চেন্নাইয়ে মেট্রো প্রকল্পে কাজ করতে শালিমার স্টেশন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের এস ৭ কামরায় চেপে বসেছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুরের বাসিন্দা সুকান্ত হালদার৷ বছর তিরিশের ওই যুবক বরাতজোরে প্রাণে বেঁচেছেন৷ দুর্ঘটনার পর ট্রেনের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরা থেকে কোনওক্রমে বেরিয়ে এসে গাড়িতে করে বালাসোরে পৌঁছন সুকান্ত৷ সেখান থেকে কলকাতাগামী বাসে আজ ভোরে পৌঁছন বাবুঘাট৷ কলকাতায় ফিরেই নিউজ ১৮ বাংলার দফতরে এসে নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী৷
advertisement
আরও পড়ুন: করমণ্ডল দুর্ঘটনায় শনিবার সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩, আহত ৯০০-র বেশি, চলছে উদ্ধারকাজ
সুকান্তর কথায়, শালিমার থেকে ছেড়ে স্বাভাবিক গতিতেই ছুটছিল ট্রেন৷ কিন্তু খড়্গপুর পার করার বেশ কিছুক্ষণ পর সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ হঠাৎই তীব্র ঝাঁকুনিতে ওলটপালট হয়ে যায় কামরার ভিতরের সবকিছু। কী হয়েছে, প্রথমে বুঝে উঠতেই বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। সম্বিত ফিরতে বুঝতে পারেন, বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ট্রেন। ততক্ষণে কামরার ভিতরে সহযাত্রীদের আর্তনাদ ভেসে আসছে সুকান্তর কানে। রক্তে ভেেস যাচ্ছে চারপাশ। অন্ধকারের মধ্যে কীভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া কামরা থেকে বেরিয়ে আসবেন, তা ভাবতেই আরও কিছুক্ষণ সময় কেটে যায়। সুকান্ত জানিয়েছেন, প্রায় আধ ঘণ্টা পর কামরার ভিতর থেকে কোনওক্রমে বেরিয়ে আসেন তিনি। সুকান্তর নিজেরও কপালে, ঘাড়ে, পায়ে চোট লাগে৷ যদিও চারপাশের দৃশ্য দেখে নিজের শরীরের যন্ত্রণা যেন অনুভব করতে পারছিলেন না৷
বাইরে বেরিয়ে যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতেই পারছিলেন না সুকান্ত। দুমড়ে মুচড়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে একের পর এক কামরা৷ পাশের লাইনের মালগাড়ির উপরে উঠে গিয়েছে ট্রেনের সামনের অংশ৷
আরও পড়ুন: একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে তিনটি ট্রেন, বেজে চলেছে মোবাইল! কীভাবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, এখনও ধোঁয়াশা
শালিমার থেকে সুকান্তর সঙ্গেই ট্রেনে উঠেছিলেন তাঁর পরিচিত দু জন৷ বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের খোঁজ করেও পাননি ওই যুবক৷ এর পর রেল লাইন থেকে নেমে কিছুটা দূরে রাস্তায় আসেন সুকান্ত৷ সেখান থেকে একটি ছোট গাড়িতে বালাসোরে পৌঁছন৷ বালাসোরে গিয়ে কলকাতাগামী একটি বাস পান ওই যুবক৷ সুকান্তর কথায়, বাস চালক এবং কর্মীদের গোটা ঘটনার কথা খুলে বলেন তিনি৷ তাঁর কাছে কলকাতায় ফেরার বাস ভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না৷ সবশুনে অবশ্য সুকান্তকে কলকাতায় পৌঁছে দিতে রাজি হন বাসের চালক, কর্মীরা৷
শেষ পর্যন্ত বাসে করেই আজ ভোরে বাবুঘাটে এসে পৌঁছন সুকান্ত৷ একা সুকান্ত নন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের অনেক যাত্রীই ওড়িশা থেকে বাসে করে আজ ভোরে কলকাতায় পৌঁঁছেছেন৷ সুকান্তর কথায়, ‘কামরায় আমার পাশেই একটি পরিবার তিন মাসের একটি শিশুকে নিয়ে যাচ্ছিল৷ দুর্ঘটনার পর তাঁদেরও আর কোনও খোঁজ পেলাম না৷’