এ দেশের লাইফলাইন ট্রেন। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। এবার সেই ট্রেনের টিকিটেই বড়সড় জালিয়াতি। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারে হান দেন আরপিএফ, আইআরসিটিসি এবং ইস্টার্ন রেলের ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যরা। এই সব কাউন্টারগুলির একটিরও রেলের ছাড়পত্র নেই। রেলের এই আচমকা অভিযানে উদ্ধার হয় ১ কোটি ৯০ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৯৪ টাকার জাল টিকিট। গ্রেফতার করা হয় ৯ জনকে।
advertisement
প্রসঙ্গত, রেলের টিকিট এখন দু’ভাবে কাটা হয়--টিকিট কাউন্টার থেকে এবং অনলাইনে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২ ক্ষেত্রেই গত এক মাসে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। রেলের তরফে স্বীকার করা হয়েছে, এই টিকিট জালিয়াতি চক্রে যুক্ত রয়েছে রেলকর্মীদের একাংশও।
অভিযোগ, রেলের যে সব কর্মী টিকিট বুক করেন, তাঁদের একাংশ যাত্রীকে কিছু না জানিয়েই টিকিট বাতিল করে দিচ্ছেন। সেই বাতিল টিকিটই আবার অন্য একজনকে বিক্রি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, মালদহর এক দম্পতি চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান চালায় রেল। মালদহ ডিভিশন থেকে শোকজ করা হয়েছে রেলের চারজন বুকিং ক্লার্ককে । এ ছাড়া আসানসোল এবং হাওড়া ডিভিশন থেকে তিন জন করে এবং শিয়ালদা ডিভিশন থেকে পাঁচজনকে শোকজন করেছে রেল।
রেল সূত্রে খবর, মালদহে যে চারজন ধরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে দু'জন জাল টিকিট চক্রের মূল পাণ্ডা। তবে, শুধু কাউন্টার থেকে নয়, অনলাইনে টিকিটেও এখন রক্ষে নেই। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, আইআরসিটিটির সাইট থেকে বা তাদের অ্যাপ ব্যবহার করে একজন এক মাসে ৬ বার ৬টি করে টিকিট কাটতে পারেন। অর্থাৎ, মোট ৩৬টি।
অভিযোগ, এই নিয়মের ফাঁক গলেই আইআরসিটিসির এজেন্টদের একাংশ একাধিক সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রচুর টিকিট কেটে নেন। তারপর, যাত্রীদের কাছে সেই টিকিট বিক্রি করা হয়। তাঁদের কাছে পাঠানো হয় এসএমএস-ও। টিকিট কনফার্ম হলে এসএমএস-এ জানা যায় সিট নম্বর কত। এরপর ওই টিকিট আবার বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু, তখন আর যাত্রীদের কাছে পাঠানো হয় না এসএমএস।
আইআরসিটিসির পরামর্শ, মোবাইল ফোনে তাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে, নিজের আইডি দিয়ে টিকিট কাটুন। কিন্তু, এ দেশে ক'জন আর অ্যাপে টিকিট কাটেন? বেশিরভাগ মানুষই তো কাউন্টার থেকেই টিকিট কাটেন। সেখানেও তো জালিয়াতি! এই ছবি কবে পাল্টাবে? কবে বন্ধ হবে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি? প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।