প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কো। হাকিমি, জিয়েচ, সাইসদের শক্তি, গতি আর হার না মানা মনোভাব। কাতারে মরক্কোর অস্ত্র কাউন্টার অ্যাটাক ফুটবল। নিজেদের ডিফেন্স আঁটোসাঁটো করে প্রতি আক্রমণে বিপক্ষ ডিফেন্সে হানা করো। ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও এই বেসিক প্ল্যানে নো চেঞ্জ। তবে মরক্কো শিবির জানে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে লড়াইটা অনেক কঠিন। স্পেন, পর্তুগাল থেকে ফরাসী আক্রমণভাগ অনেক শক্তিশালী। তাই এমবাপে, গ্রিজম্যান, ডেম্বেলে, জিরুদের আক্রমণ আটকাতে শুধু ডিফেন্স আটোসাঁটো করলেই চলবে না। ফ্রান্সের মাঝমাঠের দৌড় আর ক্রস নিজেদের বক্সের আগেই থামাতে হবে। এমনকী, একমাত্র এমবাপেকে আটকানোর প্ল্যান করলে চলবে না। কারণ, এমবাপে আটকে গেলে গ্রিজম্যান, ডেম্বেলে অনেক ফাঁকা জায়গা পেয়ে যাবে। তাই ম্যান মার্কিং নয়, ফ্রান্সের শক্তিশালী মাঝমাঠকে আটকাতে পালা করে জোনাল মার্কিং করতে হবে।
advertisement
মরক্কো শিবিরে সবথেকে বড় স্বস্তি চলতি বিশ্বকাপে কোনও বিপক্ষ টিম একবারও গোল করতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত ৫ ম্যাচে একবারই গোল খেয়েছে মরক্কো ডিফেন্ড। সেটা কানাডা ম্যাচে আত্মঘাতী গোল। ইতিমধ্যেই অতীতের ইতালি-জার্মানির ডিফেন্সের সঙ্গে মরক্কোর এই ডিফেন্সের সঙ্গে তুলনা শুরু হচ্ছে। ইতিহাসের আরও একধাপ সামনে দাঁড়িয়ে মরক্কোর কোচ, দল কিন্তু সাজাচ্ছেন ৪-৩-৩ ছকে। বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসের দৌড়ে থাকা ইয়াসিন বুনোউ মরক্কোর গোলের নীচে চিনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- ফরাসি রক্তের স্বাদ পেতে মরিয়া মরক্কোর সিংহরা! ম্যাচ নয়, যুদ্ধ বলছেন কোচ ওয়ালিদ
হাকিমি, ইয়ামিক, সাইস, আতিয়াত আল্লাহদের ডিফেন্স মাছি গলতে দিতেও রাজি নয়। মাঝমাঠের দায়িত্বে ওউনাহি, আম্রবত, আমাল্লাহ-রা থাকছেন। আক্রমণে দুই প্রান্তে জিয়েচ, বুফল। একটু এগিয়ে নেসেরি। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মরক্কো কিন্তু ফ্লুকে জিতছে না। অনেক পরিণত দলটি। নিজেদের প্রমাণ করতে প্রতি ম্যাচেই নিজেদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন ওয়ালিদের ছেলেরা। পরিশ্রম-পরিকল্পনা-অধ্যাবসায় মিলে তৈরি এই টিম মরক্কো। যদিও পরিসংখ্যানের খাতা বলছে এই লড়াই একতরফা।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১১ বার লড়াইয়ে জয় পেয়েছে মাত্র একবার। ৭ বার জিতেছে ফ্রান্স। ৩ বার ড্র। জয়টা এসেছিল ১৯৬৩ সালে প্রথম সাক্ষাতে। আর শেষ লড়াই ২০০৭ সালে ড্র করেছিল মরক্কো। তবে মরক্কো ফুটবল পাল্টেছে ২০১৪ সালের পর থেকে। মরক্কো ফুটবল ফেডারেশনের “bring back talents belonging to the soil” পরিকল্পনাতে। রয়্যাল মরক্কান ফুটবল ফেডারেশন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি রেখেছে প্রতিভা চিহ্নিত করার জন্য। বিদেশে জন্ম দেশীয় বংশোদ্ভূত প্রতিভাবান কিশোরদের মরক্কোর হয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা খেলার জন্য। এইভাবে মিলছে বিভিন্ন দেশের ফুটবল ঐতিহ্য। বর্তমান কাতার বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মধ্যে ১৬ জন ফুটবলারই এইভাবে খুঁজে আনা প্রতিভা। তাই এমবাপে, মেসিদের সতীর্থ হাকিমিরা সহজে হাল ছাড়তে নারাজ।