ভাঙা রাসের শোভাযাত্রার সূচনা হয় হরিনাম সংকীর্তনের মধ্য দিয়ে। গোস্বামী পরিবারের বিগ্রহকে প্রথমে শোভাযাত্রায় আনা হয়, যা দেখতে রাস্তার দুই ধারে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। ঢাকের তালে আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে সমগ্র এলাকা। শোভাযাত্রার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল রাই রাজা! শান্তিপুরের এক পৌরাণিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
রাই রাজা প্রথায় রাধার প্রতীক রূপে ব্রাহ্মণ পরিবারের কুমারী মেয়েদের রাজকীয় পোশাকে সজ্জিত করে সিংহাসনে বসানো হয়। তারপর তাঁদের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করানো হয় হরিনাম সংকীর্তনের সঙ্গে। ছোট্ট এই রাধাদের রাজকীয় সাজ, সোনালি পোশাক ও অলংকারে যখন সজ্জিত করা হয়, তখন দর্শকদের চোখে পড়ে এক অনন্য ভক্তির আবেশ। রাই রাজাদের শোভাযাত্রা যখন শহরের রাজপথে পরিক্রমা করে, তখন দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ তা একনজর দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকে। বলা হয়, রাই রাজাকে দর্শন করলে জীবনে সৌভাগ্য আসে এই বিশ্বাসই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টেনে আনে ভক্তদের।
advertisement
প্রথমে শান্তিপুরের বিভিন্ন গোঁসাই বা গোস্বামী পরিবারের বিগ্রহেরা একে একে অংশ নেন এই মহা শোভাযাত্রায়। পরে শহরের বিভিন্ন বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলি তাদের নিজস্ব প্রতিমা ও আলোকসজ্জা নিয়ে অংশগ্রহণ করে। একাধিক মডেল শিল্পী বহুরূপী ও বিশালাকার আলোকসজ্জা দিয়ে প্রতিটি বারোয়ারি নিজেদের শোভাযাত্রা বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলে।
এই বিশাল জনসমাবেশ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহর জুড়ে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী, নজরদারির জন্য স্থাপন করা হয়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে সুষ্ঠুভাবে শোভাযাত্রা সম্পন্ন করেন।
আরও পড়ুন : কলা, রসুন, টক দইয়ের কামাল! এভাবে খেলেই শীতে জব্দ হাই ব্লাড প্রেশার! রক্তচাপের সেরা টোটকা ও ডায়েট!
রাতভর চলা এই উৎসব শুধু এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং শান্তিপুরবাসীর হৃদয়ের ঐতিহ্য। প্রাচীন এই ভাঙা রাস আজও বহন করে শান্তিপুরের গৌরব, সংস্কৃতি ও শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে যেখানে ভক্তি, ঐতিহ্য আর আনন্দ মিশে একাকার হয়ে যায়।