খরচে নজরদারি ছাড়াও কোপ পড়ছে গাড়ি, সৌন্দর্যায়নের খরচে। বৈঠকে খরচ কমানোর লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঋণ ও কর্মীদের ডিএ বাবদ রাজ্যের ঘাড়ে চাপছে বিপুল বোঝা। সেই ধাক্কায় উন্নয়নের কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্যই এই উদ্যোগ।
পদ্ধতিটা পুরনো। ১৯৩০ সাল নাগাদ বিশ্বমন্দার সময়ের। সরকারি খরচ কমিয়ে বাজেট ঘাটতি ধরে রাখার পথ দেখিয়েছিলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেইনার্ড কেইনস। রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য ধরে রাখতে একই পথ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন।
advertisement
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্যের খরচ বেড়েছে ৷ এবারের বাজেট বেড়ে ৮০ হাজার কোটি ৷ ডিএ দিতে গেলে ৫ হাজার কোটি লাগবে ৷ সরকারি খরচে রাশ টানতে হবে ৷ ৪৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ দিতে হবে ৷ অপচয় বন্ধ করতেই হবে ৷ অপ্রয়োজনে টাকা খরচ বন্ধ করতে হবে ৷ চুলচেরা বিচার করেই টাকা খরচ হবে ৷ খরচ কমাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৷ টাকা বাঁচালে মানুষের কাজেই লাগবে ৷ বিমাতৃসুলভ মনোভাব কেন্দ্রের ৷ প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য ৷ সরকারি টাকায় বিলাসিতা নয় ৷’
নবান্নে সব দফতরের মন্ত্রী ও বিভাগীয় সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশিকা জারি করেছেন, তা হল-
১) যে কোন দফতরের যেকোনো বৈঠক বা সভা সরকারি অডিটোরিয়াম বা সভাঘরে করতে হবে, এক্ষেত্রে বেসরকারি কোন হোটেল বা জায়গা ভাড়া নেওয়া যাবে না।
২) বছরে ৫ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করা যাবে না কোন দফতর বা অফিসের সৌন্দর্যকরণের কাজে।
৩) যেকোন সরকারি সভার ক্ষেত্রে সভাস্থল সাজানোর জন্য অপেক্ষাকৃত কম খরচ করতে হবে।
৪) সরকারি অনুষ্ঠানে খাবার খরচ কমাতে হবে।
৫) সরকারি অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন খরচ কমাতে হবে তবে সরকারি অতিথি বা বিদেশি অতিথিদের ক্ষেত্রে সেটা বাড়তে পারে।।
৬) জরুরি প্রয়োজন বা পরিষেবা ছাড়া কোন দফতর নতুন কোন গাড়ি কিনতে পারবে না।
৭) সরকারি গাড়ির তেলের খরচ কমাতে হবে।
৮) একাধিক গাড়ি ব্যবহার নয়, মন্ত্রী-সচিবদের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
৯)এসি মেশিন বসানো ও বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উপর জোর।
১০) দিল্লি বা অন্য রাজ্যে কোন সরকরি আধিকারিকদের বা মন্ত্রীদের যাওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবে না।
১১) বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হচ্ছে।
১২) বিমানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেটেই সফর করতে হবে।
রাজস্ব বাবদ আয় বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচ। এই অবস্থায় আর্থিক ভারসাম্য ধরে রাখতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো ছাড়া পথ ছিল না। এই অর্থবর্ষ থেকেই রাজ্যের ঘাড়ে চাপছে বাড়তি বোঝা। ২০১৮-১৯ সালে সুদ বাবদ ৪০ হাজার কোটি দিতে হবে ৷ ২০১৯-২০ সালে সুদ বাবদ খরচ ছাড়াবে ৪৭, ৩৫০ কোটি টাকা ৷ বর্ধিত ডিএ-এর দিতে অতিরিক্ত ৫ হাজার কোটি টাকা ৷
আরও পড়ুন
বদলাল প্রাথমিক টেট-এ বসার নিয়ম, দেখে নিন আবেদনের নয়া যোগ্যতামান
খরচ কমাতে তৈরি হয়েছে দুটি কমিটি। সূত্রের খবর, বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় না থাকাতেও অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়ছিল। প্রকল্পের খরচও আয়ত্তে থাকছিল না। বৈঠকে এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিবকে। নতুন নির্দেশিকায় এই প্রবণতা বন্ধ হবে বলেও আশা।