Year Ender 2023: একবছরে ৮টি ব্যাঙ্কের উপর নেমেছে RBI-এর লাইসেন্স বাতিলের খাঁড়া; কেন এমন পরিস্থিতি, জানুন বিস্তারিত

২০২৩ আর্থিকবর্ষে বেশ কিছু সমবায় ব্যাঙ্ক ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রোষের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যেই আটটি সমবায় ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। হয়েছে আর্থিক জরিমানাও।

গ্রামীণ ও আধা-গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) দুর্নীতিগ্রস্ত সমবায় ব্যাঙ্কগুলির উপর চাপ তৈরি করছে। কেমন হতে পারে শাস্তি—

লাইসেন্স বাতিলকরণ—২০২৩ আর্থিক বছরে RBI যে ব্যাঙ্কগুলির অনুমোদন বাতিল করেছিল, তার মধ্যে রয়েছে মুধল সমবায় ব্যাঙ্ক, মিল্লাথ সমবায় ব্যাঙ্ক, শ্রী আনন্দ সমবায় ব্যাঙ্ক, রূপী সমবায় ব্যাঙ্ক, ডেকান আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, লক্ষ্মী কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, সেবা বিকাশ সমবায় ব্যাঙ্ক এবং বাবাজি ডেট মহিলা আরবান ব্যাঙ্ক।

অপর্যাপ্ত পুঁজি থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে না চলা-সহ একাধিক অভিযোগ ছিল এদের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ১২টি ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করে। ২০২১ সালে, RBI তিনটি ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করেছিল। ২০২০ সালে, দু’টি সমবায় ব্যাঙ্ককে বন্ধ হয়েছিল।

আর্থিক জরিমানা—RBI পঞ্চাশ হাজার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা আরোপ করেছে। বিভিন্ন আইন উল্লঙ্ঘনের শাস্তি স্বরূপ। সাধারণত, একটি সমবায় ব্যাঙ্ককে ঝাঁপ বন্ধ করার কথা বলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক একাধিক বার জরিমানা করে সতর্ক করে।

লাইসেন্স বাতিলের পর কী হতে পারে—কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক একবার অনুমতি প্রত্যাহার করলে, ঘোষিত তারিখ থেকে সমবায় ব্যাঙ্ককে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়াও শুরু করতে হবে। ৫ লক্ষ টাকার নিচে ব্যাঙ্ক ডিপোজিট বিমা কভারের আওতায় থাকে।

একই সঙ্গে, ব্যাঙ্ক তার বিশদ বিবরণ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য রেজিস্ট্রারকে জানাবে। এই রেজিস্ট্রারই প্রশাসক বা লিকুইডেটর নিয়োগ করবেন।

কিন্তু কেন এত বড় পদক্ষেপ করছে RBI—সমবায় ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে RBI ও রাজ্য সরকারের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ থাকে। কে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়ে RBI এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। সমবায় ব্যাঙ্কিং শিল্পের বর্তমান দুর্দশার এই পরিস্থিতি অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

এই দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের একটা প্রভাব যেমন পড়ছে, তেমনই গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতিও দেখা যাচ্ছে। সমবায় ব্যাঙ্কের অধিকাংশই গ্রাহকই মধ্যবিত্ত।তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সমবায় ব্যাঙ্কগুলির ভাল পারফরম্যান্সের উদাহরণও রয়েছে সারা দেশে৷

যেমন ধরা যাক সারস্বত সমবায় ব্যাঙ্ক। শতাব্দী প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট (AUM) রয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই পরিমাণ এমনকী কিছু স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্কের (SFB) থেকেও বেশি।২০২১ সালে শিবালিক মার্কেন্টাইল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক ভারতের প্রথম শহুরে সমবায় ব্যাঙ্ক হয়ে ওঠে (UCB)। এর পরে SFB-তে রূপান্তরিত হয়ে তা RBI থেকে একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স সংগ্রহ করেছে৷

আসলে ভারতের মতো স্বল্প অর্থায়নের দেশে সমবায় ব্যাঙ্কগুলির এখনও বিশেষ করে গ্রামীণ এবং আধা-গ্রামীণ এলাকায় বড় ভূমিকা পালন করে।সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে অপারেশন এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলিতে অগ্রসর হতে সাহায্য করার জন্য আরও মানবিক সহায়তা পাঠাতে পারে। এমনই মনে করেন একাংশের বিশেষজ্ঞ।