বুলগেরিয়ায় ১৯১১ সালে জন্ম বাবা ভাঙ্গার। নিজের সাইকিক ক্ষমতার জন্য খ্যাতির শিখরে উঠে গিয়েছিলেন তিনি। শৈশবে দৃষ্টিশক্তি হারালেও তাঁর মধ্যে ভবিষ্যৎ দর্শনের একটা অদ্ভুত ক্ষমতার জন্ম হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। আর বাবা ভাঙ্গার উল্লেখযোগ্য পূর্বাভাসগুলির মধ্যে রয়েছে ৯/১১-র হামলা, যুবরানি ডায়নার মৃত্যু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বারাক ওবামার নির্বাচন। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই বিশ্বাস করেছেন তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীকে। তবে এ নিয়ে অনেকেরই আবার মনে সংশয়ও রয়েছে। যাইহোক, আজকের প্রতিবেদনে তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে আলোচনা করে নেওয়া যাক।
advertisement
বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীর সম্পূর্ণ তালিকা:
বুলগেরিয়ার কিংবদন্তি মিস্টিক বাবা ভাঙ্গা নিজের ভবিষ্যদ্বাণীর জোরে সারা বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছেন। আসলে ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে, সেটা যেন অদ্ভুত ভাবে দেখতে পেতেন তিনি। আর তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণীতে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন ইতিহাসবিদ, গবেষক থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিক গুরুরাও। বিশ্ব রাজনীতির আমূল পরিবর্তন থেকে শুরু করে বড়সড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার – প্রায় সমস্ত বিষয়বস্তু নিয়েই ভবিষ্যদ্বাণী করতে দেখা গিয়েছে বাবা ভাঙ্গাকে। যা মানুষের মনে রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
অনেকেই বলেন যে, ভবিষ্যৎ দেখার তাঁর ক্ষমতা সত্যিই গ্রহণযোগ্য। কারণ নিখুঁত ভাবে ভবিষ্যতের বহু সঙ্কট, সামাজিক পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের পূর্বাভাস তিনি দিয়েছেন, যা মিলেও গিয়েছে। তাহলে দেখে নেওয়া যাক, বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীর তালিকা।
কুড়ি শতকের গোড়ার দিক (১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশক):
১৯৮০: কাস্ক সাবমেরিন দুর্ঘটনা – বাবা ভাঙ্গা পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, জলে চাপা পড়ে যাবে কাস্ক।
১৯৮৪: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির হত্যা – তাঁর মৃত্যুর সময়কাল এবং পোশাক আগে থেকেই দেখতে পেয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা।
১৯৮৯: আমেরিকায় আক্রমণ করছে স্টিল বার্ডস – যেটাকে ৯/১১-র হামলা হিসেবে দেখা হয়।
১৯৯৬: ১১ অগাস্ট নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা।
একুশ শতকের গোড়ার দিক:
২০০০: কাস্ক সাবমেরিন ধ্বংস হওয়ার ঘটনা ঘটে।
২০০১: ৯/১১-র হামলাটি হয়েছিল।
২০০৪: ভারত মহাসাগরে সুনামি। বিশাল মাপের সামুদ্রিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা।
২০০৮ – ২০১২: বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়েছিলেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন বারাক ওবামা।
২০২৫ থেকে ২০৩০-এর দশক:
২০২৫: ইউরোপে বড়সড় যুদ্ধ, ভূমিকম্প এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিকতার অবক্ষয়ের সূত্রপাত।
২০২৮: শুক্র গ্রহকে আরও এক্সপ্লোর করবে মানুষ, নতুন এনার্জির উৎসের আবিষ্কার, বিশ্ব থেকে দূর হবে ক্ষুধা।
২০৩৩: মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাবে, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
২০৪৩: ইউরোপে আর্থিক অগ্রগতি, প্রধানত ইসলামিক প্রবর্তনের আবির্ভাব।
২০৪৬: সিন্থেটিক অর্গ্যানের বিপুল উৎপাদন।
২০৫০ থেকে ২১০০-র দশক:
২০৬৬: একটি পরিবেশ ধ্বংসকারী অস্ত্র আবিষ্কার করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
২০৭৬: সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে কমিউনিজম। সামাজিক জাতি প্রথা ধসে পড়বে।
২০৮৪: পরিবেশ নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে শুরু করবে।
২০৮৮: একটি ভাইরাসের দাপটে দ্রুত থাবা বসাবে বার্ধক্য।
২০৯৭: ভাইরাস দূর হবে।
২১০০: পৃথিবীর অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে তাপ প্রদান করার জন্য কৃত্রিম সূর্য তৈরি করা হবে।
২১০০ থেকে ২২০০-র দশক:
২১১১: মানুষ আরও বেশি করে রোবট হয়ে উঠবে।
২১২৩: ছোট দেশগুলির মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকবে, সুপারপাওয়ার থাকবে না।
২১২৫: ডিপ স্পেস থেকে সিগন্যাল পাবে হাঙ্গেরি, বাবা ভাঙ্গার পুনরুত্থান ঘটবে।
২১৩০: বহির্জাগতিক প্রাণীর সহায়তায় গঠিত সমুদ্রতলের জগৎ, মানুষ এবং ভিনগ্রহীদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে উঠবে।
২১৫৪: পশুদের মধ্যে মানুষের মতোই আচরণ দেখা দেবে।
২১৬৭: নতুন বিশ্ব ধর্ম জনপ্রিয়তা লাভ করবে।
২১৭০: মারাত্মক খরা এবং সারা বিশ্ব জুড়ে মরুভূমি তৈরি হতে থাকবে।
২১৮৩: মঙ্গল গ্রহের উপনিবেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে; আর সার্বভৌমত্বের দাবি জানাবে।
২১৮৭: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দমিত হবে।
২১৯৫: জলের তলায় স্বতন্ত্র জীবজগৎ গড়ে উঠবে।
২১৯৬: ইউরোপীয় এবং এশীয় জনগোষ্ঠীর মিলনের ফলে ইউরো-এশীয় জাতি তৈরি হবে।
২২০১: সূর্য ঠান্ডা হবে। যার জেরে বড়সড় জলবায়ু পরিবর্তন আসবে।
২২২১: মানুষ বহির্জাগতিক প্রাণীদের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্যের মুখোমুখি হবে।
২২৫০ থেকে ২৩০০-র দশক:
২২৫৬: ইন্টারগ্যালাকটিক ভাইরাস পৃথিবীতে ফিরে আসবে।
২২৬২: একটি গ্রহাণুর থেকে বিপদের মুখে পড়বে মঙ্গল গ্রহ।
২২৭১: ভৌত ধ্রুবক পরিবর্তিত হবে, বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলিতে ব্যাঘাত ঘটবে।
২২৭৩: জেনেটিক মিশ্রণের মাধ্যমে আফ্রো-ইউরেশিয়ান জাতি তৈরি হবে।
২২৭৯: মানুষ কৃষ্ণগহ্বর এবং স্পেস ম্যাচটার বেন্ডিং থেকে শক্তি ব্যবহার করবে।
২২৮৮: টাইম ট্র্যাভেল আবিষ্কৃত হবে, মানুষ এবং ভিনগ্রহীদের মধ্যে যোগাযোগ হবে।
২২৯১: সূর্য আরও ঠান্ডা হবে। তবে এবার সূর্যকে গরম করার চেষ্টা করবে মানুষ।
২২৯৬: সৌর শিখার কারণে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহগুলি বিধ্বস্ত হবে।
২২৯৯: ইসলামিক স্টেট জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেবে ফ্রান্স।
২৩০২: বিচার ব্যবস্থার সংস্কার হবে। আর সার্বজনীন আইনের আবিষ্কার হবে।
২৩০৪: চন্দ্র নিয়ে আরও গভীর পড়াশোনা করবে মানুষ।
২৩৪০ থেকে ২৪০০-র দশক:
২৩৪১: মহাকাশের থেকে বিপদ ধেয়ে আসবে পৃথিবীর দিকে।
২৩৫৪: অপ্রত্যাশিত কারণে জলের ঘাটতি দেখা দেবে।
২৩৭১: বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
২৩৭৮: নতুন মানব জাতির উত্থান হবে।
২৪৮০: দুটি কৃত্রিম সূর্যের সংঘর্ষের কারণে পুরোপুরি ভাবে ব্ল্যাকআউট হতে চলেছে।
৩০০০-এর দশক:
৩০০৫: মঙ্গলে যুদ্ধ শুরু হবে। গ্রহের অক্ষের পরিবর্তন ঘটবে।
৩০১০: চন্দ্রের সঙ্গে গ্রহাণুর সংঘর্ষ হবে। যার ফলে ভয়ঙ্কর ধুলোর মেঘ সৃষ্টি হবে।
৩৭০০ থেকে ৩৮০০-র দশক:
৩৭৯৭: মানুষ পৃথিবী ছেড়ে যেতে বাধ্য হবে; নতুন সৌরজগতে উপনিবেশ স্থাপন করবে।
৩৮০৩: জনবসতিহীন উপনিবেশ তৈরি হবে; জেনেটিক মিউটেশন ঘটবে।
৩৮০৫: সম্পদ যুদ্ধের কারণে জনসংখ্যা ধ্বংসের মুখে পড়বে।
৩৮১৫: যুদ্ধকালীন সময় শেষ হবে; মানুষ আবার উপজাতিবাদে ফিরে আসবে।
৩৮৫৪: সভ্যতা থমকে যাবে; মানুষ ট্রাইবাল সমাজে বসবাস করবে।
৩৮৭১ – ৩৮৭৪: নতুন ধর্ম নৈতিকতা এবং আচার-অনুষ্ঠানকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে; বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।
৩৮৭৮: গির্জায় দীর্ঘদিন ধরে ভুলে যাওয়া বৈজ্ঞানিক নীতিগুলির পাঠ দেওয়া হবে।
৪৩০০ থেকে ৪৫০০-র দশক:
৪৩০২: শহরগুলি পুনরুজ্জীবিত হবে; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে।
৪৩০৮: মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশের কারণে স্বার্থপরতা হ্রাস পাবে।
৪৫০৯: উন্নত নৈতিকতার কারণে মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবে।
৪৬০০ থেকে ৫০০০-এর দশক:
৪৫৯৯: অমরত্ব আদর্শ হয়ে উঠবে।
৪৬৭৪: মানব সমৃদ্ধি ৩৪০ বিলিয়নে পৌঁছবে; বহির্জাগতিক প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
৫০৭৬: পরিচিত ব্রহ্মাণ্ডের শেষ প্রান্তটা আবিষ্কৃত হবে।
৫০৭৮: মানবজাতি পরিচিত ব্রহ্মাণ্ড ত্যাগ করার চেষ্টা করবে; তবে ৪০ শতাংশ তা প্রত্যাখ্যান করবে।
৫০৭৯: পৃথিবী ধ্বংস হবে।
বাবা ভাঙ্গার ২০২৫-এর ভবিষ্যদ্বাণী, যা চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে:
সাম্প্রতিক কালে গোটা বিশ্বে ঘটে চলা বিভিন্ন বিষয় এবং বাবা ভাঙ্গার ২০২৫ সালের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে সারা বিশ্বেই জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে। সেগুলিই দেখে নেওয়া যাক।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়: ভূমিকম্প এবং দুর্যোগ
বাবা ভাঙ্গার দূরদর্শী চোখ দেখেছিল যে, ২০২৫ সালে সারা বিশ্বে নেমে আসবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খাঁড়া। ইতিমধ্যেই চলতি বছরে মায়ানমারে ঘটে গিয়েছে তীব্র ভূমিকম্প। এর মারাত্মক প্রভাব এবং ক্ষতির কথা তো সকলেরই জানা।
ভূ-রাজনৈতিক অশান্তি: ইউরোপে যুদ্ধ
বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়েছিলেন যে, ২০২৫ সালে ইউরোপে বড়সড় যুদ্ধ হবে। ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সম্ভাব্য জোরালো আঞ্চলিক বিরোধ, গৃহযুদ্ধ, আর্থিক উত্থান-পতন প্রভৃতির ইঙ্গিত পেয়েছিল তাঁর দূরদৃষ্টি।
অর্থনৈতিক পূর্বাভাস: বিশ্ব জুড়ে আর্থিক উত্থান-পতন
যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাবা ভাঙ্গা এ-ও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ২০২৫ সালে গোটা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, এর জেরে আর্থিক অস্থিতিশীলতা, সামাজিক বাধাবিপত্তি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
২০২৫ ছাড়াও আসন্ন সময়ের জন্য বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী:
শুধু চলতি বছরের জন্যই নয়, অন্যান্য সময়ের জন্যও বিভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছেন বাবা ভাঙ্গা। তাঁর দীর্ঘমেয়াদি কিছু পূর্বাভাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পূর্বাভাস দেখে নেওয়া যাক।
২০২৮: শুক্র গ্রহের অন্বেষণ এবং নতুন শক্তি সম্পদ আবিষ্কার।
২০৩৩: মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
২০৭৬: একাধিক দেশে কমিউনিজম ছড়িয়ে পড়বে।
২১৩০: বহির্জাগতিক প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হবে।
২১৭০: বিশ্ব জুড়ে মারাত্মক খরা দেখা দেবে। যা কৃষিকাজ এবং জল সম্পদের উপর প্রভাব ফেলবে।
৩০০৫: মঙ্গল গ্রহের সভ্যতার সঙ্গে যুদ্ধ হবে।
৩৭৯৭: বসবাসের পরিস্থিতির অভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে মানুষ।