দুর্ঘটনার আগের রাতেও তিন নাতি নাতনির সেই ছটফটানি আর লন্ডন যাওয়ার উত্তেজনার কথা ভেবেই এখন চোখের জল ফেলছেন প্রতীকের বাবা পেশায় চিকিৎসক জে পি যোশী৷ হাসিমুখে বিমানবন্দরে ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতি নাতনিদের বিদায় জানানোর সময় তিনি নিজে দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি যে এটাই তাঁদের শেষ সাক্ষাৎ৷
শুধু স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে নয়, প্রবীণ চিকিৎসক বাবা-মাকেও লন্ডনে নিয়ে গিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন প্রতীক৷ সেই মতো প্রস্তুতিও নিতে বলেন বাবাকে৷ ছেলের প্রস্তাব মেনে নিয়ে নাতি নাতনিদের সঙ্গে শেষ জীবনটা কাটাতে গুজরাতে নিজের ক্লিনিকও বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জে পি যোশী৷ কিন্তু বৃহস্পতিবারের বিপর্যয়ের পর সেসব পরিকল্পনাই এখন কাঁটার মতো বিঁধছে বৃদ্ধ দম্পতির বুকে৷
জে পি যোশীর কথায়, ‘চার বছর ছেলে লন্ডনের ডার্বির হাসপাতালে কর্মরত৷ ফের এক্সটেনশন মেলায় এবার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের ওখানে নিয়ে যেতে এসেছিল৷ ৯ তারিখেই ভারতে এসেছিল প্রতীক৷ ১২ তারিখ ফেরার টিকিট ছিল৷ ছেলের সঙ্গে থাকবে বলে আমার বৌমা রাজস্থানে চিকিৎসকের চাকরিতে ইস্তফা দেন৷ ছেলে মেয়েদের স্কুল থেকে টিসি নেন৷ একা একা সবকিছু করেছিল আমার বৌমা, শুধু লন্ডনে গিয়ে নতুন করে সংসার শুরু করবে বলে৷’
আরও পড়ুন: টেক অফের পরই চালকদের মারাত্মক ভুল? অভিশপ্ত বিমানে দুই অস্বাভাবিকতা, ধরে ফেললেন অভিজ্ঞ পাইলট
নিজের তিন নাতি নাতনির কথা উঠতেই গলা ধরে আসে প্রবীণ ওই চিকিৎসকের৷ তিনি বলেন, ‘লন্ডনে গিয়ে নতুন স্কুলে ভর্তি হবে বলে দারুণ খুশি ছিল ওরা৷ ওদের নতুন স্কুল ব্যাগ কিনে দেওয়া হয়েছিল৷ আগের দিন রাতে সেই স্কুল ব্যাগগুলি বুকের উপরে রেখেই ওরা আমার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল৷ আমার ছেলে কোনও সময় সরাসরি বিমানে লন্ডন থেকে যাতায়াত করত না৷ এবার ছেলেমেয়েদের কষ্ট কম হবে ভেবেই সরাসরি লন্ডনে যাওয়ার বিমানের টিকিট করেছিল৷’
মাত্র দু মাস পরেই প্রতীকের দুই যমজ পুত্রসন্তানের জন্মদিন ছিল৷ সেকথা বলতে গিয়েও কেঁদে উঠছেন তাঁদের চিকিৎসক দাদু৷ জে পি যোশী বলেন, ‘১৫ অগাস্ট ওরা পাঁচ বছরে পড়ত, এখন মুক্ত হয়ে গেল৷’