পাভলভ হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাতে ভাল ঘুমিয়েছেন শুভব্রত মজুমদার ৷ হাসপাতালে স্বাভাবিক আচরণ করছেন তিনি ৷ রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে-র ঘটনার সঙ্গে শুভব্রত মজুমদারের ঘটনার কিছু মিল থাকলেও, পার্থ দে ও শুভব্রত একদমই আলাদা ব্যক্তিত্ব বলে দাবি চিকিৎসকেরা ৷ দু’জনের লক্ষণ একদম আলাদা বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা ৷
আজ থেকে শুভব্রতর সাইকোমেট্রিক টেস্ট শুরু হচ্ছে ৷ পরীক্ষার ফল আসবে কয়েকদিন পরে ৷ শুভব্রতর বাড়িতেও যাবেন চিকিৎসকরা ৷ বেহালার বাড়ির পরিস্থিতি দেখবেন৷ শুভব্রতর বাবার সঙ্গেও কথা বলা হবে ৷ চিকিৎসায় সহযোগিতা করছেন শুভব্রত বলে জানালেন পাভলভের চিকিৎসকরা ৷ তবে মায়ের মৃত্যু নিয়ে এখনই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না ৷ আস্থা অর্জনের পর মায়ের ব্যাপারে কথা বলবেন চিকিৎসকেরা ৷ থট ডিসঅর্ডারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷
advertisement
ধৃত শুভব্রতকে জেরা করে অনেক কিছুই জানতে পেরেছে পুলিশ ৷ শুভব্রতর বাড়িতে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর রাসায়নিক ৷ এই রাসায়নিক কোথা থেকে আসত ? কী বলে দোকান থেকে কিনতেন শুভব্রত ? এই সব প্রশ্নই এখন উঠছে ৷ প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সেই সমস্ত দোকানদারদেরও যাদের কাছ থেকে এই সমস্ত রাসায়ানিক কিনতেন শুভব্রত ৷ শুভব্রতর বাড়িতে কাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল ,তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ ৷
বাড়িতে দু’টি ফ্রিজার কেন ? মায়ের পর কি শুভব্রতর টার্গেট ছিলেন বাবা ?
সিনেমাকেও হার মানাবে শুভব্রতর কাহিনি ৷ প্রায় তিন বছর ধরে বাড়িতে মায়ের মৃতদেহ আগলে ধরে রেখেছিল সে ৷ বাড়িতে একটি ফ্রিজারে মায়ের দেহ রেখে দিয়েছিল ৷ কিন্তু কেন সে এমনটা করেছিল ? মায়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই ? নাকি এর পিছনে ছিল অন্য কোনও কারণ ? পুলিশের অনুমান, পেনশন তুলতেই মৃত মায়ের টিপ সই নিত শুভব্রত ৷ মৃত্যুর পরেও যাতে নিয়মিত মায়ের পেনশন পাওয়া যায়, তার জন্যই দেহ সংরক্ষণ করে ফ্রিজারে ঢুকিয়ে রেখেছিল সে ৷ এদিন মরা মাকে বাঁচাতে দেহ সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন ছেলে শুভব্রত মজুমদার। জেমস লং সরণির ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই সন্দেহ পুলিশের।
শুক্রবার দফায় দফায় জেরা করা হয় শুভব্রতকে। উত্তরে একাধিক অসঙ্গতি। অবশেষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য। বেহালার জেমস লং সরণির ঘটনায় গ্রেফতার শুভব্রত মজুমদার বারবার পুলিশের কাছে দাবি করেন, দেহ সংরক্ষণ গবেষণায় তাঁর মা বেঁচে উঠবেন। সে কাজই তিনি করছিলেন। স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত শুভব্রত, প্রাথমিক পরীক্ষার পর এটাই ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিকের বিভাগীয় প্রধান প্রদীপ সাহার দাবি ।
‘ আরে আপনি তো সেই লোক, যার একটা বড় গোঁফ ছিল’, কাকে এমন বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি জানেন?
কেন মায়ের দেহ সংরক্ষণ করেছিলেন ? কী ভাবে মায়ের টিপসই দিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতেন ? কোনও ব্যাঙ্ককর্মী কি আপনাকে এই টাকা তুলতে সাহায্য করতেন ? আপনি কী সত্যিই লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতেন ? বেহালার ঘটনায় গ্রেফতার শুভব্রতকে শুক্রবার জেরা করতে গিয়ে এসব প্রশ্নই করেছে পুলিশ। জবাবে একাধিক অসঙ্গতির মধ্যেও পুলিশের দাবি বারবার মাকে বাঁচিয়ে তোলার কথাই বলেছেন শুভব্রত। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আদালতে পেশের আগেই ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতে পাঠানো হয় তাঁকে।
মা বীণা মজুমদার মারা যাওয়ার পরেই লেদার টেকনোলজির ছাত্র শুভব্রত দেহ সংরক্ষণ নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। রুশ-সহ পাঁচটি বিদেশি ভাষা জানার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে চিন-জাপান থেকে মেডিক্যাল জার্নাল আনাতেন। ইন্টারনেটেও দীর্ঘ সময় কাটাতেন। বাবা গোপাল মজুমদারকেও বুঝিয়েছিলেন তাঁর গবেষণার সূত্রেই মা ফিরে আসবেন। এ সংক্রান্ত প্রচুর জার্নাল তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে। শুভব্রত যে দেহ সংরক্ষণ গবেষণা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তা এদিন টের পেয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রায় তিন ঘণ্টার কথায় চিকিৎসকদের তিনি জানিয়েছেন, মা ফিরে আসবেন। তবে সঙ্গে আসবে প্রলয়। হয়তো আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ। মায়ের সঙ্গে পৃথিবীকে বাঁচানোও তাঁর কাজ।
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির বিভাগীয় প্রধান প্রদীপ সাহার দাবি খুব ঠান্ডা মাথায় তাঁদের এই কথা জানিয়েছেন শুভব্রত। জেমস লং সরণির এই বাসিন্দা দাবি করেছেন, রাশিয়ান ইনক্রিপশন আর জার্মান কাউন্সিলরের রিপোর্টের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। সঙ্গে এমন দু’টি শব্দ শুভব্রত ব্যবহার করেছেন, যা বেশ নতুন ঠেকেছে চিকিৎসকদের কাছে। জেমস লং সরণির ঘটনায় নতুন তথ্য পেতে এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বীণা মজুমদারের স্বামী গোপাল মজুমদারকেও। সব মিলিয়ে এখনও রহস্যে জমজমাট জেমস লং সরণির মৃতদেহ সংরক্ষণ কাণ্ড ৷