বলা হয়, এটিই আদি দুর্গোৎসব! অতীতে বসন্তকাল থেকেই বছর শুরু হত, সেই সূত্রে চৈত্র নবরাত্রি বা বাসন্তী দুর্গাপূজা পেয়েছিল আদি শক্তি আরাধনার সম্মান। এছাড়া শরৎকালে দেবীর যে উপাসনা হয়, তাকে বলা হয় শারদ নবরাত্রি। বাঙালির কাছে তা শারদীয়া; অকালবোধন দুর্গোৎসব। পুরাণ মতে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন, সেই জন্য সেই সময়ে তাঁদের পূজার প্রচলন নেই। অযোধ্যার রাজপুত্র রাম শরৎকালে দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙিয়ে পূজা করেছিলেন, তাই সেই পূজা অকালবোধন নামে পরিচিত। অর্থাৎ আদি বোধনের সময় এই চৈত্র নবরাত্রি। দেশে যাঁরা নবরাত্রি উদযাপন করবেন, তাঁরা উৎসবের প্রথম দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে ঘটস্থাপন করে দেবীর বোধন করেন। বঙ্গে বোধন হয় ষষ্ঠী তিথিতে।
advertisement
শারদীয়া দুর্গাপূজার মতো এই উৎসবেরও নেপথ্যে রয়েছে দেবীর মহিষাসুর বধের কাহিনি। ব্রহ্মা বর দিয়েছিলেন যে মহিষাসুরের মৃত্যু হবে নারীর হাতে। দুর্দান্ত অসুরকে পর্যুদস্ত করতে অতঃপর দেবতাদের সম্মিলিত তেজ থেকে জন্ম নেন দশভুজা দুর্গা, দৈবী অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে সিংহপৃষ্ঠে সমরে অবতীর্ণ হন তিনি। একটানা ৯ দিনের যুদ্ধ শেষে দশমী তিথিতে তিনি বধ করেছিলেন অসুরকে, এই দিনটিতে তাই দেবীর উপাসনা হয় অপরাজিতা রূপে, অর্থাৎ যিনি যুদ্ধে কখনই পরাজিত হন না। অন্য দিকে, সর্বভারতীয় স্তরে একেক রাতে দেবীর একেক রূপের আরাধনা করা হয়। সেই রূপগুলি কী এবং তার তাৎপর্যই বা কী, দেখে নেওয়া যাক এক এক করে!
১. নবরাত্রির প্রথম রাতে উপাসনা করা হয় দেবী শৈলপুত্রীর। তিনি শৈল অর্থাৎ পর্বতের কন্যা এবং ভগবান শিবের সহধর্মিণী।
২. দ্বিতীয়া তিথিতে পূজিতা হন দেবী ব্রহ্মচারিণী। শিবকে পতিরূপে লাভ করার জন্য এই রূপে তপস্যা করেছিলেন পার্বতী, দেবীর এই রূপ মোক্ষদায়িকা।
৩. তৃতীয়া তিথি দেবী চন্দ্রঘণ্টার উদ্দেশে নিবেদিত, তিনি দান করেন শান্তি এবং সমৃদ্ধি।
৪. চতুর্থী তিথিতে পূজা হয় দেবী কুষ্মাণ্ডার, তিনিই সৃষ্টির উৎসস্বরূপা।
৫. পঞ্চমী তিথিতে আরাধনা হয় দেবী স্কন্দমাতার, এই রূপে মা তাঁর সন্তানদের রক্ষা করেন।
৬. ষষ্ঠী তিথিতে আরাধনা হয় দেবী কাত্যায়নীর, তিনি অসীম শক্তির প্রতীক।
৭. সপ্তমী তিথিতে উপাসনা করা হয় দেবী কালরাত্রির, এই দেবী কুপিতা হলেন গ্রাস করেন কালকেও!
৮. অষ্টমী তিথিতে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয় দেবী মহাগৌরীকে; এঁর কৃপায় বুদ্ধি, বীর্য, স্থৈর্য এবং সুখলাভ হয়।
৯. নবমী তিথিতে আরাধনা হয় দেবী সিদ্ধিদাত্রীর; তিনি আমাদের সর্ববিধ সাফল্যে পরিপূর্ণ করেন।