সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে শিরাজ আলি খানের নির্ধারিত শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ওই সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের শিকার হয়। এই ঘটনার পরই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বাংলাদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেন শিল্পী।
‘ওরা তাকে ছিঁড়ে খায়…’! বাংলাদেশে দীপু দাসকে হত্যার আগে শেষ মুহূর্তের ভয়াবহ ভিডিও প্রকাশ্যে!
advertisement
এই ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া অশান্তি। গত বছর শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক উগ্রপন্থী নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কোনও রকমে কলকাতায় ফিরতে পারলেও সেই যাত্রা যে ভয় আর আতঙ্কে ভরা ছিল, তা স্পষ্ট করে বলেছেন শিরাজ। তাঁর সঙ্গে থাকা তবলা শিল্পী এখনও ঢাকায় আটকে রয়েছেন এবং আগামী সপ্তাহের শুরুতে ফেরার চেষ্টা করছেন। আরও কয়েকজন সহশিল্পীও এখনও সেখানে রয়েছেন।
শিরাজ আলি খান বলেন, বাংলাদেশ ছাড়ার সময় বাড়তে থাকা ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণে তাঁকে নিজের ভারতীয় পরিচয় চেপে যেতে হয়। “পরিস্থিতি এমন ছিল যে, নিজের পরিচয় প্রকাশ করাটা নিরাপদ মনে হয়নি,” বলেন তিনি।
শিরাজ আলি খান কে?
কলকাতায় থাকলেও শিরাজের পারিবারিক শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত বাংলাদেশে। তিনি উস্তাদ ধ্যানেশ খানের পুত্র, কিংবদন্তি সরোদশিল্পী Ali Akbar Khan-এর নাতি এবং বাবা আলাউদ্দিন খানের প্রপৌত্র। বাবা আলাউদ্দিন খান বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা ছিলেন। শিরাজের কথায়, এই যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে হামলা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।
তিনি বলেন, “বছর কয়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমার প্রপিতামহের নামে একটি কলেজে হামলা হয়েছিল। কিন্তু ছায়ানটে ভাঙচুর আমাদের সংস্কৃতি ও যৌথ মূল্যবোধের উপর এক অকল্পনীয় আঘাত।”
পরিচয় লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানো
শিরাজ ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছন এবং ১৭ ডিসেম্বর বনানীতে একটি জ্যাজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯ ডিসেম্বর ছায়ানটে তাঁর ধ্রুপদি সংগীত পরিবেশনের কথা ছিল। বনানীর অনুষ্ঠানটি খুব ছোট পরিসরে হলেও আবেগঘন ছিল বলে জানান তিনি—সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২০ জনেরও কম দর্শক।
১৯ ডিসেম্বর সকালে ছায়ানটে হামলার খবর পান তিনি। “যে জায়গায় আমার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, সেই ভবনটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে—এই দৃশ্য বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ছবিগুলো দেখে গভীরভাবে বিচলিত হয়ে পড়ি,” বলেন শিরাজ।
ঢাকা ছাড়ার সময় একটি চেকপোস্টে তাঁকে থামিয়ে বিদেশি মুদ্রা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি ভারতীয় পরিচয় প্রকাশ করেননি। বরং মায়ের কাছ থেকে শেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন বিমানবন্দরে পৌঁছনো পর্যন্ত চালকের কাছে লুকিয়ে রাখা হয়।
“কখনও ভাবিনি, নিজের পরিচয় লুকিয়ে থাকতে হবে,” বলেন শিরাজ। তিনি জানান, তাঁর মা এখনও বাংলাদেশে রয়েছেন এবং কয়েকজন হিন্দু সহশিল্পীও সেখানে আটকে আছেন। নিরাপত্তার কারণে তাঁদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি। শিরাজ স্পষ্ট করে বলেন, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর বাংলাদেশে ফিরবেন না।
