অনেকেই দু-তিন দিন অন্তর অন্তর অন্তত একটি ওষুধ খেয়ে ফেলেন। আপনি যদি এমনটি করেন, তবে এই অভ্যাস এখনই পরিবর্তন করুন। কারণ এই দুটি ওষুধ শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া-র নতুন গবেষণায় জানা গেছে, এই ওষুধগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স (অর্থাৎ জীবাণুর প্রতি ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা) আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: হৃদরোগ প্রতিরোধে প্রতিদিনের অভ্যাসই হতে পারে অস্ত্র! সতর্ক থাকলেই সুস্থ থাকবে হার্ট…
advertisement
এর মানে, আইবুপ্রোফেন আর প্যারাসিটামল বেশি খেলে শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে যখন আপনি সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন, তখন তা কার্যকর হবে না।
প্যারাসিটামলের ভয়াবহ প্রভাব গবেষকরা খুঁজে দেখেছেন, আইবুপ্রোফেন আর প্যারাসিটামল-এর মতো নন-অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং সাধারণ জীবাণু ইশেরিশিয়া কোলাই-এর সঙ্গে মিলে কাজ করে। ফলাফল ছিল চমকপ্রদ।
জীবাণুগুলোকে যখন শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে আনা হয়, তখন তারা ধীরে ধীরে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন তাদের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি আইবুপ্রোফেন আর প্যারাসিটামল দেওয়া হয়, তখন তাদের জেনেটিক মিউটেশনের সংখ্যা বেড়ে যায়। অর্থাৎ তারা দ্রুত বদলাতে শুরু করে এবং সেই ওষুধগুলির প্রতি প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
স্টাডির প্রধান ড. রিইটি ভেন্টার জানিয়েছেন, এতে শুধু সিপ্রোফ্লক্সাসিনের প্রতিই নয়, বরং অন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিও জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় আইবুপ্রোফেন এবং প্যারাসিটামল জীবাণুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে, যার ফলে ওষুধ জীবাণুর কোষে পৌঁছাতে পারে না।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, বৃদ্ধ ও যারা অনেক ধরনের ওষুধ খান তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। বৃদ্ধদের অনেক ধরনের ওষুধ যেমন ব্যথানাশক, ঘুমের ওষুধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ইত্যাদি দেওয়া হয়। এতে জীবাণুর সামনে একসঙ্গে অনেক ওষুধ আসে, যা তাদের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
এই গবেষণা স্পষ্ট করে দেয় যে, অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই নয়, বরং প্রতিদিন ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধগুলোরও বড় ভূমিকা আছে। তাই চিকিৎসক এবং রোগী উভয়েরই উচিত ওষুধের মিশ্রণ এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা। গবেষকরা বলেছেন, আরও নতুন গবেষণা হওয়া দরকার যাতে বোঝা যায় কোন ওষুধ একসঙ্গে খাওয়া নিরাপদ আর কোন কম্বিনেশন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এই গবেষণা বড় ধরনের সতর্কবার্তা দেয় যে, ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত বা নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার শুধু আমাদের শরীরকেই নয়, আমাদের আশপাশের জীবাণুকেও প্রভাবিত করছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয় এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিজের যত্ন নেওয়া দরকার।