#মুম্বই: দেওয়াল লিখন হয়তো অনেক আগেই পড়তে পেরেছিলেন তিনি। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আজ পর্যন্ত যে ইতিহাস রচিত হয়নি, সেটা রচনা করার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ ২৯ বছর পর প্রথমবার রামধনুর দেশ থেকে টেস্ট সিরিজ জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। সফল হলে হয়তো যোগ্য জবাব দিতে পারতেন। বলার প্ল্যাটফর্ম থাকত। তারপরেও যদি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতেন নায়কের মর্যাদা পেতেন।
advertisement
কিন্তু সেটা হয়নি। ফাইনাল ফ্রন্টিয়ারের প্রোটিয়াদের হারাতে পারেনি ভারত। বিরাট জানতেন তিনি আগেই বড় পাঙ্গা নিয়ে নিয়েছেন। সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব ছাড়া বা না ছাড়া নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। বোর্ডের তরফে তাকে কি বলা হয়েছিল, প্রত্যুত্তরে তিনি কি বলেছিলেন, এসবই শেষ কয়েক মাস বিভিন্ন মিডিয়ায় বড় বড় করে ছাপা হয়েছে। প্রচুর নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়েছে। মোদ্দাকথা বিসিসিআইয়ের সঙ্গে লেগে অতীতেও কোনও অধিনায়ক সুবিধা করতে পারেননি। বিরাট কোহলিও পারবেন না, জানা ছিল।
আরও পড়ুন - Indian Team New Captain: বিরাটের ইস্তফার পর টেস্ট ক্রিকেটের নতুন অধিনায়ক কবে
গত ডিসেম্বরে বিরাটকে সরিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিত শর্মাকে পুরোপুরি অধিনায়ক করে দেওয়া কিছুটা ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল তো বটেই। স্পষ্ট বিরাটকে চাপে রাখার প্লাটফর্ম তৈরি করা ছিল বোর্ডের। পরিসংখ্যানের বিচারে বিরাট কোহলি ৬৮ টি টেস্ট ম্যাচের অধিনায়ক থেকে ৪০ টি জিতেছেন। গড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ। হিসেবে শুধুমাত্র কিংবদন্তি স্টিভ ওয়া এবং রিকি পন্টিং এর পেছনে তিনি। ২৫ টির বেশি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া কোন অধিনায়কের এর থেকে ভাল গড় নেই।
বিরাটের অধীনে বিদেশের মাঠে টিম ইন্ডিয়া ১৬ টি টেস্ট জিতেছে, যা ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে মাপতে গেলে শুধুমাত্র পরিসংখ্যান ঘাটাঘাটি করলে হবে না। মাইন্ড গেম থেকে শুরু করে বিপক্ষকে স্লেজিং করা, আক্রমনাত্মক বডি ল্যাঙ্গুয়েজ- এমন কোনো রাস্তা নেই, যা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেননি বিদায়ী ভারতীয় অধিনায়ক।
শামি, বুমরাহ, সিরাজ যখন উইকেট পেয়েছেন, বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মুখের কাছে গিয়ে সেলিব্রেট করেছেন বিরাট। যে কারণে কখনো মাইকেল ভন, কখনো অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার সমালোচনা করতে ছাড়েননি। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার করেছেন বিরাট। ইট মারলে, পাটকেল খেতে হবে- এই বার্তা প্রতিপক্ষ শিবিরে তার থেকে ভাল ছড়িয়ে দিতে পারেননি কেউ।
পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে উঠে আসছে রোহিত শর্মার নাম। তিনি ফেভারিট। যদিও কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে চাইছেন ঋষভ পন্থকে। অধিনায়ক হিসেবে নন, এবার থেকে সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবেই থাকবেন বিরাট কোহলি। কিন্তু যখনই মাঠে নামবেন নিজেকে উজাড় করে দেবেন।
হয়তো অধিনায়কের চাপ না থাকায় ব্যাটিং আরো ভাল হবে। দু'বছর ধরে কাঙ্খিত শতরান হয়তো পেয়ে যাবেন। বিরাট কোহলি নামটার মহিমা অটুট থাকবে। ভারতীয় ক্যাপ্টেনের ব্যাটন তার হাতে থাকুক, বা নাই থাকুক। ক্যাপ্টেন কোহলির যাত্রা শেষ। কিং কোহলির যাত্রা ঢের বাকি।