অ-ইনভেসিভ কার্ডিওলজিস্ট ড. বিমল ছাজের তাঁর ব্লগ SAAOL Magazine-এ ব্যাখ্যা করেছেন, প্রতিদিনের সহজ অভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে। সচেতনভাবে খাওয়া থেকে শুরু করে ভালো ঘুম পর্যন্ত—তিনি জোর দিয়েছেন প্রতিরোধ সবসময় চিকিৎসার চেয়ে সহজ।
advertisement
সচেতনভাবে খাওয়ার গুরুত্ব
মনোযোগ দিয়ে খাওয়া মানে হলো কী এবং কতটুকু খাচ্ছেন সেটির প্রতি খেয়াল রাখা, টিভি বা ফোনে মনোযোগ না দিয়ে। টাটকা, প্রাকৃতিক খাবার বেছে নেওয়া এবং প্রসেসড স্ন্যাকস এড়িয়ে চলা শুধু হজমেই সাহায্য করে না, ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। শরীরের সংকেত শুনে পেট ভরে গেলে খাওয়া বন্ধ করলে অতিভোজন এড়ানো যায়।
সঠিক চর্বি হৃদয়কে সুরক্ষা দেয়
সব চর্বিই ক্ষতিকর নয়। জলপাই তেল, বাদাম, বীজ ও অ্যাভোকাডোতে থাকা ভালো ফ্যাট প্রদাহ কমায় ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। অন্যদিকে ভাজাপোড়া খাবার, হাইড্রোজেনেটেড তেল এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এড়িয়ে চলা জরুরি, কারণ এগুলো ধীরে ধীরে ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস
ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য, ডাল এবং মাছ বা মুরগির মতো লিন প্রোটিন দিয়ে প্লেট ভরলে হৃদয় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। চিনি, ট্রান্স ফ্যাট এবং প্রসেসড খাবার কম খেলে কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ধীরে ধীরে এবং বাস্তবসম্মত খাদ্য পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে সহায়ক।
আরও পড়ুন: হার্ট ফেল ও লিভার সিরোসিসে ভোগা ১৪৬ কেজি মহিলার সফল অস্ত্রোপচার! নতুন জীবন পেলেন রোগী…
লবণ কমানোতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের বড় কারণ। টাটকা খাবার বেছে নেওয়া, রান্নায় মশলা ব্যবহার করা এবং ফুড লেবেল পড়া লবণ কমানোর সহজ উপায়। সামান্য লবণ কমালেও রক্তচাপ ও হৃদয়ের চাপ অনেকটা কমে।
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে স্বাস্থ্যকর খাবারও সমস্যার কারণ হতে পারে। ছোট প্লেটে খাওয়া, ধীরে খাওয়া এবং পরিমাণ মেপে খাওয়া ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে ব্লাড সুগার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে—যা হৃদয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ভালো ঘুম ও পর্যাপ্ত জল
প্রতিদিন রাতে ৭–৯ ঘণ্টা ভালো ঘুম হৃদয়কে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। খারাপ ঘুম ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। সারাদিন পর্যাপ্ত জলপান রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে এবং ক্লান্তি কমায়।
মানসিক চাপ কমানো
অতিরিক্ত স্ট্রেস রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদয়ের ক্ষতি করে। প্রতিদিন মাত্র ১০–১৫ মিনিট মেডিটেশন, যোগ বা গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস অনুশীলন বড় পরিবর্তন আনতে পারে। স্ট্রেস কমলে ঘুম ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
সক্রিয় থাকা
প্রতিদিন চলাফেরা মানেই কষ্টকর ব্যায়াম নয়। হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা বা হালকা স্ট্রেচিং রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ও হৃদয়কে শক্তিশালী করে। আরও উপকার পেতে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ধূমপান এড়িয়ে চলা ও অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ
ধূমপান ধমনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, রক্তে অক্সিজেন কমায় এবং হৃদরোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। ধূমপান ত্যাগ করা হৃদয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। অ্যালকোহলও নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, কারণ অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদপেশি দুর্বল করে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার নিয়মিত পরীক্ষা করলে হৃদরোগের ঝুঁকি আগেভাগে ধরা পড়ে। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা আপনার শরীরের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয় সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দেয়।