স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের চারটি অংশ নিয়ে গঠিত- যোনি, জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়। ফেলোপিয়ান টিউব মূলত একটি ফাঁপা, নলাকার সেরোমাসকুলার অংশ যা পেলভিসে জরায়ুর প্রান্তদেশ থেকে ডিম্বাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। জরায়ুর ডান ও বাম উভয় দিকেই এই ফেলোপিয়ান টিউব থাকে।
ডিম্বস্ফোটনের সময়, ফেলোপিয়ান টিউবের ইনফান্ডিবুলাম বা ফিমব্রিয়াল প্রান্ত ডিম্বাশয়কে ঢেকে রাখে এবং সিলিয়া (দেওয়ালের উপর রোমের মতো গঠন) নড়াচড়ার কারণে নলের ভিতরে একটা চাপ তৈরি হয়, যা ডিম্বাণুকে আটকে রাখে। নিষেকের জন্য শুক্রাণু টিউবে পৌঁছানো পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। একবার ফেলোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে গেলে চার পাঁচ দিনের মধ্যে ভ্রূণটি জরায়ুতে চলে আসে।
advertisement
আরও পড়ুন- সারা বছর কড়াইশুঁটির কচুরি খেতে চান! মটর সংরক্ষণ করে রাখুন এই উপায়ে
ফলে বোঝাই যাচ্ছে স্ত্রী প্রজনন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফেলোপিয়ান টিউব। ডিম্বস্ফোটন যে কোনও একটি ডিম্বাশয়ে ঘটতে পারে। উভয় পার্শ্বের টিউব সুস্থ থাকাই খুব জরুরি। বেশির ভাগ মহিলারই দুটি টিউব সুস্থ থাকে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় মাত্র একটি টিউব সুস্থ।
ফেলোপিয়ান টিউবের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারণ কী?
− পূর্বের কোনও সংক্রমণ বা চিকিৎসা পরিস্থিতি টিউবটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- একটোপিক প্রেগনেন্সির ফলে টিউবের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
−শারীরবৃত্তীয় বিকাশগত অস্বাভাবিকতা (বেশিরভাগ জন্মগতভাবে) থাকতে পারে।
− এন্ডোমেট্রিওসিসের ফলে টিউবের ক্ষত তৈরি হতে পারে, অনেক সময় টিউব ডিম্বাশয় বা জরায়ুতে আটকে যেতে পারে।
- ফাইব্রয়েডের কারণে ফেলোপিয়ান টিউব বা জরায়ুতে প্রবেশপথ রুদ্ধ হতে পারে।
− পেট বা পেলভিক অংশে কোনও অস্ত্রোপচারের কারণে টিউবের ক্ষতি হতে পারে।
একটি সুস্থ ফেলোপিয়ান টিউব কি গর্ভধারণে সহায়ক হতে পারে?
প্রথমত ওই একটি টিউবকে সুস্থ ও সুস্পষ্ট হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, প্রসূতির বয়স একটা বড় বিষয়। কারণ বয়স ডিম্বাণুর মানের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। একজন মহিলার ডিম্বাশয়ে হাজার হাজার অপরিণত ডিম থাকে। ওই মহিলার জীবদ্দশায় কতগুলি ডিম বিকশিত হবে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে যখন তিনি নিজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বা তারও আগে যখন তিনি তাঁর মায়ের গর্ভে ছিলেন।
পরিণত বয়সে ওই মহিলার ডিম্বস্ফোটন শুরু হয়। তখন ডিম্বাণুগুলি মায়োসিস নামের কোষ বিভাজনের একটি পর্যায়ে যায়। এই বিভাজন প্রক্রিয়ার সময়, পুরনো ডিমে ডিএনএ ত্রুটি তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে। যা জিনগত ভাবে অস্বাভাবিকতা তৈরি করতে পারে। ফলে যাঁর একটি মাত্র ফেলোপিয়ান টিউব কার্যকর, তাঁর ডিম্বাণুর মান যদি খারাপ হয়, তা হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।
তৃতীয় বিষয় হল ঋতুচক্রের স্বাভাবিকতা। বেশিরভাগ মহিলার গড় ঋতুচক্র ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে থাকে। স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে চক্রের স্বাভাবিকতা বা নিয়মিত থাকা জরুরি। অনিয়মিত চক্র-সহ কোনও মহিলার একটি টিউব কার্যকর হলে তাঁর গর্ভধারণে বিলম্ব হতে পারে।
চতুর্থ বিষয় হল ডায়াবিটিস, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের মতো সমস্যা যা, যা ডিম্বস্ফোটনকে প্রভাবিত করতে পারে।
সর্বশেষ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সঙ্গীর স্বাস্থ্য এবং শুক্রাণু বা বীর্যের গুণমান।
ফলে যদি দেখা যায় কোনও মহিলার শুধুমাত্র একটি টিউব রয়েছে এবং উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলির কোনও একটিও রয়েছে তা হলে অবশ্যই বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আর যদি দেখা যায় কোনও মহিলার উভয় টিউবই অবরুদ্ধ, তবে সহায়ক প্রজনন কৌশলই একমাত্র সমাধান হতে পারে।