়গুলি আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Jagannath Rath Yatra 2025 : ভোপালের বাসিন্দা প্রখ্যাত জ্যোতিষী এবং বাস্তু বিশারদ পণ্ডিত হিতেন্দ্র কুমার শর্মা এই বিষয়ে আলোচনা করলেন।
advertisement
1/8

Story-Keerti Rajpoot: ভারতের সবথেকে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির। প্রত্যেক বছর রথযাত্রার মতো মহোৎসব উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। তবে এই মন্দিরের একটি বিশেষ জিনিস সব সময় আলোচনার মধ্যে থাকে। আর সেটা হল - মন্দিরের তৃতীয় ধাপ বা তৃতীয় সিঁড়িতে পা না রাখা। কিন্তু পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের এই তৃতীয় সিঁড়িকে কেন বিশেষ বলে মনে করা হয়? যমরাজের সঙ্গে এর যোগই বা কী? সেটাই জেনে নেওয়া যাক। ভোপালের বাসিন্দা প্রখ্যাত জ্যোতিষী এবং বাস্তু বিশারদ পণ্ডিত হিতেন্দ্র কুমার শর্মা এই বিষয়ে আলোচনা করলেন।
advertisement
2/8
মন্দিরের গুরুত্ব এবং বিশ্বাস: জগন্নাথদেবকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসেবেই গণ্য করা হয়। আর জগন্নাথদেবের সঙ্গে পূজিত হন তাঁর দাদা ভগবান বলভদ্র এবং বোন দেবী সুভদ্রাও। অনেকেই হয়তো জানেন যে, পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির চারটি ধামের মধ্যে অন্যতম। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে দর্শন করলে ভক্তরা নিজেদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই মন্দিরে রয়েছে মোট ২২টি সিঁড়ি। এর মধ্যে একটি – নীচ থেকে তৃতীয় সিঁড়িটির ক্ষেত্রে রয়েছে এক অনন্য নিয়ম। ভক্তরা এই সিঁড়িতে পা রাখেন না। এমনকী এটি অত্যন্ত ভক্তির সঙ্গেই অতিক্রম করেন। আর এই সিঁড়িটি যম শিলা নামেই পরিচিত।
advertisement
3/8
১. যমরাজ এবং তৃতীয় ধাপের সম্পর্ক: পুরাতন কিংবদন্তি অনুযায়ী, জগন্নাথদেবের সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন যমরাজ। তিনি বলেন, এই মন্দির দর্শনের পরে আর কোনও মানুষই যমলোকে আসছেন না। কারণ তাঁর সমস্ত পাপ ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে। এটা শুনে জগন্নাথদেব হেসে বলেন যে, যদি এমনটা হয়, তাহলে এই মন্দিরের তৃতীয় ধাপটা আপনার নামে উৎসর্গ করা থাকবে। ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নেন যে, দর্শনের পর যে ভক্তরা এই সিঁড়ির ধাপে পা রাখবেন, তাঁদের পাপ অবশ্যই ধুয়ে যাবে। কিন্তু তাঁকে যমলোকেই যেতে হবে। এরপর থেকে পুরীর মন্দিরের তৃতীয় সিঁড়িটি যমরাজের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। আর তা যম শিলা নামে পরিচিতি পেয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কেন? এই প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মন্দিরে এই নিয়ম চালু করা হয় যে, জগন্নাথদেবের দর্শন সেরে কোনও ভক্ত যেন এই তৃতীয় সিঁড়িতে পা না দেন। এটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসই নয়, এটি এক ধরনের সাবধানবাণীও বটে! পুরীর মন্দিরের তৃতীয় সিঁড়িকে সম্মান জানানোর অর্থ হল - যমরাজকে শ্রদ্ধা জানানো। আর ভক্তরা এই বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে পালন করেন এবং এই সিঁড়ি অতিক্রম করার সময় সতর্কতাও অবলম্বন করেন।
advertisement
4/8
২. মন্দিরের দেবতার হৃদস্পন্দন: কথিত আছে যে, পৃথিবীতে যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহাবসান ঘটে, তখন তাঁর সমগ্র দেহই পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর হৃদযন্ত্রটি অক্ষত রয়ে গিয়েছে। এটাই বিশ্বাস করা হয়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাঠের মূর্তিতে সেই হৃদযন্ত্রটি এখনও নিরাপদে রয়ে গিয়েছে। আর ধীরে ধীরে স্পন্দিত হয় সেই হৃদযন্ত্র। প্রতি ১২ বছরে সেই বিগ্রহ পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু মূর্তির ভিতরে থাকা এই রহস্যজনক উপাদানটির কখনওই পরিবর্তন ঘটেনি।
advertisement
5/8
৩. সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন আচমকা কেন থেমে যায়? পুরীর মন্দিরের মূল দ্বার তথা সিংহদুয়ারের বাইরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাবে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শোনা যায়। কিন্তু যখনই ভক্তরা মন্দিরের অন্দরে প্রবেশ করেন, তখন যেন আচমকাই সেই সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন স্তব্ধ হয়ে যায়। এটা কিন্তু কোনও বিভ্রম নয়। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এটা ঘটে। কিন্তু কেন এমনটা ঘটে, সেটা এত বছরে কেউই আজ পর্যন্ত বুঝতে পারেননি।
advertisement
6/8
৪. বাতাসের উল্টো দিকে ওড়ে মন্দিরের ধ্বজা এবং ১৮ বছরের ভীতি: মন্দিরের চূড়ায় উড়তে দেখা যায় ধ্বজা। কিন্তু সব সময় বাতাসের বিপরীত দিশাতেই ওড়ে এটি। এটি স্বাভাবিক নিয়মকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এমনকী এ-ও বিশ্বাস রয়েছে যে, মন্দিরের ধ্বজা যদি কোনও দিন বদলানো না হয়, তাহলে মন্দির ১৮ বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, পুরনো ধ্বজা নেতিবাচক এনার্জিকে আকর্ষণ করে। তাই এটি প্রতিদিন বদলানো উচিত।
advertisement
7/8
৫. রন্ধনশালায় বিপরীত ক্রমে রান্না: পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের রন্ধনশালা বিশ্বের সবথেকে বড় পাকশালার মধ্যে অন্যতম। একটির উপর আর একটি মাটির পাত্র সাজানো হয়। এভাবেই একটার উপর একটা বসিয়ে মোট ৭টি মাটির পাত্রে হয় রান্নাবান্না। কিন্তু সবথেকে বিস্ময়কর বিষয়টি হল, একেবারে উপরে থাকা পাত্রটির প্রসাদই সবার আগে রান্না হয়। এরপর তার নীচের পাত্রটির প্রসাদ রান্না হয়। সব শেষে একেবারে নীচে বসানো পাত্রটির প্রসাদ রান্না হয়। প্রতি বছর এই নিয়মই অনুসরণ করা হয়। কিন্তু এর কারও আজও কেউ বুঝে উঠতে পারেননি।
advertisement
8/8
৬. সুদর্শন চক্র এবং অদৃশ্য ছায়া: পুরীর মন্দিরের চূড়ায় বসানো রয়েছে সুদর্শন চক্র। যে দিক থেকেই সেই সুদর্শন চক্রের দিক থেকে তাকানো হোক না কেন, মনে হবে যেন, এটি ভক্তদের দিকে চেয়ে রয়েছে। প্রত্যেক দিশা থেকে এই চক্রটিকে একই রকম দেখায়। একই ভাবে, আর একটি রহস্য হল এই মন্দিরের চূড়ার ছায়া। এত উঁচুতে থাকা সত্ত্বেও মন্দিরের ছায়া মাটি থেকে কোনও ভাবেই দেখা যায় না। এমনকী এই বিষয়টি বিজ্ঞানকেও চমকে দিয়েছে।
বাংলা খবর/ছবি/পাঁচমিশালি/
পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের তৃতীয় সিঁড়ির রহস্যটা ঠিক কী? কেন সিঁড়ির এই ধাপে পা রাখেন না ভক্তরা? এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্যময় বিষয়গুলি আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে