সরাসরি যুদ্ধের হুমকি, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করায় কেন এত মুষড়ে পড়েছে পাকিস্তান ? আসল দুই কারণ জানতেই হবে
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
ভারতের জলবিদ্যুৎ মন্ত্রী সি আর পাটিল সাফ বলেই দিয়েছেন যে পাকিস্তানে যাতে এক ফোঁটাও জল না পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করা হবে। এতেই মুষড়ে পড়েছে পাক কূটনৈতিক মহল। কেন, তা বোঝার আগে সিন্ধু জল চুক্তির পটভূমি এবং শর্তাবলী জেনে নেওয়া দরকার।
advertisement
1/12

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হানা পাকিস্তানকে বিপদে ফেলেছে। একে তো লস্কর-ই-তৈবার এক শাখা টিআরএফ এই দায় স্বীকার করে নিয়েছে। তার পরেই ভারত বন্ধ করেছে আটারি ওয়াঘা সীমান্ত, অনির্দিষ্টকালের জন্য রদ করেছে সিন্ধু জল চুক্তি। ভারতের জলবিদ্যুৎ মন্ত্রী সি আর পাটিল সাফ বলেই দিয়েছেন যে পাকিস্তানে যাতে এক ফোঁটাও জল না পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করা হবে। এতেই মুষড়ে পড়েছে পাক কূটনৈতিক মহল। কেন, তা বোঝার আগে সিন্ধু জল চুক্তির পটভূমি এবং শর্তাবলী জেনে নেওয়া দরকার। (Photo: PTI)
advertisement
2/12
চুক্তি স্বাক্ষরের পটভূমি: ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু জল চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, অতিরিক্ত স্বাক্ষরকারী হিসেবে উপস্থিত ছিল বিশ্বব্যাঙ্কও। এই চুক্তিতে সিন্ধু নদী এবং এর উপনদীগুলির জল দুই দেশের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। চুক্তির অধীনে, তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী বিয়াস, রাভি এবং শতদ্রুর জল ভারতকে এবং তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী চেনাব, সিন্ধু এবং ঝিলমের জল পাকিস্তানকে বরাদ্দ করা হয়েছিল। এই চুক্তি উভয় দেশকে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে একে অপরের নদী ব্যবহারের অনুমতি দেয়, যেমন ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যেখানে খুব কম বা একেবারেই জল সঞ্চয়ের প্রয়োজন হয় না। (Photo Credit: AFP)
advertisement
3/12
কে কী সুবিধা পায়? এই চুক্তি অনুসারে, তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী বিয়াস, রাভি এবং শতদ্রুর জলের উপর নিয়ন্ত্রণ ভারতকে দেওয়া হয়, যার গড় বার্ষিক প্রবাহ ৪১ বিলিয়ন বর্গমিটার (৩৩ মিলিয়ন একরফুট)। তেমনই পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলমের জলের উপর নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানকে দেওয়া হয়, যার গড় বার্ষিক প্রবাহ ৯৯ বিলিয়ন বর্গমিটার (৩৩ মিলিয়ন একরফুট) - ভারতে। অন্য দিকে, সিন্ধু নদীর দ্বারা বহন করা মোট জলের প্রায় ৩০% ভারত পেত, আর বাকি ৭০% পাকিস্তান পেত।
advertisement
4/12
এই চুক্তি ভারতকে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলির জল সীমিত পর্যায়ে সেচের জন্য এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন, নৌচলাচল, মাছ চাষ ইত্যাদি কাজে সীমাহীন ব্যবহারের অনুমতি দেয়। চুক্তিটি উভয় দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নয়। তবে, পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় নদীর দিক থেকেই ভাটির দেশ হওয়ায় পাকিস্তান আশঙ্কা করে যে ভারত যে কোনও সময়ে বন্যা বা খরার সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে।
advertisement
5/12
এবার ভারত এই জলধারাকে হাতিয়ার করে চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল। তবে, পাকিস্তান যদি সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করে এবং অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনে তবে চুক্তি আবার আগের মতোই চলবে, সে পথ খোলা রাখা হয়েছে। পাকিস্তানে অবাধ জলপ্রবাহ বন্ধ করার লক্ষ্যে এটি প্রথম বড় পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ভারত তার প্রতিবেশীকে সতর্ক করে দিয়েছে যে তার কাছে মাত্র দুটি বিকল্প আছে- হয় তারা সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করবে, নয় তো ভারতকে জলপ্রবাহ বন্ধ করতে বাধ্য করবে! এই পদক্ষেপ দুই কারণে পাকিস্তানের জন্য অশনি সঙ্কেত! (Photo: AP)
advertisement
6/12
প্রথম কারণ- নোটিস ছাড়াই নদী ব্যবস্থাপনা: চুক্তির অধীনে, পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলিতে (বিয়াস, রাভি, শতদ্রু) কোনও প্রকল্প শুরু করার আগে ভারতকে কমপক্ষে ছয় মাস আগে পাকিস্তানকে অবহিত করতে হত। পাকিস্তান প্রায়শই ছোট ছোট বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করত, যার কারণে ভারতের প্রকল্পগুলি বিলম্বিত হত। চুক্তি স্থগিত হওয়ার পর ভারতের আর এই ধরনের কোনও অনুমতির প্রয়োজন নেই। (Photo: AP)
advertisement
7/12
প্রভাব: ভারত এখন কোনও বাধা ছাড়াই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত জল সঞ্চয়, বাঁধ নির্মাণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারে। সরকারি সূত্রের মতে, এই স্থগিতাদেশ ভারতকে কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। দেশ প্রয়োজন অনুযায়ী জল ব্যবহার করতে পারে।
advertisement
8/12
পাকিস্তানের জন্য বিপদ: পাকিস্তান আর ভারতের প্রকল্পগুলোর তথ্যের বিশদ পাবে না, যার ফলে তারা জলপ্রবাহের উপর নির্ভরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এর ফলে পাকিস্তানের কৃষি ও জ্বালানি খাতে গভীর প্রভাব পড়তে পারে। (Photo: AP)
advertisement
9/12
দ্বিতীয় কারণ- মানসিক ও কৌশলগত চাপ: চুক্তি স্থগিত করা পাকিস্তানের জন্য কেবল প্রযুক্তিগত স্তরেই নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত স্তরেও একটি বড় আঘাত। ভারত এখন তার ইচ্ছামতো জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তা বন্ধ করতে পারে অথবা ছেড়ে দিতে পারে যখন খুশি। (Photo: AP)
advertisement
10/12
প্রভাব: এত দিন পাকিস্তান খরা ও বন্যার জন্য ভারতকে দোষারোপ করত। এখন, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তাদের কাছে আগের তুলনায় জল কম। ভারত ইচ্ছামতো জল ছেড়ে দিতে বা বন্ধ করতে পারে, যা প্রতিবেশী দেশের ফসল চক্রের উপর প্রভাব ফেলবে, কৃষকরা সমস্যায় পড়বে। (Photo: AP)
advertisement
11/12
পাকিস্তানের জন্য বিপদ: আসলে, পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক দেশগুলির মধ্যে একটি, যেখানে গড়ে বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ২৪০ মিলিয়ন। এর জল সম্পদের উপর নির্ভরতা ৭৬ শতাংশ। পাকিস্তানের মোট কৃষি উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ সিন্ধু অববাহিকা সেচ ব্যবস্থায় হয়। ভারতীয় নদী থেকে কৃষি এবং জলবিদ্যুৎ পাকিস্তানের জিডিপির ২৪ শতাংশ, কর্মসংস্থানের ৪৫ শতাংশ এবং রফতানির ৬০ শতাংশেরও বেশির উৎস। এবার জলের অভাব হলে গম, ধান এবং তুলোর উৎপাদন প্রভাবিত হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে। তাছাড়া, তারবেলা এবং মংলার মতো বাঁধগুলিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পাকিস্তানের জ্বালানি সঙ্কটকেও আরও গভীর করতে পারে।
advertisement
12/12
ভারতের এই পদক্ষেপে পাকিস্তান সঙ্গত ভাবেই মুষড়ে পড়েছে। এখন চলছে ভারতকে ভয় দেখানোর পালা! পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন যে পাকিস্তান সিন্ধু সভ্যতার প্রকৃত রক্ষক। হয় নদীতে জল বইবে, নয়তো ভারতের রক্ত বইবে। পাকিস্তানের মন্ত্রী হানিফ আব্বাসি ভারতকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘোরি, শাহিন, গজনবি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৩০টি পারমাণবিক অস্ত্র সাজিয়ে রাখার জন্য নয়। তাঁর দাবি, ভারত যদি জল বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এই বিবৃতিগুলো সবই পাকিস্তানের গভীর হতাশার প্রতিফলন, তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার জায়গা থাকে না। (Photo: PTI)
বাংলা খবর/ছবি/পাঁচমিশালি/
সরাসরি যুদ্ধের হুমকি, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করায় কেন এত মুষড়ে পড়েছে পাকিস্তান ? আসল দুই কারণ জানতেই হবে