সোনা না, রুপো না...! পৃথিবীতে আরও বেশি 'দামি' এই 'কাঠ', চন্দন নয়, চমকাবেন নামেই!

বলুন তো পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সেই বস্তু কী? ভাবলেই নিশ্চই মাথায় আসছে হিরে বা সোনার মতো ধাতুর কথা? কিন্তু জানেন কী এগুলোর চেয়েও মূল্যবান ও দামি জিনিস হিসেবে রেকর্ড তৈরি করছে অন্য একটি জিনিস যা আপনার কল্পনারও বাইরে?

শুনলে এক্ষুনি আকাশ থেকে পড়বেন নামটি। 'কাঠ' হল এমনই একটি জিনিস যা হিরে বা সোনার চেয়েও দামি। তবে এ কাঠ যে সে কাঠ মোটেই নয়। বিশেষ একটি 'কাঠ'। আর এর দাম প্রতি কেজিতে ১ লক্ষ টাকারও বেশি। বিশেষ এই কাঠের নাম 'আগরউড'। এটিকে 'ওড'ও বলা হয়।

সাধারণ কাঠের যে কোনও প্রজাতির তুলনায়, এটি খুবই অনন্য। এই কাঠটি এক চমৎকার সুগন্ধ দেয় যা এই কাঠকে অন্য সব কাঠের চেয়ে আলাদা মর্যাদা দেয়। এটি খুবই বিরল একটি কাঠ। আগরউডের অনন্যতা ও অসাধারণ গুণ শুনলে চমকে যাবেন। এই বিশেষ গুণ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপাদানগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।

কী ভাবে জন্মায় আগরউড?জানলে চমকে যাবেন। বস্তুত অ্যাকুইলারিয়া নামক এক ধরণের ছত্রাক গাছে আক্রমণ করলে তবেই এই আগরউড উৎপন্ন হয়। ছত্রাক থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য, গাছটি একটি কালো, সুগন্ধযুক্ত রজন তৈরি করে। একেই আগরউড বলা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে অনেক বছর সময় লাগে। তাই এটি খুবই বিরল এবং ব্যয়বহুল।

কত দাম এই কাঠের? কেন এত মূল্যবান?সোনা, রূপা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর তুলনায় আগর কাঠের দাম বেশি। এর দাম প্রতি কেজি ১ লক্ষ টাকারও বেশি। বলা হয় এর বিরলতা এবং রজন উৎপাদন প্রক্রিয়া খুবই ধীর হওয়ায় এটি এত মূল্যবান। বাজারে উচ্চ চাহিদার কারণে এই কাঠের দামও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এটি কোথায় পাওয়া যায়?আগর কাঠ মূলত ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।

যেখানে অ্যাকুইলারিয়া গাছ বিরল সেখানে আগর কাঠ সীমিত পরিমাণেও পাওয়া যায়। এই কাঠগুলির সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার।

আতর, আগর কাঠ থেকে তৈরি আয়ুর্বেদিক:ওউড.. আতর বিশ্বের সবচেয়ে দামি সুগন্ধিগুলির মধ্যে একটি। এর সুগন্ধি সারা বিশ্বে বিখ্যাত। কেবল সুগন্ধিতেই নয়, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং ধ্যানেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই আতর মনকে শান্তি প্রদান করে বলে বিশ্বাস করা হয়। তাছাড়া, আয়ুর্বেদে, এটি মানসিক চাপ, অনিদ্রা এবং হজমের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেহেতু এর এত ব্যবহার রয়েছে, তাই এর দাম ক্রমশ বাড়ছে।

সংরক্ষণ একটি চ্যালেঞ্জ:আগর কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, অনেকেই এটি পাচারের চেষ্টা করছে। ক্রমবর্ধমানভাবে এই গাছ কাটার কারণে অ্যাকুইলারিয়া গাছ বিলুপ্তির ঝুঁকি অবশ্য রয়েছে। এর ফলে দামও ক্রমশ বাড়ছে এই গাছের।

আগর কাঠের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি চাষেরও প্রচেষ্টা চলছে দেশে দেশে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষকরা অ্যাকুইলা

অ্যাকুইলারিয়া গাছ চাষ করছেন এবং কৃত্রিমভাবে ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হয়ে আগর কাঠ উৎপাদন করছেন।

এই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন আগর কাঠের গুণমান অর্জনের জন্য এখনও অবশ্য গবেষণা চলছে।

তবে, চাষের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায়, আগর কাঠের দাম ভবিষ্যতে স্থিতিশীল হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি অবৈধ কাঠ কাটা কমাবে এবং পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়তা করবে।