তাঁর এক ডাকে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সাড়া দিত। তিনি ছিলেন পরাধীন ভারতে, গণআন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। ২ অক্টোবর এলেই সারা দেশ জুড়ে তাঁকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু, বাকি দিনগুলিতে? যে নীতি-আদর্শের কথা তিনি বলেছিলেন, যেভাবে অহিংসার কথা বলেছিলেন, তা কি আজ আর রাজনীতিতে দেখা যায়? আজ বারবার ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে তোষামোদের রাজনীতিরও। এ সবই তো গান্ধিজির আদর্শের উল্টো পথ। তিনি তো সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করতেন। চোখের বদলে চোখ খুবলে নিলে পৃথিবীটা যে অন্ধ হয়ে যাবে, এ মন্ত্র তো গান্ধিজিই শিখিয়েছেন। তাঁকে আমরা জাতির জনক বানিয়েছি, কিন্তু, তাঁর আদর্শ কি অনুসরণ করেছে জাতি? তিনি বেঁচে থাকাকালীনই তাঁর দল কংগ্রেস নতুন নতুন শিল্প গড়ে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নেয়। কংগ্রেসেরই বহু নেতা গান্ধিজির গ্রামভিত্তিক অর্থনীতির স্বপ্নকে অবাস্তব বলে ভেবেছেন। সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতিদিন বারবার এ দেশ গান্ধিজির দেখানো পথের প্রায় উলটো রাস্তায় হাঁটছে।
advertisement
গান্ধিজির জন্মের ১৫০ বছর দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হচ্ছে। কিন্তু, এ সব কি শুধুই লোক দেখানো উদযাপন নয়? অনেকে মনে করেন, গান্ধিজি এখন শুধুই যেন এক ব্র্যান্ড। মহাত্মার সেখানেই যেন মাহাত্ম্য। তিনি নোটে আছেন, আজও ভোটে আছেন। তিনি আছেন চশমায়-চরকায়। তিনি আছেন রাস্তা ও প্রকল্পের নামে, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে। এর বাইরে গান্ধিজির আদর্শের প্রতিফলন কোথায়?
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা বা বারাক ওবামা, সকলেই মহাত্মা গান্ধিতে আলোকিত হয়েছেন। কিন্তু, যে দেশের জন্য তিনি জীবন দিলেন, সেই দেশেই তিনি আজ যেন ব্রাত্য। তাঁর জন্মদিনে ছুটি আছে, সভা-সমিতিতে গুরুগম্ভীর আলোচনা আছে, কিন্তু, কাজের ক্ষেত্রে বারবার এ দেশ গান্ধিবাদকে বাদ দিয়ে চলেছে।