একা ডেরেক ও ব্রায়েন নয়, তাঁর সঙ্গী আরও চার তৃণমূল সাংসদ এবং দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী বিমানে থাকা দুশো জনেরও বেশি যাত্রীকে সেই একই ভয় গ্রাস করেছিল৷ নিজের জীবনের ভয়ঙ্করতম সেই তিরিশ মিনিটের অভিজ্ঞতাই এবার সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন তৃণমূল সাংসদ৷ ডেরেকের কথায়, এই ঘটনা তাঁর কাছে জীবনের অর্থই বদলে দিয়েছে৷
আরও পড়ুন: অনুব্রতকে থানায় তলব! তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় মামলা করল পুলিশ?
advertisement
গত ২১ মে দিল্লি থেকে শ্রীনগর যেতে গিয়ে মাঝআকাশে ভয়ঙ্কর দুর্যোগ এবং শিলাবৃষ্টির মধ্যে পড়ে ইন্ডিগো-র একটি বিমান৷ শিলাবৃষ্টি, বাজের কবলে পড়ে বিমানটির স্বয়ংক্রিয় একাধিক ব্যবস্থা খারাপ হতে থাকে৷ বিপজ্জনক ভাবে বিমানটি নীচে নামতে থাকে৷ কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দেন দুই বিমানচালক৷ সেই বিমানেই দিল্লি থেকে শ্রীনগর যাচ্ছিল তৃণমূল সাংসদদের প্রতিনিধি দল৷
নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে ডেরেক বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম, বাইরে যা চলছে তা স্বাভাবিক দুর্যোগ নয়৷ আমার দীর্ঘ বিমানযাত্রার অভিজ্ঞতায় কোনওদিন এরকম কিছুর মুখোমুখি হইনি আমি৷ বিপজ্জনক ভাবে বিমানটি ডানদিকে কাৎ হয়ে যায়৷ এর পর হু হু করে বিমানটি নীচের দিকে নামতে থাকে৷ প্রায় দশ মিনিট ধরে এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকে৷ বিমানের ভিতরে তখন চিৎকার আর আর্তনাদ চলছে৷’
ডেরেক বলেন, ‘সহযাত্রীদের সেই চিৎকার, আর্তনাদ, বিমানকর্মীদের চিৎকারে তখন উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল৷ হঠাৎই তখন আমার মনে হল, আমার যদি সত্যিই খারাপ কিছু হয়ে যায় তাহলে তো কয়েকমাস পরে আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েটাই আমি দেখতে পারব না৷ সেই সময় আমার মেয়ে, স্ত্রী, ভাই, ভাইঝি, বন্ধু সবার মুখ আমার মনে পড়ছিল৷ ভাবছিলাম একবারও তাঁদের শেষ বিদায়টুকু জানানোরও সুযোগ পাব না? ওই বিকেলের পর আমার সেই সমস্ত সম্পর্ক, বন্ধুত্বে দাঁড়ি পড়বে, সেই যন্ত্রণাও আমাকে গ্রাস করছিল৷ সেই সময় আমার রাজনীতি, সংসদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার কত ভক্ত রয়েছে সে সব কোনও কিছুই আমার মাথায় আসেনি৷ শুধু আমার প্রিয়জনদের কথা মনে পড়ছিল৷ যাঁদের নিয়ে আমার গোটা জগৎ৷’
জীবন মৃত্যুর এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ধীরে ধীরে দুর্যোগ কাটিয়ে বিমানটি কোনওক্রমে শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করে৷ ডেরেক জানিয়েছেন, সবাই নেমে গেলেও তিনি বিমানের ভিতরে বসেছিলেন৷ বিমান থেকে নামার আগে দুই পাইলটকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসেন তৃণমূল সাংসদ৷ তবে পাইলটদের কথা দিয়েছিলেন বলেই তাঁদের সঙ্গে কী কথোপকথন হয়েছিল, তা জানাননি ডেরেক৷
তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছেন, এর পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও সেই ঘটনার রেশ তিনি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি৷ সমাজমাধ্যমে তাঁর এই অভিজ্ঞতা ভাগ করার আগে নিজের ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গেও মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা শুনিয়ে হাল্কা হওয়ার চেষ্টা করেন তৃণমূল সাংসদ৷
ডেরেকের কথায়, দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী বিমানের ওই তিরিশ মিনিটের অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুন করে জীবনকে চিনতে শিখিয়েছে৷ তৃণমূল সাংসদের কথায়, ‘ওই বিমানযাত্রা আমাকে বদলে দিয়েছে, আমার জীবনদর্শন বদলে দিয়েছে৷ বুঝতে শিখিয়েছে জীবন আসলে একটা উপহার৷ জীবনের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আরও বেড়ে গিয়েছে৷’