সর্ষে, পালং ছাড়ুন...! দেশি 'টনিক' এই শাক, আয়রনের 'সিন্দুক', কমায় ওজন, সামলে রাখে সুগার, ভাল রাখে চোখ থেকে ত্বক, বর্ষায় খাওয়া মাস্ট!

বর্ষাকালে, যখন পরিবেশ ভেজা ভেজা থাকে। সবুজে সবুজে ভরা থাকে চারদিক তখন প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কিছু সবুজ শাক-সবজি আপনার স্বাস্থ্যকে রোগ-জীবাণু থেকে গার্ড করার জন্য একদম অব্যর্থ।

আসলে বাজারে এই সময় নানা সবজি থাকলেও বর্ষায় শাক একটু বেছে খেতে হয়। কারণ সব শাক কিন্তু এইসময় খাওয়া উচিত নয় বলেই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে আপনি যদি শাক সুখ থেকে বঞ্চিত না হতে চান আর গরমভাতে মেখে শাক খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের কিছু দুর্দান্ত ওষুধের হদিস পেতে চান, তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য পড়া জরুরি।

আজ এই প্রতিবেদনে এমন একটি শাকের ঔষধি গুণ ব্যাখ্যা করব যা শরীরের একাধিক সমস্যা একসঙ্গে উপরে ফেলে। 'নারী শাক' বা বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় 'কলমি শাক' খান তো অনেকেই কিন্তু এই শাক খেলে শরীরে কী কী হতে পারে সে খবর রাখেন?

চিকিৎসকদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, স্বাস্থ্যের জন্য ওষুধের চেয়ে কম নয় এই শাক। এই সবজিটি মাঠে বা বাড়ির আশেপাশে অনাদরেই জন্মায় এবং পকোড়া বা সবজি হিসেবে খেতেও দুর্দান্ত লাগে।

আয়ুর্বেদিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ, এই সবজিটি কেবল লিভারকে বিষমুক্ত করে না, বরং দৃষ্টিশক্তি এবং পাচনতন্ত্রকেও শক্তিশালী করে। বর্ষাকালে সুস্থ থাকার এই দেশীয় এবং সস্তা উপায়টি এখনও গ্রামে খুব জনপ্রিয়। চেনাতে চাই শহরকেও!

ইংরেজিতে এই শাককে বলা হয় 'ওয়াটার স্পিনাচ'। বর্ষাকালে সুস্থ থাকতে চাইলে এই ধরণের কিছু সবুজ শাকসবজি ডায়েটে রাখা মাস্ট। আজকাল বাজারে প্রায়ই এই শাক পাওয়া যায়। নারী শাক বা কলমি শাককে জল পালং শাকও বলা হয়।

নারী শাকে অনেক ধরণের পুষ্টি এবং ভিটামিন পাওয়া যায়। যা আপনাকে অনেক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে।

এটি পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক সম্পর্কিত অনেক সমস্যায় উপকারী।

কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র নিয়ামতপুরে কর্মরত হোম সায়েন্স বিশেষজ্ঞ ডঃ বিদ্যা গুপ্ত বলেন, নারী শাকের প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যার কারণে এটি রক্তাল্পতা নিরাময় করে।

নারী শাক রক্তের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। আয়রনের কারণে এটি রক্তের সমস্যা দূর করে। কলমি বা নারী শাক মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। যা মহিলাদের শরীরের রক্তের ঘাটতি দূর করে ম্যাজিকের মতো।

যদি আপনার চোখের সমস্যা থাকে, তাহলে নারী শাক আপনার জন্য আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। কারণ এই শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, খাদ্যতালিকায় এই শক্তি অন্তর্ভুক্ত করলে রাতকানা রোগও দূর হয়।

যদি আপনি আপনার ক্রমবর্ধমান ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় এই কলমি বা নারী শাক রাখা মাস্ট। শাকটি হজম সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এই শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়।

এছাড়াও, এই ফাইবার বিপাকীয় হার বাড়ায়। যা পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়।

নারী শাক লিভার ডিটক্সে সাহায্য করে। অর্থাৎ, এই শাক আপনার লিভার থেকে ময়লা অপসারণে সহায়ক। এই কলমি বা নারী শাকে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভারের এনজাইমগুলিকে সক্রিয় করে। যার কারণে আপনার লিভার সুস্থ থাকে।

কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফ্রি র‍্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট সমস্যা দূর করে শরীরকে রোদে পোড়া এবং বলিরেখা থেকে রক্ষা করে।

শুধু তাই নয়, নিয়মিত এটি সেবন করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। এছাড়াও, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও খুবই উপকারী।

শর্তত্যাগ: শুধুমাত্র আপনাদের সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। আমরা এই লেখায় সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ তথ্য শেয়ার করেছি মাত্র। আপনি যদি কোথাও আপনার স্বাস্থ্য, জীবন ও বিজ্ঞানের যোগ সম্পর্কিত কিছু পড়েন তবে তা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।