জানা গিয়েছে, পোলবা থানার পাটনা গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মালকে গলা কেটে খুন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মার্চ। পুলিশ যখন খবর পেয়ে তদন্তে যায় কৃষ্ণ মালের স্ত্রী রীণা মাল পুলিশকে জানান, বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। তাকে আর ছেলেকে হাত বেঁধে তার স্বামীকে খুন করে গয়না, টাকা লুঠ করে পালায় ডাকাত দল। পোলবা থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। আর তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
advertisement
আরও পড়ুন: আসানসোলের অভিজাত হোটেলে হানা প্রশাসনের! কী হয়েছে ওই হোটেলে? বিজেপির দাবি, শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন
কৃষ্ণ মালের সঙ্গে তার স্ত্রী রীণা মালের বয়সের ফারাক ছিল প্রায় কুড়ি বছরের। তাদের ১২ বছরের এক ছেলে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, স্বামীর সঙ্গে সুখী ছিলেন না রীণা। বলাগড়ের জিকো পাল নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার।
জিকো বলাগড় থেকে পোলবায় যাওয়া আসা করত বাইক নিয়ে রীণার সঙ্গে দেখা করতে। সেই প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পাঁচজন দুষ্কৃতীকে সুপারি দেওয়া হয় কৃষ্ণকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন দুষ্কৃতীরা গভীর রাতে কৃষ্ণ মালের বাড়িতে ঢোকে। দরজা খুলে দেন রীণা।
ডাকাতি করতে এসে গৃহকর্তাকে খুন করে দিয়ে গেছে ডাকাত দল, এমনই পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পুলিশি তদন্তে উঠে আসে এক অবিশ্বাসের কাহিনী। রীণার জিকোর সঙ্গে প্রেম, তার স্বামীকে খুন, সাজানো ডাকাতি সব পরিকল্পনা জানতে পারে তদন্তকারীরা। এরপর ৪ এপ্রিল একে-একে অভিযুক্ত রীণা মাল, জিকো পাল, দীপঙ্কর পাল, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, লক্ষ্মীকান্ত চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, রাজা দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায় চৌধুরী বলেন, এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষী দেয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মৃতের ছেলের বয়ান। আইনজীবী আরও বলেন, ”আমি আদালতের কাছে বলেছিলাম, এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা। তাই সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হোক। আদালত সেটা মনে করেনি। চুঁচুড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক কৌস্তভ মুখোপাধ্যায় সাতজনকেই যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন। প্রত্যেকের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে দু বছর জেল।” মৃত কৃষ্ণ মালের ছেলে কুশল বলেন, ”মা যে অপরাধ করেছে তার জন্য ফাঁসি হওয়া দরকার ছিল।”