কেন বন্ধ হয়ে গেল FIITJEE ? অভিযোগ, জবাবদিহির ধোঁয়াশার মাঝে সত্যিটা আসলে কী ?
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
FIITJEE Coaching Scam: এই প্রসঙ্গে আসা যেতেই পারে নয়ডার প্রিয়ার কথায়। নয়ডার সেক্টর ১৮-তে মা সুনীতা এবং বাবা রমেশের সঙ্গে থাকেন প্রিয়া। রমেশ এবং সুনিতা খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। রমেশ একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক এবং সুনীতা গৃহবধূ। তাঁদের দুজনেরই একই স্বপ্ন- মেয়ে প্রিয়াকে ইঞ্জিনিয়ার বানানো। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী প্রিয়াও দিনরাত পড়াশোনা করেন। তাঁর চোখ জুড়ে ছিল কেবল আইআইটির স্বপ্ন। রমেশ এবং সুনীতা শুনেছিল যে FIITJEE কোচিং সেন্টার সেই স্বপ্ন সার্থক করতে পারে।
advertisement
1/10

দেশের অন্যতম বিখ্যাত কোচিং প্রতিষ্ঠান, একেবারে প্রথম সারির। দেশের শীর্ষস্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের ভরসা। এ হেন FIITJEE-র দরজায় কেন তালা পড়ল, সে কথায় আসার আগে প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কেন না, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক!
advertisement
2/10
এই প্রসঙ্গে আসা যেতেই পারে নয়ডার প্রিয়ার কথায়। নয়ডার সেক্টর ১৮-তে মা সুনীতা এবং বাবা রমেশের সঙ্গে থাকেন প্রিয়া। রমেশ এবং সুনিতা খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। রমেশ একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক এবং সুনীতা গৃহবধূ। তাঁদের দুজনেরই একই স্বপ্ন- মেয়ে প্রিয়াকে ইঞ্জিনিয়ার বানানো। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী প্রিয়াও দিনরাত পড়াশোনা করেন। তাঁর চোখ জুড়ে ছিল কেবল আইআইটির স্বপ্ন। রমেশ এবং সুনীতা শুনেছিল যে FIITJEE কোচিং সেন্টার সেই স্বপ্ন সার্থক করতে পারে।
advertisement
3/10
কিন্তু সেখানে মেয়েকে ভর্তি করা সহজ ছিল না। ফি ছিল ৪ লক্ষ টাকা। রমেশ তাঁর পুরনো বাইক বিক্রি করে দেন, সুনীতা বাপের বাড়ি থেকে কিছু টাকা ধার নেন। FIITJEE-র নয়ডা সেন্টারে ভর্তি হন প্রিয়া। সকাল ৬টায় কোচিংয়ের জন্য বেরোতেন এবং রাত ১০টায় ফিরে আসতেন তিনি।
advertisement
4/10
কিন্তু নিয়তিতে অন্য কিছু লেখা ছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারির এক শীতল সকালে প্রিয়া যখন কোচিং সেন্টারে পৌঁছন, তখন গেটটি তালাবদ্ধ ছিল। আরও কিছু ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকরাও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন; সবার মুখে বিস্ময় আর ভয়ের ছাপ। 'কেন্দ্রটি বন্ধ,' একজন প্রহরী শুধু বলেন। আর কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। প্রিয়া তৎক্ষণাৎ বাবাকে ফোন করেন। রমেশ এবং সুনীতা সেখানে পৌঁছে যান, কিন্তু উত্তর দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। অফিস খালি ছিল, যেন সবাই রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছেন।
advertisement
5/10
রমেশ FIITJEE-র হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেছিলেন, কিন্তু সেটাও বন্ধ ছিল। কিছু অভিভাবক বলেন যে FIITJEE কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছে এবং ফি ফেরত পাওয়ার কোনও আশা নেই। কয়েকদিন পরেই খবর আসে যে, পরিচালক ডি কে গোয়েল এবং তাঁর স্ত্রীর বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অভিযান চালিয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে যে প্রিয়ার মতো হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর ফি ডি কে গোয়েল এবং তাঁর স্ত্রী ব্যক্তিগত সম্পত্তি, গয়না এবং অবৈধ খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
advertisement
6/10
প্রিয়া এখনও পড়াশোনা করছেন। রমেশ এবং সুনীতা মেয়েকে একটি ছোট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে- বিশ্বাসের কি কোনও মূল্য নেই? হাজার হাজার পরিবার এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। গোটা দেশের একটাই প্রশ্ন- এতগুলো FIITJEE কোচিং ইনস্টিটিউট রাতারাতি কীভাবে বন্ধ হয়ে গেল?
advertisement
7/10
FIITJEE হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ২০৬-২৫০ কোটি টাকা অঙ্কের ফি আদায় করেছে, যার মধ্যে ২০২৫-২৬ থেকে ২০২৮-২৯ পর্যন্ত অগ্রিম ফিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অর্থ কোচিং পরিচালনা বা কর্মীদের বেতন প্রদানের জন্য ব্যবহার করার পরিবর্তে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং অন্যান্য কোম্পানিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে FIITJEE কোনও পূর্ব নোটিস ছাড়াই দিল্লি-এনসিআর, গাজিয়াবাদ, মেরঠ, বারাণসী, ভোপাল এবং পটনার মতো বেশ কয়েকটি শহরে তাদের কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে প্রায় ১২,০০০-১৫,০০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইডি মালিক ডি কে গোয়েলের দিল্লি, নয়ডা এবং গুরুগ্রামের ৮-১০টি সম্পত্তিতে অভিযান চালায়। এই সময়, ১০ লক্ষ টাকা নগদ এবং ৪.৮৯ কোটি টাকার গয়না বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
advertisement
8/10
সংগৃহীত অর্থ ব্যক্তিগত এবং অননুমোদিত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, কর্মীদের বেতনও বকেয়া, ইডি তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে। FIITJEE-র প্রতিষ্ঠাতা বলছেন যে এই অর্থ তাঁর মা এবং নিজের অসুস্থতার জন্য জরুরি স্বাস্থ্যগত কারণে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি আরও দাবি করেছেন যে তাঁর সহযোগীরা ইডি কর্মকর্তাদের সমস্ত নগদ এবং গয়নার উৎস দেখিয়েছেন। গোয়েল তাঁর কোচিং ইনস্টিটিউটের পতনের জন্য শিক্ষাখাতের প্রতিযোগিতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলি তাঁর কর্মীদের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছে, যার ফলে সেগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিছু কেন্দ্রের কর্মীরা FIITJEE ছেড়ে তাঁদের নিজস্ব ইনস্টিটিউটও শুরু করেছে বলে দাবি তাঁর।
advertisement
9/10
তিনি আর্থিক সমস্যা এবং কর্মীদের বেতন বকেয়া থাকার জন্য FIITJEE এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাউন্টগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর ফলে, সারা দেশে দশটি FIITJEE কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ইডি-র ৩২টি কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার দাবি অস্বীকার করেন, নির্দিষ্ট করে না বলে সংখ্যাটি অনেক কম বলে দাবি করেন।
advertisement
10/10
তবে, একটি কেন্দ্রও যে উঠে যায়নি, কর্মীর অভাবে সাময়িক ভাবে বন্ধ, এ কথা তিনি জানিয়েছেন। ৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় ইনস্টিটিউট দাবি করেছে যে অনলাইন ক্লাস ৩-৬ সপ্তাহ ধরে চলবে, যার পরে অফলাইন ক্লাস আবার আগের মতোই শুরু হবে। জানুয়ারি পর্যন্ত এর প্রায় ৮০,০০০ শিক্ষার্থী ছিল, গোয়েলের মতে, এই সংখ্যা এখন ৫৫,০০০-৬০,০০০-এ নেমে এসেছে। একই সঙ্গে, তিনি দাবি করেন যে ইডি উল্লিখিত ২৫০ কোটি টাকার অঙ্কটাও ভুল! আদায় করা ফি অনেক কম ছিল, কারণ অনেক অভিভাবক টিউশন ফি একলপ্তে পরিশোধের পরিবর্তে কিস্তিতে পরিশোধ করা পছন্দ করেন, জানিয়েছেন গোয়েল।
বাংলা খবর/ছবি/ব্যবসা-বাণিজ্য/
কেন বন্ধ হয়ে গেল FIITJEE ? অভিযোগ, জবাবদিহির ধোঁয়াশার মাঝে সত্যিটা আসলে কী ?