কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে ৮৬টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে বন্যায়৷ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজিরাঙা জঙ্গলের ৮৫ শতাংশের বেশি অংশই জলের নীচে৷ ২৩৩টির মধ্যে ৮০টি শিকার-দমন ক্যাম্প ভেসে গিয়েছে জলে৷ কাজিরাঙা সংলগ্ন জাতীয় সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে৷ কারণ, গাড়ি চাপা পড়েই মৃত্যু হয়েছে ১৪টি হরিণের৷ ৪টি একশৃঙ্গ গণ্ডার জলের ডুবে মারা গিয়েছে৷ তিনটি বাঘ পার্শ্ববর্তী গ্রামে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গিয়েছিল৷ তাদের জঙ্গলে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, গণ্ডার-সহ ১২৫টি বন্যপ্রাণীকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা গিয়েছে৷
advertisement
অসম বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ধুবরি, বরপেটা, মরিগাঁও, লখিমপুর, দারাং, গোলাঘাট, গোয়ালপাড়া ও বঙ্গাইগাঁওয়ের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ৷ শুধু ধুবরিতেই ৮.৭ লক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত৷ ৩ হাজার ২০১টি গ্রাম জলের তলায়৷ সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে৷ বঙ্গাইগাঁও জেলাটি ব্রহ্মপুত্রের উত্তর অববাহিকায় অবস্থিত৷ ওই জেলার যোগীঘোপা শহরের এক বাসিন্দা News18-কে বললেন, 'আমরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখে৷ আমরা আবার একসঙ্গে হয়েছি৷ আমাদের গ্রাম জলের তলায়৷ তাই কয়েকশো মানুষের সঙ্গে পশুগুলিও এক ছাদের নীচে কোনও ক্রমে প্রাণের বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি৷ পশুগুলিকে উদ্ধার না করতে পারলে, ওরা জলে ডুবেই মারা যাবে৷ প্রতিবছরই এটা ঘটে৷'
বরপেটা জেলার চন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সি আনওয়ার আলির কথায়, 'আমরা ঘরের বাইরে বেরতে পারছি না৷ কারণ গোটা গ্রামই জলের তলায়৷ এখানে কয়েকশো পরিবারের বাস৷ আমরা রিলিফ ক্যাম্পে আমাদের গবাদি পশুগুলিকে বেঁধে রেখেছি৷ আমরা প্রাণ হাতে ঘরে আশ্রয় নিয়েছি৷ কারণ, রিলিফ ক্যাম্পে ওতো জায়গা নেই৷' বরপেটা জেলায় ৩৬০টির বেশি গ্রাম জলের তলায়৷
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০ লক্ষের বেশি বড় ও ছোট গবাদি পশু, ১২.৮৫ লক্ষ পোলট্রি ফার্ম বন্যা কবলিত বিভিন্ন জেলায়৷ গরু, শুয়োর, ছাগল, মুরগি, হাঁস-- সব বন্যায় ভেসে গিয়েছে৷ ২৪টি জেলার ৩০০ রিলিফ ক্যাম্পে শুক্রবার পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৯৭৭ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া গিয়েছে৷ এর মধ্যে ৪ হাজার ৫২৬ জন শিশু৷ তাদের অস্থায়ী রিলিফ ক্যাম্পে মা-বাবার সঙ্গে রাখা হয়েছে৷ ৪৪৫টি রিলিফ ডিস্ট্রিবিউশন ক্যাম্প থেকে চাল, ডাল, নুন, সরষের তেল, গম, বেবি ফুড, ত্রিপল, গবাদি পশুর খাবার, স্যানিটারি ন্যাপকিন-সহ নানা অত্যাবশ্যক পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে৷
কিন্তু অভিযোগ উঠছে পানীয় জলের অপ্রতুলতা৷ মরিগাঁও জেলার ময়রাবাড়ি শহরের এক বন্যা কবলিত ব্যক্তির কথায়, 'আমরা খাওয়ার জল পাচ্ছি না৷ ন্যূনতম শৌচাগারটুকুও জুটছে না৷ এই পরিস্থিতি অসহ্য৷ আর আপনি বলছেন Covid-19 বিধি মানতে?' বলতে বলতে ভয়ে ও উত্তেজনায় কাঁপছিলেন তিনি৷
প্রসঙ্গত, চরম বন্যার মধ্যে ভিটেমাটি হারানো মানুষদের করোনা ভাইরাস রুখতে বিধি মানার পরামর্শও দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন৷