উৎসস্থল ভারত মহাসাগর, ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর এক 'সাইক্লোন'! ১৫৫ কিমি বেগে...! দিল্লির জনসংখ্যার সমান মানুষের উপর আছড়ে পড়বে! স্কুল-অফিস সব বন্ধ

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন আলফ্রেড। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার। শক্তিশালী এই ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, যা জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। কখনও ভারতীয় মহাসাগরে, কখনও প্রশান্ত মহাসাগরে, আবার কখনও আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়গুলো জনপদের পর জনপদ ধ্বংস করে দেয়। বিশাল সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই ভয়ঙ্কর ঝড় কেবল বাতাসের গতিবেগেই ভয় ধরায় না, সঙ্গে নিয়ে আসে প্রবল বৃষ্টিপাত ও প্রাণঘাতী বন্যা।

বিশ্বের নানা দেশে প্রায় প্রতি বছরই ঘটে এই বিপর্যয়। কখনও আমেরিকার উপকূলে হারিকেন ক্যাটরিনা তাণ্ডব চালায়, কখনও বাংলাদেশের উপকূলে সিডরের মতো ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ভারত মহাসাগরেও নিয়মিত সৃষ্টি হয় বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। মানুষ আগেভাগে সতর্ক থাকলেও, প্রকৃতির রুদ্ররূপের সামনে প্রতিরোধের সব ব্যবস্থাই যেন হয়ে পড়ে অপ্রতুল।

এবার তেমনই এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়তে চলেছে আরেক দেশ। যেখানে জনসংখ্যা দিল্লির থেকেও কম, কিন্তু তবুও বিপদের মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। এবার সেখানে আছড়ে পড়তে চলেছে সাইক্লোন আলফ্রেড...

এবার বিপদ দেখা দিয়েছে দক্ষিণ গোলার্ধে। সাইক্লোনের কবলে পড়তে চলেছে একটি দেশ, যার জনসংখ্যা ভারতের রাজধানী দিল্লির তুলনায় সামান্য বেশি। প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে আসছে এক ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়, যার নাম সাইক্লোন আলফ্রেড। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভয়ঙ্কর শক্তি সঞ্চয় করে আঘাত হানতে পারে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতের থেকে বেশি দূরে নয় এই বিপদ! অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন যে ১৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ধ্বংসাত্মক ঝড় বয়ে যেতে পারে। বিশেষত, কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনের দিকে এই ঝড় দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। আগামী শুক্রবার ভোরে এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়? আবহাওয়া দফতরের মতে, সাইক্লোন আলফ্রেড একটি ক্যাটেগরি ২ স্তরের ঘূর্ণিঝড়। এর প্রভাবে— ✔ গাছপালা উপড়ে যেতে পারে ✔ বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ✔ নোঙর করা নৌকা সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে পারে।

কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার ডেভিড ক্রিসাফুলি বলেছেন, "যদি আপনাকে চলে যেতে বলা হয়, তবে দেরি না করে চলে যান।"প্রশাসন বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সাইক্লোনের কারণে কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূলবর্তী ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স জানিয়েছেন, অন্তত ১২২টি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ঝড়ের ভয়াবহতা আঁচ করে অনেক বাসিন্দাই আগেভাগে বাড়িঘর ছেড়ে সরে যাচ্ছেন। প্রশাসনও দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কাজ চালাচ্ছে। বালির বস্তার সংকট দেখা দিয়েছে, সুপারমার্কেটগুলোর তাক ফাঁকা হয়ে গেছে, মানুষ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করতে ব্যস্ত। পর্যটন শহর গোল্ড কোস্টের থিম পার্কগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, বাতিল হয়েছে *WPGA চ্যাম্পিয়নশিপ প্রোগ্রাম*, এমনকি ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগের মরসুমের উদ্বোধনী ম্যাচও স্থগিত করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা ২.৬৭ কোটি, যা দিল্লির জনসংখ্যার তুলনায় সামান্য বেশি। কিন্তু ছোট দেশ হওয়ায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় দেশটির অবকাঠামো ও জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ সাইক্লোন মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে।