পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে বাথরুমে গিয়ে ফ্লাশ করার মতো জলও কোথাও কোথাও নেই বলে সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করছেন বেঙ্গালুরুবাসীদের কেউ কেউ৷ বড় বড় অনেক আবাসনেই নলকূপ ব্যবহার করেও জল তোলা সম্ভব হচ্ছে না৷ পরিস্থিতি কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, এ দিনই বেঙ্গালুরু শহরের জল সরবরাহ এবং নিকাশীর দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্তার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷
advertisement
বেঙ্গালুরু ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সিওয়ারেজ বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি রাম প্রসাত মনোহর জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরু শহরে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের বাস৷ গড়ে এক একজন মানুষের দৈনিক দেড়শো লিটার করে জল প্রয়োজন৷ ফলে দৈনিক বেঙ্গালুরু শহরে প্রায় ২০০ কোটি লিটার জলের প্রয়োজন৷ সেখানে বর্তমানে কাভেরি নদী থেকে দৈনিক ১৪৫ কোটি লিটার মতো জল মিলছে৷ কিন্তু বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণেই বেঙ্গালুরু শহরের ভূগর্ভস্থ জলস্তর একেবারে নেমে গিয়েছে৷ সরকারি, বেসরকারি গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক যে ৬৫ কোটি লিটার মতো জল মিলত, এখন তা আর পাওয়া যাচ্ছে না৷ এই পরিস্থিতিকে পুরোপুরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করে ওই সরকারি আধিকারিক সাধারণ মানুষের কাছে যেভাবে সম্ভব জলের অপচয় বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন৷ বর্ষা শুরু না হওয়া পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর এই জল সঙ্কট মেটার সম্ভাবনা কম বলেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ওই সরকারি কর্তা৷
আরও পড়ুন: ছোট বড় সবার প্রিয়, কিন্তু আঙুরও হতে পারে মৃত্যুর কারণ! জানুন কী কী ভয়
বেঙ্গালুরুর এই জলসঙ্কট শুরু হতেই তার সুযোগ নিতে শুরু করেছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী৷ এ বছরের শুরুতেও যেখানে এক ট্যাঙ্কার জলের দাম পড়়ত ১০০০ টাকা, তাই এখন বেড়ে ১৪০০ থেকে ২০০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে৷ যাঁদের এই জল কেনার ক্ষমতা আছে, তাঁরা কিনছেন৷ কিন্তু শহরের একটা বড় অংশের মানুষকে যথারীতি সরকারের পাঠানো ট্যাঙ্কারের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে৷ শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে জলের বালতি, বোতল হাতে দীর্ঘ লাইন৷ স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে প্রবীণ, জলের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে সবাইকেই৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্ণাটক সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তার মধ্যে অন্যতম হল জরুরি ভিত্তিতে শহরের বেশ কিছু জায়গায় গভীর নলকূপ তৈরি করা৷ কিন্তু সমস্যা হল, ইতিমধ্যেই যে সরকারি নলকূপগুলি রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ায় সেগুলি থেকেই প্রত্যাশিত পরিমাণে জল পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে নতুন করে নলকূপ খুঁড়ে কাজের কাজ কতটা হবে,সেই প্রশ্ন উঠছে৷ এর পাশাপাশি, বেঙ্গালুরু কাছাকাছি হোসকোট, রামানাগারার মতো শহরগুলি থেকে বড় বড় ট্যাঙ্কারে করে বেঙ্গালুরুতে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এ সবই অপ্রতুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে৷
তবে বেঙ্গালুরুর এই পরিণতির জন্য শুধুমাত্র প্রকৃতিকে দায়ী করতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিকাঠামোর তুলনায় অতিরিক্ত জনবসতি গড়ে ওঠা, বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মতো পরিকল্পনার অভাব, সরকারের শিল্প এবং কৃষি নিয়ে ভুল নীতির ফলেই আজ বেঙ্গালুরুকে ভুগতে হচ্ছে৷ সরকারি কর্তারাও স্বীকার করছেন, জলের জন্য বেঙ্গালুরু কাভেরী নদীর উপরে অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে৷ ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমতেই সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতে ভারতের অন্যান্য বড় শহরগুলিতেও যে এমন সঙ্কট দেখা দেবে না, তা কে বলতে পারে? ফলে বেঙ্গালুরুর অবস্থা থেকে শিক্ষা না নিলে যে অদূর ভবিষ্যতে সমূহ বিপদ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷