বিক্রান্ত শ্রোতিয়ার কথায়, ” আমরা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ ওজেম্পিক এমন একটি দামে বাজারে এনেছি, যা খুবই কম, প্রতি সপ্তাহে খরচ মাত্র ২,২০০ টাকা। একটি পেনে চার সপ্তাহের ডোজ থাকে এবং কর-সহ এর দাম পড়বে ৮,৮০০ টাকা। আমরা ভারতের ডাক্তার, রোগী এবং আমাদের গ্লোবাল টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং এই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধটির জন্য সাশ্রয়ী মূল্য রাখার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হয়েছেন।”
advertisement
প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা ‘এলি লিলি’র ‘মোঞ্জারো’-র সাপ্তাহিক ডোজের দাম শুরু হচ্ছে ৩,২০০ টাকা থেকে। ‘নোভো নরডিস্ক’-এর আরেকটি ওজন কমানোর ওষুধ ‘ওয়েগোভি’-এর দাম শুরু হচ্ছে ২,৭০০ টাকা থেকে। কিছুদিনের মধ্যেই ‘ওজেম্পিক’ আপনার স্থানীয় দোকানেও মিলবে, কারণ দেশজুড়ে ইতিমধ্যেই বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। শ্রোতিয়া জানান, এই ওষুধ ০.২৫ মিলিগ্রাম, ০.৫ মিলিগ্রাম এবং ১ মিলিগ্রাম ডোজে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বেশি ডোজের দাম মাত্র ১১,১৭৫ টাকা। এই দাম অনেক ভারতীয় রোগীরই নাগালের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, ‘এলি লিলি’র ‘মোঞ্জারো’র সঙ্গে ‘নোভো নরডিস্ক’-এর আরেকটি ওজন কমানোর ওষুধ ‘ওয়েগোভি’র তুলনা করা হলে দেখা যাবে, বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘মোঞ্জারো’-ই। তাই কি এবার ভারতের বাজারে ‘ওজেম্পিক’ আনল ‘নোভো নরডিস্ক’? উত্তরে ‘নোভো নরডিস্ক ইন্ডিয়া’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিক্রান্ত শ্রোতিয়া জানান, প্রতিযোগিতা নয়, ওবেসিটির বিরুদ্ধে লড়াইটা আরও একটু মজবুত করা হল।
ভারতের অন্যতম দুই সমস্যা হল ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি। শ্রোতিয়ার কথায়, ” আমাদের দেশে ১০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যখন একজন ব্যক্তি জানতে পারেন যে তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তখন তাঁর অগ্ন্যাশয়ের অর্ধেক বিটা সেল ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাত্র ৬% রোগীই ‘অপটিমাম গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল’ অর্জন করতে পারেন। আমাদের দেশের ২৫ কোটি মানুষ স্থূল, আরও ৩৫ কোটি মানুষের সেন্ট্রাল ওবেসিটির সমস্যা আছে, যাকে আমরা ভিসেরাল ওবেসিটি বলি। শহুরে জনসংখ্যায় ইতিমধ্যেই ৪০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন।”
‘ওজেম্পিক’ বনাম ‘ওয়েগোভি’, কে বেশি এগিয়ে? শ্রোতিয়ার মতে, ওজেম্পিক টাইপ–২ ডায়াবেটিসের জন্য অনুমোদিত, অন্যদিকে ‘নোভো নরডিস্ক’-এর আর এক বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ওষুধ ‘ওয়েগোভি’, যা জুন মাসে ভারতে লঞ্চ হয়েছে, শুধুমাত্র স্থূলতা লক্ষ্য করে তৈরি। শ্রোতিয়ার ভাষায়, ” ওজেম্পিক ডায়াবেটিকদের উপর গবেষণা করে তৈরি। অন্যদিকে, ওয়েগোভি শুধুমাত্র ওবিস-দের জন্য, তা সে তিনি ডায়াবেটিক হন বা না হন। ওয়েগোভি-র ১.৭ মিলিগ্রাম ও ২.৪ মিলিগ্রাম ডোজ স্থূলতা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।”
‘ওজেম্পিক’ নিয়ে গোটা বিশ্বে তুমুল হইচই! ওজন কমাতে কে না চায়? যাঁরা ডায়াবেটিক নন, ওবিস-ও নন, তাঁরাও ভাবছেন স্বপ্নের ফিগার পেতে এবার ‘ওজেম্পিক’-এ ভরসা করা যায়! আর এখানেই সতর্ক করছেন শ্রোতিয়া। তাঁর আর্জি, ” দয়া করে এটা করবেন না। অন্তত ওজন কমানোর জন্য নয়! নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এটি একদমই নিষিদ্ধ। যখন ১০ জন মানুষ নিজেরাই এই ওষুধ খাচ্ছেন, তখন আমরা জানি না, কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।” তিনি আরও বলেন, ” গবেষণা কখনও শেষ হয় না। আমরা গবেষণার পরবর্তী ধাপের দিকে তাকিয়ে আছে। স্থূলতা কমানোর জন্য আমরা ওরাল সেমাগ্লুটাইড, ক্যাগ্রি-সেমা, অ্যামিক্রেটিন নিয়ে কথা বলছি! স্থূলতা কমানো এবং মেটাবলিক ডিজিজ ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার জন্য আরও অনেক মলিকিউল নিয়ে গবেষণা চলছে!”
