TRENDING:

'ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশ মাছ'... ইলিশ নিয়ে মজার দু-চার কথা

Last Updated:

'ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশ মাছ'... ইলিশ নিয়ে মজার দু-চার কথা

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা:  শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন--
advertisement

''জেলেরা ইলিশ মারে মারুক/ কাছে এসে দরদাম পারুক।/ এক হালি দুশো বিশ বলে/ দরদাম তবুও তো চলে।/ আমরা স্টিমারে বসে দেখি/ নৌকার মাছ ফুরালো কি?''

বাঙালির ইলিশ প্রেম আদি, অকৃত্রিম, চিরন্তন। ইলিশের পেটি, গাদা, ল্যাজা, মুড়ো, তেল, কানকো, কাঁটা, ডিম... জলের রানির কিছুই যে ছাড়া যায় না! ঝোল, ঝাল, তেল, অম্বল-- যেমনভাবেই খাও, খাওয়াও, সবেতেই সুখ! আমাদের কাছে ইলিশ আর শুধুমাত্র একটা মাছে আটকে নেই! সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে!

advertisement

রূপালি রানিকে নিয়ে মজাদার গল্পগাছার কমতি নেই! যেমন ধরুন, বাংলাদেশের রেডিয়োয় একটা বিজ্ঞাপন বাজে-- ' মাছের রাজা ইলিশ/ বাতির রাজা ফিলিপস!'  ১৯৭০ সালে, সেইসময়কার পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে একটা ভোটের ছড়া খুব জনপ্রিয় হয়েছিল-- ইলিশ মাছের কাঁটা, বুয়াল মাছের দাড়ি/ ইয়া হিয়া খান ভিক্ষা করে/ মুজিবের বাড়ি

advertisement

কমতি নেই আজব-গজব সংস্কারেরও! যাঁরা ইলিশ ধরেন, পয়লা বৈশাখের দিন তাঁদের পান্তা ইলিশ খাওয়া মাস্ট! কারণ? একটা মজার গল্প রয়েছে। ১৯৮৪ সালের ১৪ এপ্রিল, ফুটপাথের এক বেকার ছেলে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ আর বেগুনের ভর্তা নিয়ে ঢাকার রমনা বটমূলে, খোলা বাগানে দোকান দিয়ে বসেন। প্রচণ্ড গরমে ময়দানে ঘুরতে আসা মানুষজনেরা তাঁর থেকে সেই পান্তা, ইলিশ ভাজা আর ভর্তা কিনে খান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পান্তা শেষ! বেকারের পকেট ভরা টাকা! সেই থেকেই, পয়লা বৈশাখের দিন রমনা ময়দানে পান্তা ইলিশের আয়োজন করা হয়। মানুষের বিশ্বাস, এদিন পান্তা ইলিশ খেলে, গোটা বছর পকেটে টান পড়বে না!

advertisement

এখানেই শেষ নয়! ইলিশ মাছ ধরতে বেরবার আগে ধূপধুনো দিয়ে নৌকায় ওঠেন জেলেরা। জাল পুজো করেন। নৌকার গলুইয়ে মিষ্টিবাতাসা বা চিনি দিয়ে, তারপর জাল তোলেন। এরপর, জালে যখন প্রথম ইলিশটা ওঠে, তাকে একটা থালায় করে, জালের উপর রেখে, সিঁদুর-হলুদ মাখিয়ে বরণ করা হয়! অনেকে আবার ধূপধুনো, বাতাসাও দেন। তারপর, মাছের মাঝের খানিকটা অংশ কেটে নৌকার গলুইয়ে পুঁতে দেন। পরম্পরাগতভাবে এমনটাই চলে আসছে।

advertisement

এতো গেল জেলেদের কথা। বাড়িতে জেলে বৌদেরও নিয়মের শেষ নেই। সরস্বতী পুজোর দিন জোড়া ইলিশ এনে সিঁদুর-হুলুদ মাখিয়ে ধানদুর্বা দিয়ে কুমিল্লা ও নোয়াখালির জেলেবৌরা ইলিশ বরণ করেন। গলায় গান-- ইলিশ মাছে কাটে বউ/ ধার নাই বটি দিয়া/ ইলিশ মাছ রান্দে বউ/ কচু বেগুন দিয়া।

লিস্টি বেশ লম্বা! কুমিল্লা জেলার জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে একরকমের অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। দশমীর দিন শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে ইলিশ নিয়ে ঢুকতে হবে! এরপর, জামাইকে পিঁড়িতে বসিয়ে, তার সামনে একটা থালায় ইলিশটাকে রেখে, বাড়ির মহিলারা গান ধরবেন!

ফরিদপুর, মাদারিপুর, ঢাকা, বিক্রমপুর জেলায় আবার আরেক রীতি! সরস্বতী পুজোর দিন, ইলিশ কিনে প্রথমেই বাড়িতে ঢোকানো যাবে না! মাছের রানিকে আগে প্রদীপ জ্বালিয়ে, সিঁদুর মাখিয়ে, উলু দিয়ে বরণ করতে হবে! তারপর তিনি ঢুকবেন হেঁশেলে। তবে, এদিন কিন্তু ইলিশের ঝোল,ঝাল, অম্বল রাঁধলে চলবে না! শুধু নুন, হলুদ আর গোলমরিচ দিয়ে বানানো হবে  ইলিশের ঝোল! আর মাছের আঁশগুলো ঘরের মধ্যে প্রধান যে খুঁটি রয়েছে, তাঁর গোড়ায় পুঁততে হবে! অনেকে আবার ধানের গোলার নীচে গর্ত করেও আঁশ পুঁতে রাখেন। এতে নাকি ভবিষ্যতে টাকার বৃষ্টি হবে!

ইলিশ মাছের ডিম খাওয়া নিয়ে ফরিদপুরে একটা সংস্কার আছে। অনুষ্ঠানটা হয় দুর্গা পুজোর দশমীর দিন। এদিন ইলিশের ডিম লাগবেই লাগবে! যদি দশমীর দিন ইলিশের ডিম না পাওয়া যায়, এই ভয়ে অনেকেই আগে থেকে ডিম কিনে রাখেন। আগে থেকে কেনা ডিম উনুনের পাশে রেখে শুকানো হয়! তারপর দশমীর দিন সেই ডিম ভেজে, বাড়ির সবাই মিলে একসঙ্গে খান।

রানি বলে কথা! তাঁকে নিয়ে এ'টুকু আদিখ্যেতা না করলে কি আর চলে?

বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
'ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশ মাছ'... ইলিশ নিয়ে মজার দু-চার কথা