Property Rights: কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে নিতে পারে সরকার? জানুন কী বলে ভারতীয় আইন

আজকাল দেশে রাস্তাঘাট, রেলপথ, বড় প্রকল্প এবং শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার জন্য প্রায়শই সরকারের অতিরিক্ত জমি প্রয়োজন হয়৷ ধরুন কোনও রাস্তা তৈরি করতে, বা রেলপথ সম্প্রসারণ করতে প্রয়োজন হতেই পারে অতিরিক্ত জমির৷ এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে ‘‘সরকার কি আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার জমি অধিগ্রহণ করতে পারে?’’ এই প্রশ্নের উত্তর কিছু ক্ষেত্রে হ্যাঁ। কিছু ক্ষেত্রে না৷

দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রয়োজনে প্রশাসন যাতে নাগরিকের স্বার্থ, প্রথাগত নীতি, নিয়ম মেনে জমি নিতে পারে, তার জন্য দেশের নির্দিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ আইন রয়েছে৷

ভূমি অধিগ্রহণ আইন কীভাবে প্রণীত হয়েছিল? ১৮৯৪ সালে ভারতে প্রথম ভূমি অধিগ্রহণ আইন প্রবর্তন করা হয়। সেই আইনটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল৷ পরে ২০১৩ সালে একটি নতুন আইন আনা হয় - ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পুনর্বাসনে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং স্বচ্ছতার অধিকার আইন (LARR আইন, ২০১৩)।

এই আইন বলে: ভূমি অধিগ্রহণে স্বচ্ছতা থাকবে। ভূমি মালিকদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণে জনসাধারণের সম্মতি গ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সরকারের কেন জমি অধিগ্রহণের অধিকার আছে? সংবিধানের ৩০০-ক অনুচ্ছেদ অনুসারে, সরকারের জনকল্যাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের অধিকার রয়েছে। জনকল্যাণ বলতে বোঝায়: নতুন রাস্তা, জলকল্যাণ প্রকল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিল্প কেন্দ্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেখানে সরকার জনগণের জন্য উপকারী কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের সম্মতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ভূমি অধিগ্রহণের সময় কি জনসাধারণের সম্মতি প্রয়োজন? অর্থাৎ: জনস্বার্থ প্রকল্পের (রাস্তাঘাট, রেলপথ) জন্য: সম্মতি ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে তবে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি কোম্পানি, অর্থাৎ বেসরকারি খাতের প্রকল্পের জন্য: ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কমপক্ষে ৭০% জমির মালিকের লিখিত সম্মতি নিতে হবে। ভূমি মালিকদের অধিকার রক্ষার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম।

সুপ্রিম কোর্ট প্রায়শই ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করেছে। বিশেষ করে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সরকার কর্তৃক জমি অধিগ্রহণ সংবিধানের লঙ্ঘন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অনেক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হল: সিঙ্গুর মামলা (পশ্চিমবঙ্গ): সুপ্রিম কোর্ট টাটা মোটরসের জন্য জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং কৃষকদের কাছে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে (উত্তরপ্রদেশ): কম ক্ষতিপূরণ, কৃষকদের বিক্ষোভ, বেসরকারি নির্মাতাদের জমি বরাদ্দ বিতর্ক। হরিয়ানা, রাজস্থান: শিল্প এলাকায় পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের অভাবের বিষয়গুলি আলোচনায় উঠে এসেছে।

যদি আপনি মনে করেন যে জমি অধিগ্রহণে আপনার সাথে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে এবং আপনি তা প্রত্যাখ্যান করতে চান: যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করুন। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করুন। জনসাধারণের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করুন। আপনি এই বিষয়গুলিতে আদালতে আবেদন করতে পারেন।

ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার অধিকার এবং বিকল্পগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ। ভূমি অধিগ্রহণ আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলি এই অধিকারগুলিকে সমর্থন করে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে সর্বদা পেশাদার আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।