পলিথিন ব্যাগে টুকরো টুকরো অভিনেত্রীর দেহ! কিন্তু মাথা খুঁজে পাওয়া গেল না আজও! সত্যিটা জানলে হাড় হিম হয়ে যাবে

অভিনেত্রীর দেহের টুকরো উদ্ধার হয়েছিল, কিন্তু আজও তাঁর মাথা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের ভয়াবহ সত্য জানলে আপনি হতবাক হয়ে যাবেন—এ যেন রক্ত হিম করা এক বাস্তব কাহিনি।

এলাকার এক আবর্জনাভর্তি ডাম্পইয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। হঠাৎই তাঁর নজরে আসে এক অদ্ভুত ভারী পলিথিন ব্যাগ। কাছে যেতেই তাঁর গা শিউরে ওঠে—ব্যাগের ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছিল মানুষের আঙুল!

সাহস সঞ্চয় করে তিনি ব্যাগ খুলতেই চমকে যান—ভেতরে পড়ে আছে এক নারীর বিচ্ছিন্ন হাত ও পা। আতঙ্কিত হয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন।

পুলিশ যখন জায়গাটি ঘিরে অনুসন্ধান শুরু করে, তখন আরও ব্যাগ উদ্ধার হয়—কোথাও অন্ত্র, কোথাও হাড়, কোথাও আবার অন্যান্য অঙ্গ। একই দিনে চেন্নাইয়ের আদিয়ার নদীর ধারে আরও কয়েকটি বস্তা থেকে মানবদেহের অংশ উদ্ধার হয়। পুরো শহর তখন তটস্থ—একই দিনে বিভিন্ন জায়গায় এক নারীর দেহের টুকরো পাওয়া যাচ্ছিল।

কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল—এই নারী কে? কারণ দেহের সঙ্গে ছিল না মাথা, ছিল না মুখমণ্ডল। শুধু কয়েকটি দেহাংশ এবং কিছু অলঙ্কার।

ডেপুটি কমিশনার মুত্থুস্বামীর নেতৃত্বে তিনটি দল তৈরি করা হয়। প্রায় ১১,৭০০ টন আবর্জনা ছেঁকে পুলিশ উদ্ধার করে দেহের বাকি অংশগুলো। দেহের ধড় ও কিছু অংশ মিললেও মাথা ও বাঁ হাত কোথাও পাওয়া যায়নি।

পুলিশ রাজ্যের সব থানায় নিখোঁজ মহিলাদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে, কিন্তু মিল পাওয়া যায়নি। অবশেষে এক আশার আলো দেখা যায়—দেহের ডান হাতে দুটি ট্যাটু ছিল: একটি শিব-পার্বতীর প্রতীক, আরেকটি ড্রাগন চিহ্ন। সেই সূত্রেই পুলিশ খোঁজ শুরু করে।

ঠিক সেই সময় তুতিকোরিন থানায় এক মহিলা অভিযোগ জানান—তাঁর মেয়ে সন্ধ্যা গত ২০–২৫ দিন ধরে নিখোঁজ। বয়স প্রায় ৩৮, থাকতেন চেন্নাইয়ের জাফরখানপেট এলাকায় স্বামী ও দুই সন্তানসহ। তাঁর স্বামীর নাম বালাকৃষ্ণন, যিনি দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র জগতে একজন সহকারী পরিচালক।

পুলিশ যখন সন্ধ্যার মাকে ডেকে দেহের টুকরোগুলো দেখায়, তিনি ভেঙে পড়েন। ট্যাটু ও জন্মদাগ দেখে মেয়েকে চিনে ফেলেন। পরবর্তী ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়—দেহটি সত্যিই অভিনেত্রী সন্ধ্যা-রই।

পুলিশ বালাকৃষ্ণনকে আটক করে। প্রথমে সে দাবি করে, ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা নাকি তাঁর বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন এবং আর ফেরেননি। কিন্তু জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সে। স্বীকার করে নেয়—২০ জানুয়ারির রাতে সে স্ত্রীকে হত্যা করে।

তার সন্দেহ ছিল, সন্ধ্যার অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এই বিষয় নিয়ে দম্পতির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। সেদিন রাতেও বচসা বাড়তে বাড়তে নিয়ন্ত্রণ হারায় বালাকৃষ্ণন, এবং রাগের মাথায় কুঠার দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে হত্যা করে।

এরপর সে স্ত্রীর দেহকে খণ্ড-বিখণ্ড করে বস্তায় ভরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফেলে দেয়। পুলিশ পরে তার বাড়ি থেকে রক্তের দাগ, পলিথিন ব্যাগ, এবং হত্যায় ব্যবহৃত কুঠার উদ্ধার করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সে রাতের অন্ধকারে বাইক করে দেহের বস্তা নিয়ে যাচ্ছে।

তদন্তে জানা যায়, বালাকৃষ্ণন ও সন্ধ্যার বিয়ে হয়েছিল ১৭ বছর আগে। দু’জনেই তামিল সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথমদিকে সবকিছু ভাল চললেও ধীরে ধীরে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

২০১০ সালে বালাকৃষ্ণন একটি সিনেমা বানান, যা একেবারে ব্যর্থ হয়। এরপর শুরু হয় অর্থকষ্ট, ঝগড়া, সন্দেহ। এক সময় সন্ধ্যা বাপের বাড়ি চলে যান, কিন্তু পরে কাজের খোঁজে ফের চেন্নাইয়ে ফিরে আসেন।

স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে আনেন, কিন্তু সন্দেহের আগুন তখনও নেভেনি। ক্রমে সেই সন্দেহ পরিণত হয় রাগে, আর রাগ থেকে রক্তপাত। যখন সন্ধ্যা বাড়ি ছাড়তে চান, বালাকৃষ্ণন তাঁকে গলায় কুঠার চালিয়ে খুন করেন।

হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে, তবুও সন্ধ্যার মাথা ও বাঁ হাত আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ শহরের বর্জ্যভূমি ও নদীর ধারে মাসের পর মাস খোঁজ চালিয়েছে, কিন্তু হাজার টন আবর্জনার মধ্যে হারিয়ে গেছে সেই প্রমাণ।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আজও চেন্নাইবাসীর মনে গেঁথে আছে—এক স্বামীর অবিশ্বাস, এক অভিনেত্রীর নৃশংস পরিণতি, আর এক শহরের বুক কাঁপানো ভয়ানক সত্য হিসেবে।