কিন্তু, লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে দলের অভ্যন্তরীন সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, মুসলিম সংখ্যালঘু ভোটকে 'প্রকাশ্যে উপেক্ষা' করার বার্তা দিয়ে ভোটে যাওয়া রাজনৈতিক ভাবে সঠিক হবে না বাংলায়। সে কারনেই ১৯ এর বদলে এখন লক্ষ্য ২৪। যদিও, সব হারা আসনকেই গুরুত্ব দিয়ে লড়তে হবে বলে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
advertisement
সব ঠিকঠাক থাকলে, জে পি নাড্ডা ফিরলেই, ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। সফরে নাড্ডার মতোই একটি প্রকাশ্যে জনসভা ও ওই লোকসভা কেন্দ্রের অধীন পদাধিকারীদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করবেন শাহ। সেই কর্মসূচি কোথায় হবে, তা স্থির করবেন অমিত শাহ নিজেই।
আরও পড়ুন: মুখ পুড়ল রাজ্য়ের, তৃণমূলের পুরপ্রধানকে সরিয়ে দিল হাইকোর্ট! কংগ্রেসের দখলেই ঝালদা
তবে, নিশ্চিত ভাবেই এই সভা হবে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হারা ২৪টি আসনের কোনও একটিতে। কারণ, জাতীয় স্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন ২৪- এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিজেপির প্রথম লক্ষ্য বিগত লোকসভা ভোটে হারা আসনগুলি।
বিগত লোকসভা ভোটে বিজেপি রাজ্যে ১৮ টি আসন জিতলেও, বর্তমানে আসানসোল ও ব্যারাকপুর আসন দু'টি তাদের হাতছাড়া। সেই বিচারে রাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে হারা আসন ২৬টি। এই ২৬টির মধ্যে অন্তত ১১টি আসন রয়ছে যেখানে তৃণমূলের সঙ্গে ব্যবধান কমবেশি ১ লাখের মতো।
আরও পড়ুন: বঙ্গে ফের জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় দল! ১০০ দিনের প্রকল্প-সহ ১১ টি প্রকল্প নিয়ে মেগা ট্রিপ! কবে শুরু?
প্রথম দফায় এই ১১টি আসনকেই নিশানা করে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিজেপি। এই ১১টি আসন হল, হাওড়া, দমদম, বারাসত, শ্রীরামপুর,আরামবাগ, কৃষ্ণনগর , কাঁথি, ঘাটাল, বর্ধমান (পূর্ব), বীরভূম ও মালদহ দক্ষ্মিণ।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, লোকসভা ভোটের মূল প্রচার শুরুর আগে, ব্যারাকপুর ও আসানসোল বাদে, ২৪টি হারা আসনের মধ্যে ১২টি করে আসন ভাগ করে শাহ ও নাড্ডা প্রথম দফায় সভা করবেন। গতকাল কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের জন্য সভা করে তার সূচনা করলেন নাড্ডা।
প্রথমে যে ৫টি হারা আসন বাদ রাখা হয়েছিল, সেগুলি হল বহরমপুর, মূর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর , কাঁথি ও বসিরহাট। একমাত্র অধিকারী গড় কাঁথি ছাড়া বাকিগুলি মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র। কিন্তু, দ্বিতীয় দফায় অধিকারী গড় কাঁথিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাকে রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
হারা আসনগুলিকে প্রথম দফায় নিশানা করার কারণ হিসেবে এক রাজ্য নেতা বলেন, 'এই আসনগুলিতে খুব অল্পের জন্য হারতে হয়েছে। সে কারণে, বিগত নির্বাচনের কৌশলগত ভুল শুধরে নিতে পারলে, প্রতিষ্ঠান বিরোধী জনমতকে কাজে লাগিয়ে এই আসনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে জয় পাওয়া সম্ভব।'
জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এ রাজ্যে ২৫টি লোকসভা আসন জয়ের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন শাহ। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে জেতা ১৮টি আসনের বাইরে আরো ৭টি আসন জিততে হবে বিজেপিকে। যদিও, দল এটা ভাল ভাবেই জানে বিগত লোকসভা ভোটে জেতা ১৮ টি আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনই বিগত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে তৃণমূল।
২০২১- এর নিরিখে তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে পড়া বিজেপির আসনগুলির মধ্যে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায়, ঝাড়গ্রামের সাংসদ কূনার হেমব্রমের লোকসভা আসন রয়ছে। পিছিয়ে রয়ছে, ব্যারাকপুর, আসানসোলের মতো হাতছাড়া হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রও। একমাত্র উত্তরবঙ্গের মালদহ ছাড়া বাকি আসনগুলি এখনও পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় বিজেপির এই আসন জেতার দাবি নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় রয়ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।