পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো এবার এ রাজ্যের কৃষকদের মধ্যেও বাড়ছে নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা৷ ফলে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলার পরিস্থিতিও দিল্লির মতো হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে পরিবেশবিদদের মনে৷
কলকাতার কাছেই বাড়ছে নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা
হুগলির একাধিক ব্লকে কৃষি জমিতে অবাধে চলছে নাড়া পোড়ানো। অর্থাৎ ধান কাটার পর মাটিতে থাকা ধানের গোড়া পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে চাষের জমিতে। দাউ দাউ করে জমিতে জ্বলছে আগুন। কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে আকাশ, বাতাস। বাতাসে মিশছে বিষ। উদাসীন প্রশাসন। হুগলি জেলার গ্রামীণ এলাকার বহু জায়গাতেই নিয়মিত দেখা যাচ্ছে এই ছবি৷
advertisement
আরও পড়ুন: আরও কোণঠাসা শান্তনু সেন! এবার সরাসরি বহিষ্কার, আরজি কর কাণ্ডে মুখ খুলেই বিপাকে প্রাক্তন সাংসদ?
হুগলির তারকেশ্বর, হরিপাল, সিঙ্গুর, ধনিয়াখালি জাঙ্গিপাড়া সহ একাধিক ব্লকে কৃষি জমিতে দিন রাত দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে আকাশ, বাতাস। বাতাসে তৈরি হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস। আর তা থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশবিদরা৷ তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে নাড়া পোড়ানো চলতে থাকলে বাংলার অবস্থাও দিল্লির মতো হতে দেরি লাগবে না৷
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই জমিতে অবাধে নাড়া পোড়াচ্ছেন কৃষকরা। বাতাসে দূষণ বাড়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে জেনেও উদাসীন ভাবে এই কাজ করছেন জেলার কৃষকদের একাংশ। শুধু হুগলি নয়, পরিবেশবিদদের দাবি, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও কৃষকদের মধ্যে নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে৷
কেন নাড়া পোড়ানোর পথে হাঁটছেন কৃষকরা?
গত আট দশ বছর ধরে ধীরে ধীরে জমিতে নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে কৃষকদের মধ্যে। কারণ হিসেবে উঠে আসছে কৃষি জমিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার। পাশাপাশি ধান কাটার পর অবশিষ্ট অংশ ফেলার জায়গার অভাব অথবা খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয়।
চাষের অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে এবং শ্রমিক সঙ্কট দূর করতে কৃষি জমিতে আধুনিক যন্ত্রের প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে। ধান চাষের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। ধান কাটা ও ঝাড়াইয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে হুগলি জেলা সহ এ রাজ্যের অন্যত্র। জমিতেই ধান ঝাড়ার পর তা সংগ্রহ করে গোলায় তুললেও খরকুটি এবং জমিতে থাকা ধানের গোড়া পরে থাকছে। তা অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট করার জন্য জমিতেই আগুনে লাগাচ্ছেন কৃষকরা। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা।
কী বলছেন পরিবেশবিদরা?
যদিও জমিতে পরে থাকা খড়কুটো বা নাড়াকে ব্যবহার করে জৈব সার তৈরি করা যায় বলে মত কৃষি বিশেষজ্ঞদের। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরকম কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনও। সরকারি ভাবে জেলায় কৃষি দফতরের উদ্যোগে নাড়া পোড়ানো বন্ধের জন্য এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিলি করা হলেও সেই সারা পড়েনি কৃষকদের মধ্যে। অতীতে নাড়া পোড়ানোর থেকে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তার পরেও ফেরেনি হুঁশ।লতাই আইন করে এই নাড়া পোড়ানো বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।