রুই, কাতলা, পাবদা ছাড়ুন...! সুগারে 'সঞ্জীবনী' এই 'মাছ'! কন্ট্রোলে রাখে কোলেস্টেরল, ভাল রাখে হার্ট! উইকে দু'দিন ডায়েটে রাখলেই ম্যাজিক, কনফার্মড!

মাছ মাত্রেই বাঙালির প্রিয় খাবার! পাতে এক পিস মাছ না পড়লে দুপুরের ভাত হজম হয় না এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মাছ ভারতীয় আমিষভোজীদের কাছে একটি প্রধান খাদ্য, যা সুস্বাদু স্বাদ এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি দুইয়ের জন্যই দুর্দান্ত।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই কারণেও বার বার মাছকে একটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে সুপারিশ করছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমনকি দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসায় ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে এই খাদ্য।

তবে, মাছের সুস্পষ্ট স্বাস্থ্য উপকারিতা সত্ত্বেও, কিছু মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রজাতি, তাদের তীব্র সুগন্ধ এবং স্বতন্ত্র স্বাদের কারণে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এমন কিছু মাছই কিন্তু সঠিক ভাবে ডায়েটে রাখতে রোগমুক্তি হতে পারে বহু ক্ষেত্রে।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা এনেছে বড় খবর। বলা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ধরণের মাছ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং লিভারের সমস্যার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে দুর্দান্ত কার্যকরভাবে লড়াই করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই মাছটি তার ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য মানুষের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এমনকি কেউ কেউ দাবি করেছেন যে এটি স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ উভয় দিক থেকেই ইলিশ, রুই কাতলা এবং পাশের মতো প্রিয় মাছগুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে কয়েক গুন।

বর্তমানে এই অসাধারণ মাছটির চাহিদা ক্রমবর্ধমান, কারণ এর দুর্দান্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা দেখে ডাক্তাররাও এটিকে বার বার সুপারিশ করছেন। তাই, পরের বার যখন আপনি বাজারে এটি দেখতে পাবেন, তখন এটি থলেতে ভরতে মোটেই দ্বিধা করবেন না।

বর্তমানে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের প্রকোপ ঘরে ঘরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই বিশেষ মাছের নিয়মিত ডায়েটে রাখা এই সমস্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মোকাবেলায় ম্যাজিকের মতো সহায়তা করতে পারে?

যে মাছটির কথা বলছি, তার নাম শুনলেই চমকে উঠবেন। এই বিশেষ ঔষধি গুণের মাছটি হল ভোলা ভেটকি। এটি রক্তচাপ কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং লিভারের সমস্যা দূর করতে অসম্ভব কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভোলা ভেটকি ডায়াবেটিস মোকাবেলায় কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।২০১৭-১৮ সালে শুরু হওয়া বেলদা কলেজ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা কলেজের অধ্যাপকদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ভোলা ভেটকি রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

বেলদা কলেজের পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক দাস, শ্রাবন্তী পাত্র, জয়শ্রী লাহা, সঞ্জয় দাস, সুপ্রিয়া ভৌমিক এবং সায়ন পাণ্ডা এই মাছটির উপর বিশেষ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন, আর তাতেই বেরিয়ে এসেছে আকর্ষণীয় ফলাফল।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী ১২৪ জনের মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ জনের ডায়াবেটিস ছিল, যেখানে নিয়মিত মিষ্টি জলের মাছ খাওয়া প্রায় ৩০% লোকের ডায়াবেটিস ছিল।

গবেষণায় আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ভোলা ভেটকি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, জয়েন্টে ব্যথা এবং এমনকি মাসিকের অস্বস্তির ঝুঁকি কমায়। ইঁদুরের উপর একটি গবেষণা আরও নিশ্চিত করেছে যে ভোলা ভেটকি রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে অদূর ভবিষ্যতে, এই মাছটি তার স্বাস্থ্যগত উপকারিতার কারণে ক্যাপসুল আকারেও পাওয়া যেতে পারে। অধ্যাপক শ্রাবন্তী পাত্রের এই যুগান্তকারী গবেষণাটি পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কংগ্রেস ২০২৩-এ সম্মানিত হয়েছে।

পুষ্টির দিক থেকে, ভোলা ভেটকি অন্যান্য অনেক মাছের জাতকে ছাড়িয়ে যায়। এমনকি যদি এর গন্ধ আপনার অপছন্দ হয়, তবুও এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতার জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার বা দুবার এটি আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করার কথা অবশ্যই ভাবুন।