রাতের ট্রেনে হঠাৎ উঠে এল দম্পতি..., মেঝেতে বিছানা পেতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল তক্ষুনি, সকালে ঘুম ভাঙতেই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল কো-প্যাসেঞ্জারের!

ভারতীয় রেলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাত্রা করেন। প্রায় কয়েক হাজার ট্রেনে চড়েই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে যান যাত্রীরা। সময় ও কম খরচে কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে দিতে রেলের জুড়ি মেলা ভার।

আর সেই কারণেই বহু মানুষ গণ মাধ্যমের সবচেয়ে পছন্দের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন রেলপথকেই। তবে একথা অস্বীকার করা যায় না এত জনপ্রিয়তার কারণেই ট্রেনের যাত্রায় মাঝে মাঝে ভিড় হয় অমানসিক।

স্টেশন হোক বা ট্রেন, এই ভিড়ের আড়ালেই ঘটে যায় এমন অনেক ঘটনা যা মাঝে মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়ে তুলকালাম ফেলে দেয়। এমন ঘটনা যা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়।

সম্প্রতি সেন্ট্রাল রেলের একটি ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে জিআরপি-র হাতে ধরা পড়েছে ভয়াবহ কাণ্ড। যা ঘূণাক্ষরেও আগাম বুঝতে পারেনি ট্রেনের কামরার কেউই। রাতের ভিড় ট্রেনে যা ঘটেছিল তা চোখ খুলে দেবে আপনারও।

ট্রেন আর পাঁচদিনের মতোই ছুটছিল। সেই সময় ভিড় ট্রেনে উঠেছিলেন এক দম্পতি। ট্রেনে উঠেই কারও সঙ্গে কোনও কথা না বলে নিজেদের চাদর ইত্যাদি মেঝেতে বিছিয়ে তড়িঘড়ি শুয়ে পড়লেন তাঁরা।

অনেক সময়ই ট্রেনে আরএসি বুকিং বা অসংরক্ষিত কামরার টিকিট থাকলে যাত্রীরা সংরক্ষিত কামরায় উঠে পরে এই ভাবেই মেঝেতে বিছানা করে রাত কাটিয়ে ফেলেন। আর তাতে কারও কোনও সন্দেহ হওয়ারও কথা নয়।

কিন্তু ট্রেন শুদ্ধু তোলপাড় পরে যায় সকালে আলো ফুটতে না ফুটতেই। দেখা যায়, আশেপাশের যাত্রীদের অনেকেরই নানা মূল্যবান জিনিসপত্র, বিশেষ করে সোনার গয়না, ঘড়ি, ফোন ইত্যাদি গায়েব। প্রথমে খোঁজ খোজঁ চললেও কয়েক মিনিটেই যাত্রীরা বুঝতে পারেন তাঁদের সব জিনিস চুরি গিয়েছে রাতের অন্ধকারে।

টাস্ক ফোর্সের ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে শেষমেশ রেল পুলিশের জালে ধরা পড়ল এমনই কিছু অভিযুক্ত। যারা নিয়মিত রাতের ট্রেনে উঠে এই চরম কীর্তি করে বেড়ায়। আর কো-প্যাসেঞ্জাররা ধরতেও পারেন না আসলে কারা এই কুকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

চুরির সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তরাই শুধু ধরা পড়েনি, জিআরপি ও আরপিএফ-এর চেষ্টায় চুরি যাওয়া জিনিসপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত দম্পতি জানায় যে তারা সবসময় সাধারণত খুব ভিড় কোচে ভ্রমণ করত।

জায়গা না থাকার অছিলায় তারা চাদর বিছিয়ে ট্রেনের মেঝেতেই বসে পড়ত এবং সুযোগ পেলেই টার্গেট ফিক্স করে আসল অপরাধ সংঘটিত করত। মোক্ষম টার্গেট খুঁজে বের করার জন্য এরা ট্রেনের একাধিক কোচেই ঘুরে বেড়াত। তবে কখনই এরা একা যাত্রা করত না। আর তাতেই সহজে এদের দিকে কারও নজরও পড়ত না, এমনকি চোখ এড়িয়ে যেত জিআরপি-রও।

ট্রেন ভ্রমণের সময়, রাত হলেই তারা মেঝেতে চাদর বিছিয়ে দিত। কাছে বসা যাত্রীরাও তাদের আশেপাশেই ঘুমাতেন। এরপর কাজ হাসিল করে অন্ধকারে কেউ টের পাওয়ার আগেই এমনভাবে ট্রেন থেকে নেমে যেত এরা যে কাছে বসা কো-প্যাসেঞ্জাররা কিছু বুঝতেই পারতেন না।

আর এইভাবেই সম্প্রতি ১১০৮৭ (ভেরাবল-পুনে) এবং ১১০৪৯ (আহমেদাবাদ-কোলাপুর) ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে সবমিলিয়ে প্রায় ১১ ভরি সোনার গয়না (প্রায় ৩,৯৩,০০০ টাকা মূল্যের) চুরি হয়ে যায়। এরপরেই ক্ষুব্ধ যাত্রীরা এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের পর, আসরে নামে আরপিএফ এবং জিআরপি। একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করে স্টেশনে স্টেশনে তল্লাশি চালানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে, টাস্ক ফোর্স জানতে পারে যে চুরির ঘটনায় সানসি গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীরা জড়িত থাকতে পারে।

রেল সুরক্ষা বাহিনী (RPF) এবং সরকারি রেল পুলিশ (GRP) এক যৌথ অভিযানে অবশেষে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে একটি বড় সাফল্য পেয়েছে। সেন্ট্রাল রেলওয়ের মতে, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় রেল নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যাতে যাত্রীদের আস্থা অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকে কড়া নজর থাকে রেলের।