বিয়ের জন্য 'রাইট টাইম' জেনে নিন...! কেরিয়ার, ভালোবাসা, ফ্যামিলি, ব্যালান্স রাখার আসল সূত্র বলে দিলেন বিশেষজ্ঞ

আজকের প্রজন্মের কাছে, বিয়ে কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সচেতন সিদ্ধান্ত। যদিও ২৫ বছর বয়সের পরে বিয়েকে একসময় "বিলম্বিত বিবাহ" হিসেবে বিবেচনা করা হত, আজকের দিনে অবশ্য এই মানসিকতাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে মিলেনিয়াল এবং GEN Z প্রজন্ম।

এই মুহূর্তে বরং 'কখন' বিয়ে করা উচিত তা নয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, 'কেন' এবং 'কাকে' বিয়ে করা উচিত। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মিলেনিয়াল এবং জেন জি উভয় প্রজন্মই তাঁদের পেশার প্রতি অত্যন্ত বেশি মনোযোগী।

তাঁদের জন্য, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং স্বাধীনতা যে কোনও সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল অনেক তরুণ-তরুণী প্রথমে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, তারপর জীবনসঙ্গী খুঁজতে শুরু করে। এই কারণেই অতীতের তুলনায় বিয়ের গড় বয়স ৪-৫ বছর বেড়ে গিয়েছে।

প্রেমের চেয়ে ব্যবহারিক চিন্তাভাবনা এখন জীবনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বের বিচারে অগ্রাধিকার পায়। যদিও একটা সময় পর্যন্ত প্রেম এবং পারিবারিক চাপ বিয়ের পিছনে চালিকা শক্তি ছিল, কিন্তু এখন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি করে স্থান করে নিচ্ছে।

মিলেনিয়ালরা বিবাহকে এমন একটি 'পার্টনারশিপ' হিসেবে দেখে থাকেন, যেখানে সম্পর্কের উভয় অংশীদারই সমান দায়িত্ব ভাগ করে নেন নিজেদের মধ্যে। Gen Z এক্ষেত্রে আরও এগিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার এবং মানসিক সামঞ্জস্য বা ব্যালান্স রাখা তাদের কাছে সম্পর্ক বা বিয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দ্য প্রিভিলেজ ইজ মাইনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও লারা মাহলার তাঁর পরামর্শে বলেন, "জেনারেশন জ এমন এক নতুন বিয়ের ফ্যাশন বেছে নিচ্ছেন যা তাঁদের ভাবনা চিন্তা ও ধ্যান ধারণার প্রতিবিম্ব।"

সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নুপুর ঢাকেফালকর তাঁর পরামর্শে বলেন, "বিয়ের জন্য সঠিক সময় হল যখন উভয় সঙ্গীর মধ্যে স্বচ্ছ আত্মবোধ তৈরি হয়, তাঁরা তাঁদের সঙ্গীর কাছ থেকে কী চান তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে এবং একই সঙ্গে জীবন গড়ে তোলার জন্য উভয়ই প্রস্তুত বোধ করেন।"

সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিয়ের দৃষ্টিভঙ্গি: আজকের ইনস্টাগ্রাম এবং ডেটিং অ্যাপের যুগে, সম্পর্কগুলি আগের চেয়ে আরও বেশি খোলামেলা হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন বিয়ের আগে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সঙ্গীদের বুঝতে চায়।

'এক্ষুনি বিয়ে করতে হবে' এই মানসিকতা ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। বরং আজকের এই প্রজন্মের কাছে, বিয়ে তখনই সঠিক হবে যখন উভয় সঙ্গী মানসিকভাবে তার জন্য প্রস্তুত থাকে।

পারিবারিক চাপ বনাম ব্যক্তিগত পছন্দ - ভারতীয় সমাজে পারিবারিক চাপ এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, তরুণ প্রজন্ম এখন 'সময়ের আগে বিয়ে' করার চেয়ে 'সঠিক সময়ে বিয়ে' করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

বাবা-মায়েরও মনোভাব ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। তাঁরা এখন বুঝতে পারছেন যে বিয়ে কেবল বয়সের বিষয় নয়, বরং মানসিক প্রস্তুতিরও বিষয়। তাই তাঁদের বা পরিবারের দিক থেকে তরুণ প্রজন্মের উপর বিয়ের জন্য চাপ কমছে।

Gen Z নতুন সূত্র - এই সূত্র বলছে, ধীর কিন্তু টেকসই সম্পর্ক জরুরি। 'চিরকালের জন্য' বা 'ফরএভার' সম্পর্ক নয়, সম্পর্ক 'পরিপূর্ণ' করাতেই বিশ্বাস করছেন তাঁরা। বিয়ের আগে তাঁদের সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে আত্ম-আবিষ্কার, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং স্বচ্ছতাকে মূল্য দেয় এই প্রজন্ম। তাঁরা চায়, বিয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত না করে, বরং সমর্থন করুক।

তাহলে 'নিখুঁত সময়' বা বিয়ের 'সঠিক সময়' আসলে কোনটি? সত্যি কথা বলতে, বিয়ের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। প্রত্যেকের অগ্রাধিকার, কেরিয়ারের পথ এবং মানসিক প্রস্তুতি আলাদা।

এই সূত্র অনুযায়ী, বিয়ে তখনই আদর্শ হবে যখন আপনি নিজেকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে পারছেন, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত এবং আপনার সম্পর্ককে কেবল একজন 'সঙ্গীর সঙ্গলাভ' নয়, বরং একটি 'প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা' হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেন।

বিবাহ বয়স বা সমাজের দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং আপনার মানসিক শান্তি, স্বাধীনতা এবং ভালোবাসার বোধ থেকেই নির্ধারিত হয়। মিলেনিয়ালস এবং জেড প্রজন্ম আমাদের শেখাচ্ছে যে বিয়ের 'সঠিক সময়' তখন নয়, যখন পৃথিবী বলে, এটি সঠিক সময় - বরং তখন, যখন আপনি বলেন, 'আমি প্রস্তুত।'

ডিসক্লেইমার: এই খবরের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য নিউজ 18 বাংলা নিশ্চিত করে না। বিশেষত আপনার সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করাই আমাদের এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য। আমরা বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার জন্য এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত জ্ঞানের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের মত নেওয়া কাম্য।