ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি মানেই আবেগ, গর্ব আর ইতিহাসের পাতায় নতুন কিছুর সংযোজন। ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সেইরকমই এক স্মরণীয় দিন, যেদিন ইস্টবেঙ্গল ৪-০ গোলে মোহনবাগানকে পরাজিত করে ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নেয়। এই ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার ডু ডং হিউং। ১৯৭৫ সালের আইএফএ শিল্ডে ৫-০ গোলের জয়ের পর ফের একবার ডার্বিতে বড় ব্যবধানে জয়, আর সেই জয়ের কেন্দ্রে ছিলেন মাত্র ২২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
advertisement
ডু ডং ২০১৫ সালের ২৭ জুন ইস্টবেঙ্গলে এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের কোচিংয়ে তিনি কলকাতা লিগে দুর্দান্ত শুরু করেন। লিগের মাত্র ১০টি ম্যাচে তিনি ১২টি গোল করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ডার্বিতে তাঁর করা ২টি গোল। বিশেষ করে তাঁর দুটি অসাধারণ ফ্রি কিক আজও লাল-হলুদ সমর্থকদের স্মৃতিতে অমলিন। তাঁর পারফরম্যান্স শুধু স্কোরবোর্ডে নয়, মাঠের প্রতিটি জায়গায় তাঁর প্রভাব স্পষ্ট ছিল।
২০১৬ সালে ডু ডং আইলিগে অভিষেক করেন এবং সেখানে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ডার্বিতে একটি গোল করেন এবং অপর একটি গোল করানোর মাধ্যমে ম্যাচে বড় ভূমিকা রাখেন। তাঁর বল নিয়ন্ত্রণ, পাসিং দক্ষতা ও ফুটবল বুদ্ধিমত্তা ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগে প্রাণ এনে দিয়েছিল। সমর্থকরা তখন তাঁকে ‘ডার্বি স্পেশালিস্ট’ বলেও আখ্যা দেন।
তবে মাঠে যতটা আলো ছড়িয়েছেন, মরশুম শেষে তাঁর ভাগ্যে ততটাই হতাশা জমেছে। ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ ট্রেভর মরগ্যান তাঁর খেলায় সন্তুষ্ট ছিলেন না বলে তাঁকে দলে রাখেননি। সমর্থকদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, ক্লাব তাঁকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এক মরশুমে তাঁর প্রভাব এতটাই ছিল যে, সমর্থকদের হৃদয়ে তিনি আজও জায়গা ধরে রেখেছেন।
আরও পড়ুনঃ Vaibhav Suryavanshi: বৈভব সূর্যবংশীর আরও এক ধামাকা! ১৪ বছর বয়সে যা কল্পনাই করা যায় না
ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার পর ডু ডং মালয়েশিয়ার ক্লাব ইউআইটিএম-এ যোগ দেন এবং সেখানে এক মরশুম চমৎকার খেলেন। পরে তিনি কেলান্তান ও তেরেনগানু ক্লাবেও খেলেন, যদিও সেখানে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি। ২০১৯ সালে তিনি ফিরে যান নিজের দেশে এবং যোগ দেন দক্ষিণ কোরিয়ার ক্লাব জিওনগাম এফসিতে। ২০২২ সালে তিনি K4 লিগের ক্লাব জিনজু সিটিজেনে লোনে যান এবং পরে ২০২৩ সালের জুনে ফিরে আসেন জিওনগামে। বর্তমানে তিনি সেখানেই খেলছেন।
ডু ডং হিউং-এর লাল-হলুদ জার্সিতে সময়টা হয়তো খুব দীর্ঘ ছিল না, কিন্তু তাঁর প্রভাব ছিল অসামান্য। একটা মরশুমেই তিনি যেভাবে ডার্বিতে পারফর্ম করেছেন এবং সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে তাঁকে ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি কিংবদন্তিদের তালিকায় জায়গা করে দেয়।
