তমলুক বা তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির সঙ্গে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির সম্পত্তি নিয়ে রানী কৃষ্ণপ্রিয়ার ব্রিটিশদের লড়াই ব্রিটিশবিরোধী শক্তির ভিত পোঁতা হয় তমলুক রাজবাড়ির অন্দরে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তমলুকে তৎকালীন রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ রায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। তমলুকে ব্রিটিশ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সভা হয় সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায়। এই সভা ছিল অবিভক্ত তমলুক মহাকুমার প্রথম বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী সভা।
advertisement
১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে অবিভক্ত তমলুক মহকুমার লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনকারীদের বসবাসের জন্য রাজবাড়ির একাংশ ছেড়ে দেন। রাজবাড়ি থেকেই সত্যাগ্রহীরা লবণ আইন ভঙ্গের উদ্দেশ্যে নরঘাট গিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ ব্রিটিশ বাহিনী রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ রায়কে গ্রেফতার করে। রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের পুত্র ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায় লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি ১৬ এপ্রিল ১৯৩০ সালে গ্রেফতার বরণ করেন। এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণের অপর এক পুত্র হরেন্দ্রনারায়ণকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে বিচারে তাঁকে শহর ছাড়ার নির্দেশ দেয় ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর।
আরও পড়ুন : গত ৭ বছরে রক্ষা ১৪৪০ নবজাতকের প্রাণ! নবাবের শহরে সঞ্জীবনী সুধার ভান্ডার এই স্তনদুগ্ধের ব্যাঙ্ক!
১৯৩৮ সালে তৎকালীন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। ১১ এপ্রিল তিনি তমলুক শহরে এলেন। শহরে কংগ্রেসের সভা অনুষ্ঠিত হবে কিন্তু সভা করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তখনও এগিয়ে আসে তাম্রলিপ্ত বা তমলুক রাজপরিবার। সেই সময় কংগ্রেসের নেতাগণ শরণাপন্ন হয় বৃদ্ধ রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের। বৃদ্ধ রাজা রাজবাড়ির অন্দরে খোসরঙের মাঠের ফলন্ত আমবাগান কেটে সুভাষচন্দ্রের সভার আয়োজন করেন। ১৯৪২ সালের অগাস্ট আন্দোলনেও এই রাজ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেয়। রাজ পরিবারের সন্তান কুমারেন্দ্র নারায়ণ রায় এই আন্দোলনে অংশ নেয় ছাত্রাবস্থায়। ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে স্বদেশী বিপ্লবীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তমলুক রাজবাড়ি এক উল্লেখযোগ্য স্থান নিয়েছে।