সেটা ১৯৭১ সাল ৷ প্রতিবেশী দেশ তখন উত্তাল ৷ যুদ্ধ চলছে ভারত-পাকিস্তানের ৷ কোনওরকমে বিয়ের অনুষ্ঠান সেরেই যুদ্ধের পোশাক গায়ে তুলে নিয়েছিলেন সদ্য বিবাহিত তরুণ, সুন্দর সিং ৷ গুয়ার্ডস রেজিমেন্টের হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি ৷ ঘরে একা অমরা দেবী ৷ স্বামীর প্রতীক্ষায় ৷
কিন্তু আর ফিরলেন না সুন্দর ৷ তার বদলে ফুরল শুধু একটা খবর ৷ যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন সুন্দর সিং ৷ এমনকী তাঁর দেহটাও ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হয়নি ৷
advertisement
তারপর ৪৭ বছর ধরে শুধু একটাই লড়াই চালিয়েছেন অমরা দেবী ৷ একবার শুধু দেখতে চেয়েছিলেন স্বামীকে ৷ কিন্তু সুন্দর সিংয়ের একটা ছবিও মেলেনি এতদিন ৷ বিয়ের সময় উত্তরকাশীর একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এতটাই তাড়াহুড়োর মধ্যে তাঁদের বিয়েটা হয়েছিল যে একটা ছবিও তোলা সম্ভব হয়নি ৷ সে সময় গ্রামে-গঞ্জে ছবির এত চলও হয়নি ৷ এমনকি সেনাবাহিনীর কাছেও কোনও ছবি ছিল না সুন্দরের ৷
অমরা দেবী শুধু একটিবার স্বামীকে চোখের দেখা দেখতে চেয়েছিলেন ৷ যোগাযোগ করেছিলেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ৷ সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় ডিরেক্টরেট অব সোল্ডার ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডিপার্টমেন্টে ৷ সেখানেও সুন্দরের কোনও অফিসিয়াল ফোটোগ্রাফ পাওয়া যায়নি ৷ অনেক খোঁজাখুঁজির পর সুন্দরের সেই সময়ের কয়েকজন বন্ধুর খোঁজ পাওয়া যায় ৷ তাঁদের কাছ থেকে একটি গ্রুপ ফোটোগ্রাফ উদ্ধার হয় ৷
অবশেষে এত বছর পর স্বামীর একটি ছবি হাতে পেয়ে চোখে জল ভরে আসে অমরা দেবীর ৷ তিনি বলেন, ‘‘এতগুলো বছর পর তাঁকে দেখতে কেমন ছিল, সে কেমনভাবে কথা বলত সেটাও আর মনে পড়ে না আমার ৷ কিন্তু আমার কাছে তিনি সবসময় বেঁচে আছেন ৷ সদ্য বিবাহিতদের মতো যখন আমি স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম, তখনই স্বামীর মৃত্যুসংবাদ আমার কাছে এসে পৌঁছয় ৷ সেদিন থেকে আমি অর্ধমৃত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি ৷ কিন্তু সবসময় আমি তাঁকে শুধু একবার দেখতে চাইতাম ৷ এতদিনে তা সফল হল ৷ এটাই আমার জীবনের সেরা উপহার ৷’’